রাজ্জাক সাহেবরে ‘জ্ঞানতাপস’ না বানাইলে হয় না!

abdurrazzak3
আবদুর রাজ্জাক (১৯১৪ – ১৯৯৯) ছবি. ব্রাত্য রাইসু ১৯৯৫

আবদুর রাজ্জাকরে জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বানানোর জন্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তার নামাগ্রে বিশেষণ লাগানো শুরু করছেন।

এগুলা জীবিত বা জাগ্রত আবদুর রাজ্জাকরে মৃত ইতিহাস কইরা তোলার প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়া সাধারণ যে আবদুর রাজ্জাক–যিনি অতি সাদাসিদা জীবন যাপন কইরা গেছেন, নিজেরে বেহায়া জ্ঞানীদের মতো উচ্চকিত কইরা তোলেন নাই কখনো, তাঁরে এখন অপোগণ্ডদের ‘জ্ঞানতাপস’ হইতে হইতেছে!

তিনি পড়ুয়া ছিলেন। জ্ঞানী হইলে হইতেও পারেন তবে তার জ্ঞান আলাদাভাবে দৃশ্যমান না।

তাপস তিনি ছিলেনই না। তপ কইরা তাপস হয় লোকে। কিছু নিয়া হইলে তপস্যা হয় না। তপস্যা বিযুক্ত হওয়ার সাধনা। যুক্ত হওয়ার না। এমনকি রেগুলার গাছের নিচে বইসা যে টিচার বই পড়ে আর পড়ায় তারেও বড়জোর ‘শান্তিনিকেতন’ বলা যাইতে পারে—জ্ঞানতাপস না।

বই-ই যদি পড়তে থাকল আর তপস্যা হইল কোথায়? বই পইড়া যিনি জ্ঞানী তারে জ্ঞানী পাঠক নিঃসন্দেহে বলা যায়। বই লইয়া পইড়া থাকাদের নাম আছে সমাজে—বইপাগল, বইপোকা।

তবে রাজ্জাক কেবলই বইপাগল ছিলেন না, তিনি বাজারসদাইও করতেন, রান্ধাবাড়াও করতেন। সাধারণত বই কোলে উঠলে ভদ্রলোক ক্রিয়েটিভরা আর বাজারসদাই করতে চান না আমগো দেশে, রাজ্জাক ব্রিটেনবাসী সিঙ্গেল বুদ্ধিজীবীগো মতই বই পড়ার লগে লগে বাজার ও রান্নাবাড়া করতেন। তো এত কিছু হইলে আর তাপস হওয়া হয় না। বই দেখায় দেয়, যেমন রাজ্জাক দিতেন—কিন্তু তপস্যা যিনি করেন তার লাইন ভিন্ন। তপ ছাড়া তাপস একভাবেই হইতে পারে, যদি কারো নাম হয় তাপস। আর তপ করার দরকার কী এই আমলে? বই পড়লেই তো চলে। যা লোকে বইয়ে লেইখা গেছে তা সাধনা কইরা বাইর করতে হবে কেন!

আবদুর রাজ্জাকের জীবনের সামাজিক গুরুত্ব জ্ঞানে না, পাঠেও না, পড়ানোতে তো না-ই বরং তার জীবনাচরণে ছড়াইয়া আছে।

তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থাকতে পারে, সে প্রজ্ঞা তৎকালীন মুসলিম লীগার বা আওয়ামী মুসলিম লীগারদের আরো বেশি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের কী পড়তে হবে তা বাতলাইয়া দেওয়ার শিক্ষকসুলভ নির্দেশনায়ই তার কিংবদন্তী রচিত হইছে বেশি কিন্তু এর জন্যে কাউরে জ্ঞানী বলার কিছু নাই।

