অ্যান্ড্রু বিরাজের তোলা বেশ্যাদের ৩০ ছবি, মৃদুল শাওনের আপত্তি ও আমার তর্ক

buzzfeed.com এ ছাপা হওয়া ছবির একটি। Andrew Biraj / Reuters

 

অ্যন্ড্রু বিরাজ; ফটোজার্নালিস্ট ফর রয়টারস ইন বাংলাদেশ

রয়টার্সের বাংলাদেশভিত্তিক ছবিসাংবাদিক অ্যান্ড্রু বিরাজ বাংলাদেশের টিনেজ বেশ্যার ৩০টি ট্রাজিক ও বিউটিফুল ছবি তুলছিলেন। তা buzzfeed.com এ ছাপা হওয়ার পরে শেয়ারের মাধ্যমে ফেসবুকে বেশ আগ্রহ তুলছে। অনলাইন একটিবিস্টরা এই ছবি নিয়া অনেক কথা বলছেন। এই ছবিগুলারই কিছু ছবি ১৯ মার্চ ২০১২ তারিখে ‘সাইলেন্ট টিয়ারস উইদিন ব্রথেল ওয়ালস’ নামে রয়টার্সের ফটোগ্রাফার্স ব্লগে ‘বাই অ্যান্ড্রু বিরাজ’ ছাপা হইছিল। সেইখানে ভিডিও-ও আছে, তার ইউটিউব এমবেড ভিউ নিচে দেইখেন।

 

২.
কবি ও লেখক মৃদুল শাওন একটিবিস্টদের বিরুদ্ধে একটা স্ট্যাটাস দিয়া কিছু জরুরি দৃষ্টিভঙ্গি শোধরানোর কাজ করছেন। আমি মৃদুল শাওনের আপত্তিতে কিছু যোগ করতে চাইলাম। প্রথমে মৃদুল শাওনের স্ট্যাটাস ও পরে আমার যোগ।

৩.  মৃদুল শাওন-এর আপত্তি

ফেসবুকে কয়েকজনরে দেখলাম একটা লিঙ্ক শেয়ার দিতাছে। ‘BuzzFeed’ নামের একটা আমেরিকান ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের টিনেজ-যৌনকর্মীদের তিরিশটা ছবি। শিরোনাম- “30 Tragic, Beautiful Photos Of Teenage Prostitutes In Bangladesh”।

যৌনকর্মীদের ‘ট্র্যাজিক’ জীবনরে তুইলা আনতে যাইয়া তারা মানে ‘BuzzFeed’ নান্দনিকতার কথা ভুইলা যান নাই, তাই ‘বিউটিফুল ফটোজ’।
ছবির বিষয় ‘ট্র্যাজিক’ হইলেও ফটোগ্রাফি সুন্দর। ‘BuzzFeed’ নিশ্চয়ই ফটোগ্রাফির ‘নন্দন’ বুঝতে পারা মানুষদের কথা ভাইবাই রাখছে এই শিরোনাম। গরীব মানুষরে ছবির সাবজেক্ট বানানো নতুন কিছু না। ফটোগ্রাফি দিয়া গরীবের প্রাইভেসির বারোটা বাজানো বেশ পুরাতন ফ্যাশান।

প্রাইভেসির কথা বাদ দিলাম। ধরলাম এই ছবিগুলা সাবজেক্টদের অনুমতি নিয়াই তোলা হইছে। এই ছবিগুলাতে যৌনকর্মীদের ঘর, তাদের মেকাপ নেওয়া, যৌনকর্মীর বাচ্চা, তাদের ভাত খাওয়া, গোসল করা, গ্রাহকদের সাথে তাদের অন্তঃরঙ্গতা ইত্যাদি ইত্যাদি তাদের লাইফস্টাইল দেখাইয়া দুনিয়ারে কি দেখানো হইলো? গরীবের যৌনতা নাকি যৌনতার গরীবত্ব?

