ভিকটিমের পোশাকের বর্ণনা দিয়া প্রথম আলো কী ভুল করলো?

“আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পরিমল জয়ধর মেয়েটির পোশাক-আশাকের বর্ণনা দিয়েছেন। তা থেকেই তাঁর হীন মানসিকতাই প্রমাণিত হয়। আর প্রথম আলোর মতো দায়িত্বশীল পত্রিকা পরিমলের জবানবন্দির ওই অংশটুকু, মেয়েটির পোশাকের উল্লেখ, কেন প্রকাশ করতে গেল, তা আমাদের বোধগম্য নয়! প্রথম আলোর কাছ থেকে এ আমরা আশা করি না।” (কেন আন্দোলন ভিকারুননিসায়? ১৭-০৭-২০১১ )

—নাফিসা নূর, পলা আজিজ, ফারহানা আলম, নূর-এ-নাজিয়া, বর্ণালী সাহা, তাসমীয়া আনিকা, ফারজানা ইসলাম, সাথী সাহা, লায়লা ফারজানা, আফরীন হোসেন, মোশফেকা করিম, আফরীন তানজিলা, সামিয়া শারমীন ও আলিফা বিনতে হক

আপডেট, ২৫ নভেম্বর ২০১৫: "ছাত্রী ধর্ষণে পরিমলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড"
আপডেট, ২৫ নভেম্বর ২০১৫: “ছাত্রী ধর্ষণে পরিমলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড”

ভিকারুন্নিসা নুন ভিকটিমের পোশাকের বর্ণনা যা ধর্ষক দিয়েছেন তা প্রকাশ করে দায়িত্বশীল (!) ‘প্রথম আলো’ নাকি ভুল করেছে। কেন ভুল করেছে?

মেয়েটির পোশাকের বর্ণনা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করবে? অর্থাৎ এ রকম পোশাক পরলে এমনই হবে বলে জনমনে যে দৃষ্টিভঙ্গি আছে বলে তাঁরা সাব্যস্ত করছেন তার প্রতিফলন পড়বে বিচারে? কিন্তু যাদের বিচারের দায় তারা তো ধর্ষকের কাছ থেকে এই বর্ণনা শুনেছেনই। সেক্ষেত্রে জনমনের ব্যাপারে একটিভিস্টদের শ্রদ্ধা বা কৌশলগত অবস্থানটি আসলে কী? জনমন বিচারকে প্রভাবিত করবে বলাটা কি বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি অবৈধ অনাস্থা নয়? যদি তাও না হয় তাইলে প্রথম আলো কি ইসলামি পর্দা প্রথার তল্পিবাহক নাকি যে জিনস আর টিশার্টের বর্ণনা ছাপতে পারবে না! মঙ্গলবারের নকশা পাতায় তারা জিনস টিশার্ট ছাপায় না নাকি?

বিচারের মধ্যে কি এমন কোনো দুর্বল ধারা আছে নাকি যে, কোনো কোনো ধরনের পোশাকে ধর্ষণ কম অবৈধ? বা প্ররোচিত হইয়া ধর্ষণ করলে পরে তা বৈধ? যদি তা না হয় (বা হয়ও) দায়িত্বশীল প্রথম আলো ধর্ষণকারীর বক্তব্য প্রকাশ করবে না কেন? বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা আদৌ না করতে পাইরা, ব্যবস্থার ফাঁকগুলারে পাশ কাটাইয়া কোনো ইস্যুতে কেবলই অপরাধীর শাস্তির বন্দোবস্তের চিন্তা প্রতিশোধকামী আশু চিন্তা। পোশাকের ব্যাপারে জনমানসে প্রচলিত ধারণার তল্পি বহনকারী একটিভিস্টদের যে কোনো মূল্যে শাস্তি দেওয়ার যে একটিভিজম তার অবসান দরকার। বিচারের আগেই  একটিভিস্টরা শাস্তি দাবি করে এই দেশে।

দায়িত্বশীল মিডিয়ার কাজ কোনো ভিকটিমের প্রতি অন্যায়ের শাস্তির প্রতিবিধান নয়। বরং বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের বক্তব্য তুইলা ধরা। সুতরাং এই ধর্ষণ মামলায় পোশাকের ব্যাপারটা আরো সামনে আসা দরকার। এবং দরকার কোনো পোশাকেই, কোনো প্ররোচনার নামেই যাতে ধর্ষণ কখনোই কোনো বিচার ব্যবস্থায় ক্ষুদ্রতম বৈধতাও না পায় তা নিশ্চিত করা। একটিভিস্টরা নিজেরাই যদি পোশাক নিয়া এত আমতা আমতার মধ্যে থাকেন তাইলে অপরাধী চক্র সে সুযোগ ছাইড়া দিবেন এমন ঘটার কারণ দেখি না। দায়িত্বশীল আদালত যেহেতু প্রথম আলো না, সেখানে অপরাধী পোশাকের বর্ণনা দিতে পারবেন, আরো অনেক দোষারোপই করতে পারবেন।

মিডিয়া একটিভিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী কী কী না-ছাপাইতে হবে সে দায়িত্ব নিতে থাকলে কোনো ধর্ষণ মামলার কোনো রিপোর্টই তারা করতে পারবে না আর। কিন্তু আদালত ঠিকই জনমানসের সহায়তায় অপরাধীর পক্ষপাত করার সুযোগ পাইতে থাকবে। টিশার্ট আর জিনস পরলে যেই দেশে একটিভিস্টরা পর্যন্ত হায়হুতাশ কইরা ওঠে সেই দেশে বোরকা পরা খবরের কাগজের প্রকাশনার আজ বড়ো প্রয়োজন দেখা যাইতেছে!

 ১৮/৭/২০১১ – ২/৮/২০১১

3 Comments

Add Yours →

Leave a Reply