অনেকে আবার ওনারে সক্রেটিসের সঙ্গে মিলাইয়া দেখেন। সক্রেটিস অন্যদের প্রশ্ন করতেন। এবং তাদের উত্তরের ভিত্তিতে আরো প্রশ্ন করার মধ্য দিয়া নিজের জন্য জ্ঞানের সন্ধান করতেন। বিপরীতে আবদুর রাজ্জাক মেইনলি লেখক, রান্নাবান্না ও রাজনীতিকদের জ্ঞান বা ধারণার সার বিতরণ করতেন আগ্রহী মেহমানদের মধ্যে, পিএইচডি করতে চাওয়া ছাত্র বা সংবিধান লেখতে চাওয়া বুদ্ধিজীবীদের ভিতরে—কোন বইয়ে কী পাওয়া যাইতে পারে, কোন বাজারে কী সহজলভ্য তার টিপস দিতেন তিনি। এগুলা কাজের কাজ বটে কিন্তু তথ্যমাত্র, জ্ঞান না। তথ্য সম্প্রচারের মধ্যে জ্ঞানের বিভা থাকতে পারে। বা বলা যায় জ্ঞান তথ্যের বা জানানোর মাধ্যমেই সম্প্রচারিত হয়। আবদুর রাজ্জাক যা জানাইয়া গেছেন তার মধ্যে তার নিজের জ্ঞানের সন্ধান আমি পাই না।

আমি দেখছি, রাজ্জাকের খ্যাতি জ্ঞানীগিরির বিরোধিতায়, সহজ জীবন যাপনে, বই পড়া ইত্যাদির মধ্যে। তবে তারে দার্শনিক বানানোর চেষ্টা করা যাইতেই পারে। যদিও বইয়ের নাম, কত সালে—এগুলা জাস্ট সঠিক পরামর্শ ও মামুলি বিষয়।

লিস্টি আকারে সাজাইলে একান্তই রাজ্জাক সাহেবের জ্ঞানের কথা কী পাওয়া যাবে তাতে আমার সন্দেহ আছে। আমি সরদার ফজলুল করিম ও আহমদ ছফার রাজ্জাক পইড়া দেখছি—এগুলা ওনাদের না জানা জিনিস রাজ্জাক যে জানতেন সে বিস্ময়ে বুঁদ হইয়া আছে।

অন্যের জ্ঞান নিজজ্ঞানে বিতরিলে পরকালে ভক্তেরা দিকভ্রান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী হইয়া উঠতে পারে।

২/১২/২০১২

 

সংযুক্তি: ফেসবুক কমেন্টস: জিয়া হাসান ও ব্রাত্য রাইসুর কমেন্টসমূহ

জিয়া হাসান
disagreed. আব্দুর রাজ্জাক এর নিজস্ব লেখা নাই বলে তার গ্রুরুত্ত খাটো হয়না। সক্রেতিস ও নিজে কিছু লেখে নাই, তিনি যা বলসেন তা লিখে গেসেন প্লেটো ও ক্সেনফন। আব্দুর রাজ্জাক শুধু মাত্র কে কি বই পরবে সেই রেফারেন্স দিসেন -এবং এই টাই তার সরবচ্চ মহিমা বলে যে মন্তব্য তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই গেলাম। সফা বা আজাদ বেচে থাকলে আপনি এই কথা বলে এত সহজে পার পাইতেন না।

রাজ্জাক এর দর্শন ও গুরুত্ত নিয়া রেফেরেন্স সহ একটি নোট লেখার আশা রাখি। কিন্ত আপনার এই নোট এর তীব্র প্রতিবাদ জানাইলাম।

ছয় দফার মুল দর্শন রাজ্জাক এর ধারনাগত, ডক্তর কামাল রে পাইলে জিগাইয়েন।

অনেকে আবার ওনারে সক্রেটিসের সঙ্গে মিলাইয়া দেখেন। সক্রেটিস অন্যদের প্রশ্ন করতেন। এবং তাদের উত্তরের ভিত্তিতে আরো প্রশ্ন করার মধ্য দিয়া নিজের জন্য জ্ঞানের সন্ধান করতেন। – আপনার ধারনার মুল ভুল টা এই লাইন এই আছে।

খেয়াল করবেন, ঢাকা ইউনির মুল অবদান স্বাধীনতার বূদ্ধি ব্রিত্তিক নেতৃত্ব দান এ। তেমন কোন মহা আলোড়ন সৃষ্টিকারী দর্শন বা কালচারাল মুভমেন্ট ঢাকা ইউনির কাছ থেকে আসে নাই। আব্দুর রাজ্জাক কে এই লাইন এই যাচাই করতে হবে ।

ব্রাত্য রাইসু
“লিস্টি আকারে সাজাইলে একান্তই রাজ্জাক সাহেবের জ্ঞানের কথা কী পাওয়া যাবে তাতে আমার সন্দেহ আছে।” / BR