আমেরিকায় বা উন্নত বিশ্বে কি চাইল্ড প্রস্টিটিউশান নাই? আছে এবং সেইখানেও নিশ্চয়ই দারিদ্র্যের কারণেই এইটা ঘটে। এইটা কি শুধু বাংলাদেশ বা গরীব দেশগুলির সমস্যা? তা অবশ্যই না। কিন্তু সেইসব দেশে তাদের গরীবরাও যেহেতু দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকে না, তাই সেইখানে এইটারে তারা অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মতই দেখে। বাংলাদেশ বা অন্যান্য গরীবদেশের দারিদ্র্য যেহেতু তাদের শো করার একটা সাবজেক্ট, তারা এই সুযোগটা নেয়।

এইদেশের গরীব যৌনকর্মীদের চাইতে এইদেশের সাধারণ গরীবদের জীবন কি কম ট্র্যাজিক? বা এইদেশের সাধারণ গরীবদের চাইতে এইদেশের গরীব যৌনকর্মীদের জীবন কি বেশি ট্র্যাজিক? টিনেজ প্রস্টিটিউটদের জীবনযাত্রার ‘বিউটিফুল ফটোজ’ দেখানোর মাধ্যমে ‘BuzzFeed’ বা তাদের দারিদ্র্য শো করার, সাবজেক্ট বানানোর উদ্দেশ্য পূরণ হয়। এবং যারা শেয়ার করে তাদের বিবেকের শখও পূরণ হয়। বর্তমান ও ভবিষ্যতের গরীব এবং টিনেজ যৌনকর্মীদের তাতে কি যায় আসে?

আমি আর শেয়ার দিলাম না ।

২৩/১/২০১৪, ফেসবুক

 ৪. আমার তর্ক

বড়লোকের বড়লোকিত্ব যদি শো করার হয় দারিদ্রও হইতে পারে। দারিদ্র থাকলে আলোকচিত্রিরা শো করবে না?

ব্যাপার হইল, তার সঙ্গে এই একটিবিস্টগুলা দায়িত্ব আর মরালিটির ঘোট লাগায়। বাংলাদেশের গরিব বেশ্যাদের ছবি যদি না ছাপানো যায় তবে সে সূত্রে বড়লোকদের দেশের বেশ্যাজীবনের ছবিও অছাপা করতে হয়।

দুঃখ দুঃখ ভাব লইয়াই বা কী সমস্যা? একটিবিস্টদের দুঃখও তো আমাদের একটা দেখবারই বিষয়। ওনারা যেহেতু রাজনৈতিকভাবে স্বৈরাচারি মডেলে নিবেদিত আছেন, কালচারাল ফিল্ডে বিকল্প দুঃখের জগত ওনাদের খুঁইজা নিতে হবেই হবে।

বেশ্যাদের দারিদ্র নিয়া দুঃখ অতিশয় করতে না পারলে তাবৎ দুনিয়ার দারিদ্র আর অবিচারে যে মন দিতে হবে – তা কি সম্ভব নিকি! দেখছেন না মাইরা সবাইরে ছাফা কইরা ফেলল রা নাই – পা কাটতে হইল বইলা একটিবিস্টরা কত ঝাঁপাইয়া দুঃখ করল।

বেশ্যাদের, গিরস্ত মহিলাদের, গে-দের, বলশালী কর্তাদের ও তাদের লাফাঙ্গা বাচ্চাদের সবার ছবিই ছাপানো যাইতে পারে। অনুমতি ছাড়া তো এই ছবিগুলা তোলা হয় নাই মনে হয়।

এক্সপ্লয়টেশন – সে তো বেশ্যার আবার প্রাইভেসি কী গো!

বেশ্যার বাণিজ্য তো প্রাইভেসি বিক্রয়ই, নাকি না? ফটোগ্রাফার যদি লাগানোর বদলে বেশ্যার ঘরবাড়ি আর ছোটগল্প সম্ভোগ করতে চায় বেশ্যা তারে তা করতে দিবে না? কেন!

আপনার আমার প্রাইভেসি রক্ষার তাগিদ তাদের যদি না থাকে আপনার আমার প্রাইভেসি রক্ষার যন্ত্রণা তাদের চাপানো যাবে কি?

মানে যে অর্থে ওনাদের প্রাইভেসির গোয়ামারা হইতেছে সে অর্থে ওই ব্যাপারে সচেতন করতে গেলেও তো একই ঘটনাই ঘটে। গিরস্তদের বাসায় যখন এনজিও কর্মী কিংবা তাবলিগের হুজুর গিয়া পান তামুক চায় তাও তো প্রাইভেসির দফারফাই। বাংলা মুলুকে প্রাইভেসি জিনিসটা একটু পশ্চিমই তো লাগে। আমাদের বোধহয় একটু অন্য ভাবে ভাবতে হবে।

২৩/১/২০১৪

ইউটিউব ভিডিও – Behind the brothel’s walls – Rough Cuts, Reuters TV

Flag Counter

Leave a Reply