ঝগড়া পরে করব। আগে তো জানাইবেন ওনার খুঁতিতে কী কী আছে। আর রাজ্জাক লেখছেন না লেখেন নাই তা বিষয়ে আমি আপত্তি অনাপত্তি কিছু করি নাই। বরং ওনার ব্যাপারে যা যা কিংবদন্তী আছে তাতেই বা জ্ঞানের লক্ষণ কোথায় তা থাকলে কেউ পাঙ্খা নাড়েন।

ছয় দফার ‘দর্শন’ যার কাছ থিকাই আসুক তাতে কেউ জ্ঞানতাপস হয় না।

কিছু নিয়া হইলে তপস্যা হয় না। তপস্যা বিযুক্ত হওয়ার সাধনা। যুক্ত হওয়ার না। বই লইয়া পইড়া থাকাদের নাম আছে সমাজে–বইপাগল, বইপোকা। তবে রাজ্জাক কেবলই বইপাগল ছিলেন না, তিনি বাজারসদাইও করতেন, রান্ধাবাড়াও করতেন। সাধারণত বই কোলে উঠলে ভদ্রলোক ক্রিয়েটিভরা আর বাজারসদাই করতে চান না আমগো দেশে, রাজ্জাক ব্রিটেনবাসী সিঙ্গেল বুদ্ধিজীবীগো মতোই বই পড়ার লগে লগে বাজার ও রান্নাবাড়া করতেন। তো এত কিছু হইলে আর তাপস হওয়া হয় না।

আর তপ করার দরকার কী এই আমলে? বই পড়লেই তো চলে। যা লোকে বইয়ে লেইখা গেছে তা সাধনা কইরা বাইর করতে হবে কেন!

জিয়া হাসান
আমার মনে হয়, আব্দুর রাজ্জাকের মৌলিক দর্শন কি তা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইতে পারে। এই ধাঁধা টা আমার নিজের মনেও আছে। একই ধাঁধা আছে আমার সফা, আজাদ এবং আহমেদ শরীফ নিয়েও। ইনারা সবাই ভাল ভাল কথা বলে গেছেন, লিখে গেছেন। কিন্তু ইনাদের মৌলিক দর্শন টা কি ?
আমার ব্যক্তিগত ধারনা হইল, আমাদের চিন্তা ভাবনার এই দিক পালেরা মূলত social observer। উনারা কেও দার্শনিক নন। এবং তাদের ব্যাপক পড়া শোনা হইতে, এবং তীক্ষ্ণ অবসারভেসান ক্ষমতা থেকে তারা সমাজ কে বিশ্লেষণ করে দেখাইছেন। কিন্তু মৌলিক তারা কেও নন।
তারা সত্ত্বর এর দশক থেকে শুরু করে বিংশ শতক পর্যন্ত, আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে যে কনফিউজড বাঙালি জাতি সত্তা দাঁড়াচ্ছিল তাকে একটা সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেন, কন্টেক্সট প্রদান করেন এবং অসীম কে সসীমে এনে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এই টাই এই তিন জনের মুল সাফল্য।

আব্দুর রাজ্জাক এই কাজ টি করে গেছেন পাকিস্তান সৃষ্টির আমল থেকে। হাল এর ব্রাত্য রাইসুর সেই ঐতিহাসিক অবস্থান না জানার কথা নয়, কিন্তু যারা ওই সময় টা কে দেখেছেন এবং তাঁর বক্তব্যের মর্মার্থ বুঝেছেন তারা উনার গুরু বচন শোনার জন্যে আলোর পাশে মৌমাছির মত উনাকে ঘিরে রাখসেন। ইনারা নিজেরাই পরে একেক জন দিকপাল হয়েছেন, আমাদের আলোক বর্তিকা হয়েছেন। সফা, হুমায়ুন আহমেদ, প্রফেসার রেহমান সুবহান, মৌলানা ভাসানি, ডক্টর কামাল, প্রফেসর মুজফফর আহমেদ, মুন্তাসির মামুন, ডক্টর আনিসুজ্জামান কেও তার সেই ইনফ্লুয়েন্স থেকে বাদ পরেন নাই। তাদের সবাই কে এক কলমের খোঁচায় বাতিল করে দেয়া টা শুধু চিন্তার দীনতা নয়, চিন্তার লেভেল টাও প্রকাশ করে দেয়।

আব্দুর রাজ্জাক জ্ঞান তাপস কিনা এই টা পৃথিবীর সব চেয়ে ফালতু বিতর্ক। উনি শুধু মাত্র librian এর মত বইয়ের রেফারেন্স দিছেন বলে যে বক্তব্য দেয়া হইসে, সেই টা এত হাস্যকর একটা কথা যে এই যুক্তি খণ্ডন করে এই বক্তব্য কে জাতে তোলা আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি সব চেয়ে বড় অসম্মান।

উনার চারি পাশে, সবারি আফসোস ছিল উনি লেখেন না কেন? সেই ক্ষোভ থেকে কেও কেও cassette হাত এ উনার গুরু বচন record করে গেছেন দিন এর পর দিন। আর তা নিয়ে লেখে গেছেন পরে সময় সুযোগ পেয়ে । এই গুণমুগ্ধ ক্যাসেট রেকর্ডার দের মধ্যে যদি আহমেদ সফা এর মত ব্যক্তিত্ব যদি থাকেন, ত নিজের অজ্ঞানতা টাকে প্রকাশ করে এই ধরনের একটা নোট লেখার আগে স্পর্ধার সীমা টা মেপে নেয়া উচিৎ- যদি না বুঝে ভুল হয়ে যায় ওই ভয় থেকে ।

যেই লোক ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের তিন তিন টা জেনারেশন এর বুদ্ধি ব্রিত্তিক আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলেন এবং যেই নীরব আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নামক দেশটার জন্ম হইসে, সেই আব্দুর রাজ্জাক এর অবদান কতটা উপেক্ষিত সেই আলোচনা না করে আব্দুর রাজ্জাক জ্ঞান তাপস ছিলেন কিনা এই প্রশ্ন করাটা প্রশ্ন কর্তার বালখিল্যতার পরিচয় বহন করে। Harold lasky এর কতটুকু প্রভাব আব্দুর রাজ্জাকের উপরে পরছে বা আব্দুর রাজ্জাক কেন উনার থিসিস টা শেষ করেন নাই, সেই টাও অবান্তর প্রশ্ন। তিনি নিজেই উনার অপ্রকাশিত থিসিস এর মান নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাই এই টা নিয়ে তিনি আর কাজ করেন নাই। কারণ তিনি তার যৌবন এর ওই থিসিস থেকে অনেক টুকু অগ্রসর হয়ে গেছিলেন।

আমি বুঝতে পারি, আব্দুর রাজ্জাক কে রিসেন্টলি corportization করার একটা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সেইটা এক শ্রেণীর লোকের নিজেকে আরও উচ্চ মার্গীয় আতেল হিসেবে প্রকাশ করার ধান্দা থেকে আসছে। কিন্তু এই coroporatization তো, আমাদের বাঙ্গালি জাতির প্রতি টা ঘটনা এবং ভ্যালু নিয়ে করা হইছে। মুক্তিযুদ্ধ, লালন, ২১ ফেব্রুয়ারি, পান্তা ভাত, বাঙ্গালিয়ানা কোন কিছুই এই টা থেকে বাদ যায় নাই। কিন্তু তাই বলে তো এই গুলো কোন টাই মুল্যাহীন হয়ে যায় নাই।

আব্দুর রাজ্জাক কে নিয়েও সেই কর্পোরেট বাণিজ্যের প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু এই অজুহাতে চাইর আনার আতেলদের আব্দুর রাজ্জাকের মত একটা মহিরূহ কে নিয়ে এই ধরনের আজে বাজে কথা বার্তা ব্যাপক ভাবে নিন্দনীয় । আপনার নোটে সীমা লঙ্ঘন করে থাকলে ক্ষমা করবেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র একটা মাত্র মানুষের জ্ঞানতাপস উপাধি দরকার পড়েনা। সেই জন হইলো, রাজ্জাক সাহেব। কারা এই টাইটেল দিয়ে এই কুতর্ক সৃষ্টি করতাসেন আমি জানিনা এবং কেউ যদি দিয়ে থাকে ঐ রেফারেন্সে উনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করাটা খুবি আপতিকর।

উনি ছিলেন একজন সত্যিকার এর জ্ঞানসাধক ও মভিং রেফারেন্স বুক। উনারে যে রাইসু ভাই, লাইব্রেরিয়ান এর বেশী মর্যাদা দিতে চান না, সেই কথাতেই উনার ব্যাপক জ্ঞান সাধনার পরিচয় পাওয়া যায়। । জ্ঞান এর তপস্যাই ছিল উনার জীবনের তন্ত্র মন্ত্র। এই গুলো রাইসু ভাই এর সব চেয়ে বেশী জানার কথা, কারন উনি ডক্টর সফা ও আরও অনেক এর সাহচর্য পেয়েছেন যারা রাজ্জাক সাহেব এর ভাব সিস্য ।

উনি যদি বলতেন, রাজ্জাক সাহেব এর মৌলিক দর্শন তেমন কিছু পাওয়া যায়না। আমি মানতে পারতাম। কিন্তু রাজ্জাক সাহেব জ্ঞান এর কথা তেমন কিছু বলে যান নাই বা উনি শুধু মাত্র টেবিল অফ কন্টেন্ট পরে বই রেফারেন্স করতেন, এমন অভিযোগ আপত্তিকর।

আজাদ, সফা এবং আহমেদ শরিফ –ইনাদের কাও কে, আজ থেকে ৫০ বছর পরে তেমন মূল্য দেয়া হবেনা। কারণ, ইনারা যা বলে গেসেন, তা উনাদের সমকালে বিশিষ্ট পূর্ণ মনে হলেও, ৫০ বছর পর অবভহিয়াস বলে মনে হবে। রাজ্জাক সাহেবে একি দোষে দুষ্ট। উনার আরও বড় অপরাধ উনি নিজে তেমন কিছু লিখে জান নি।

কিন্তু উনার অবদান অন্য জায়গায় । আমি আবার কথা টা লিখি, ঢাকা ইউনির মুল অবদান স্বাধীনতার বূদ্ধি ব্রিত্তিক নেতৃত্ব দান এ। তেমন কোন মহা আলোড়ন সৃষ্টিকারী দর্শন বা কালচারাল মুভমেন্ট ঢাকা ইউনির কাছ থেকে আসে নাই। কিন্তু বাংলাদেশি বাঙ্গালি মুসলমান দের আত্ত পরিচয় এর দর্শন নির্মাণ হয়েছে ঢাকা ইউনির একটা চার দশক স্থায়ী একটা নীরব বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে । রাজ্জাক সাহেব ঐ টার কেন্দ্রে ছিলেন। কিন্তু এই সত্য টা হারিয়ে গ্যাসে ।

আর উনার চেয়ে বেশী জ্ঞান এর তপস্যা করেছেন, এমন লোক তো কেওই নাই। তাই ব্রাত্য রাইসু ভাই এর মত ইনফরমড মানুষের, এই টাইটেল টাতে আপত্তি করা টা খুবি অবাক হওয়ার মত। কিন্তু এই টাইটেল নিয়ে বিতর্ক সত্যি খুব সিল্লি । উনার জ্ঞান এবং দরশন নিয়ে আলোচনা না করে এই ধরনের লো কোয়ালিটি টাইটেল নিয়া বালখিল্য বিতর্কে আমার আগ্রহ কম।

ব্রাত্য রাইসু
আমার আলোচনায় রাজ্জাক স্যার নিয়া তেমন আজেবাজে কথা আমি বলতে পারি নাই, চাইও নাই। কিন্তু কোনো চাইর আনা আঁতেল–তা নাইলে আমিই হইলাম–যদি আবদুর রাজ্জাক নিয়া আজেবাজে কথাও বলে তা বিষয়ে নিন্দা করার আগে কথাটা কাটাইতে তো হবে।

উনি বই কোনটা পড়তে হবে বলতেন বা বাজার করতেন বা রান্না কইরা লোকেরে খাওয়াইতে পছন্দ করতেন–এই হচ্ছেন কিংবদন্তীর আবদুর রাজ্জাক। এরে যদি কেউ আজেবাজে কর্ম বিবেচনা করেন তার কর্তব্য আবদুর রাজ্জাকের বুদ্ধিবৃত্তিক বৃত্তান্ত প্রকাশ করা। এবং কেন তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড তার এইসব ‘আজেবাজে’ কর্মকাণ্ডের চাইতে বেশি যোগ্যতা রাখে তা বলা।

ওনার ‘শিষ্যরা’ ওনার কথা শুইনা কে কী করছেন (তাঁরা যে কী করছেন–তা থাউক!) তা নিয়া পরে হয়তো আমার আগ্রহ জাগবে। আপাতত আমার পরামর্শ হইল: রাজ্জাকের খ্যাতি জ্ঞানীগিরির বিরোধিতায়, সহজ জীবন যাপনে, বই পড়া ইত্যাদির মধ্যে। তারে দার্শনিক বানানোর চেষ্টা করা যাইতেই পারে। আমি আমার চাইর আনা আর কাসার বাসন নিয়া বইসা রইলাম, দেখি পাতে কী রসগোল্লা পতিত হয়!

জিয়া হাসান
রাইসু ভাই। নেট এর কল্যাণে আপনাদের মত গুণীজনের সাথে সাক্ষাত আর তাতে একটু কাবিলতি ফলানর সুযোগ নিয়া যদি একটা বাজে কথা বলি ফেলি তো, নিজ গুনে ক্ষমা করবেন। সরি। মন থেকে বললাম।

রাজ্জাক সাহেব রে নিয়া মাত্র দুইটি বই লেখা হইসে। কিন্তু উনার রেফারেন্স আমি অসংখ্য গুণীজনের লেখায় পাইসি। তাতে উনাকে নিয়ে যেই ধারনা পাওয়া যায়, তা আপনি রান্না বাননা, বাজার সদাই, আর পুস্তক পরার অভ্যাসে দিকন্সত্রাক্ট করসেন যেটা সত্যি দূষণীয়।

এইটারে, সক্রেতিস প্রব্লেম বলা হয়। যখন একটা লোক রে তার ভক্তদের লেখার মাধ্যমে চিনতে হয়, কিন্তু ঠিক মত চিনা যায়না কারণ উনি নিজে কিছু লেখেন নাই।

থালা পেতে যে চাইর আনা নিয়া বসে আছেন, তার উত্তর পাওয়ার সুযোগটা তো আপনাদেরই ছিল। কিন্তু আমি দেখসি, আপনাদের সাক্ষাতকার গুলো তে কে কারে কি বলছে, কে কেমন মানুষ ছিলেন, কে কোথায় লিখসেন, কারে নিয়ে উনি কি ভাবতেন এই টাইপ এর সীলি প্রশ্ন করা হইসে। প্রশ্নের গভীর থেকে গভীরে গিয়ে রাজ্জাক কে আবিষ্কার করার সুযোগ আপনাদেরই ছিল। আপনারা সেইটা নেন নাই। একটা রেফারেন্স দেই। আর্টস বিডি তে মোহাম্মদ আলী, সরদার ফজলুল করিমের সাক্ষাৎকারে কি প্রশ্নগুলো করসেন তা কাট কপি করে দিলাম।

সাক্ষাৎকারে সরদার ফজলুল করিমবিষয়: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক

আপনি তো অধ্যাপক রাজ্জাকের ভাবশিষ্য ছিলেন। তাঁর জীবন-যাপন, চালচলন, আচার-ব্যবহার ও পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে কোথাও কিছু বলেন নি। এ বিষয়ে একটু বলুন না?

একটু বলবেন, কখন কোথায় রাজ্জাক স্যারের সাথে আপনার পরিচয় হল? সেইটা শুনব।

আপনি রাজ্জাক স্যারের চলাফেরা, পোশাক-আশাক সম্পর্কে বলতে চাইছিলেন, বললেন না তো। তিনি বাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি খুব সাধারণ পোশাক পরতেন?

আচ্ছা, রাজ্জাক স্যারের বিয়ে-সাদীর ব্যাপারে কোনো আলাপ-আলোচনা হত না? আপনি তাঁকে খুব ভয় পেতেন? না কি এসব ব্যাপারে উনি আপনাকে বা কাউকেই পাত্তা দিতেন না?

ঘরে উনি খুব সাধারণ জিনিস ব্যবহার করতেন, আপনি নিশ্চয় সেগুলোর প্রতি খেয়াল করেছেন?

রাজ্জাক স্যার তো বিদ্যাসাগরকে গুরুত্ব দিতেন। আপনার সাথে তাঁর সাহিত্যিক আলাপ হত?

উপরের প্রশ্ন গুলো আমি অনেক প্রশ্ন থেকে বেছে নেই নাই। সিরিয়ালই ঠিক এই প্রশ্ন গুলোই করা হইসে। আমার জানা মতে আপনি আর্টস বিডি এর সম্পাদক। আপনারে আমার প্রশ্ন আমার মত পাঠকরে এই ধরনের, বাল ছাল প্রশ্ন খাওয়াইয়া এখন আবার রাজ্জাক এর দর্শন জীগান কেন, সফা রে কেন জিগান নাই, সরদার ফজলুলরে কেন জিগাইতাসেন না, উনি তো বাইচা আসেন।

তবু সফা বলে গেসেন। যদ্দপি আমার গুরু বই এর গুরু এর পিডিএফ ভার্সনের ২৭,২৮,২৯ পৃষ্ঠায় রাজ্জাক কে নিয়ে সফা এর মূল্যায়ন পরিষ্কার ভাবে আছে। সেইটা খুবি নির্মোহ বিশ্লেষণ। ওইটা আবার পরার রিকুয়েস্ট করলাম।

দেখেন। আমরা পাঠক মাত্র। এবং অনেক গুণীজনের লেখায়(সফা ইনক্লুডেড) রাজ্জাক সম্পর্কে একটা মিথ জন্মাইসে। আপনি বলতে পারেন, তুমি তো খালি ব্যক্তি প্রেমে মগ্ন হইস এবং কিন্তু উনার জ্ঞান কি তা তো কিছুই বলতে পারলা না।

আমি আবার বলি, উনারা কেউ দার্শনিক নন, যে লিস্টি করে উনাদের দর্শনের হিসাব কশতে হবে। রাজ্জাক এবং উনার ভাব শিষ্যরা মূলত social observer। ঐ অবসারভেসন গুলো এখন সময়ের পরিক্রমায় অনেক গুলো রিলেভেন্টও নাই। তবু সেই টা নিয়া গবেষণা হওয়া উচিত। আপনার মন্তব্যের বিরোধিতা করলাম বলে সেই গবেষণার দায় একা আমার না।

কিন্তু যেই কারণে আমি রাজ্জাক রে আমি ডিফেন্ড করি তা হইলো, রাজ্জাক এর একটা অনন্য সাধারণ অবদান আছে। রাজ্জাক বাংলাদেশে বাঙালি ইন্টেলেক্টুয়াল ডিস্কোরস এর ভিত টা রচনা করে গেসেন। যেইটা পরে স্বাধীনতার বুদ্ধি-ভিত্তিক স্তম্ভ গুলো তৈরি করে। উনি কি বলে গেসেন তা মোটামুটি ৯৯.৯৯% আর নাই।

আপনারা সেই সুযোগটা পাইসিলেন এবং এখনও আপনাদের সেই সুযোগ আসে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে আপনারা যদি প্রশ্ন করেন, উনি কেন বিয়া করেন নাই তখন আপনের উনারে লাইব্রেরিয়ান বানায়া দেয়া টাই ভাল। সেই তাতেও কিছু টা মর্যাদা হয়।

আর উনারে নিয়া মাত্র তিন টা বই। এই তিন টা থেকে সিঁচা রাজ্জাক কে দিকন্সট্রক্ত করার দায়িত্ব পুরা জাতির। আমি একটা ফেসবুক ফ্যান-পেজ করসি রাজ্জাক রে নিয়ে প্রায় ছয় মাস এগে, তাতে লাইক পরসে এই পর্যন্ত ২৫ টা।

তবু আমারে একটু সময় দেন, আমি আপনার পাতে কিছু ফেলব। কিন্তু আপনার পাত থেকে পয়সা টা সরান। রাগের মাথায় বলা কথা। আপনারা গুণীজন। নিজ গুনে ক্ষমা করবেন আসা করি।

ব্রাত্য রাইসু
একটা পেইজ থিকা যে কে আপনি আলোচনা করতেছেন স্পষ্ট কইরেন। প্রথমত আমি আর্টস-এর সম্পাদনা করি না আর। তবে সে সময়ে আলী ভাইয়ের নেয়া ওই সাক্ষাৎকার আমিই ছাপছি। সাক্ষাৎকারে সরদাররে যা প্রশ্ন করা হইছে তারে আপনি বাল ছাল বলেন তো বলেন। গুরুত্বপূর্ণ লোকদের বাল ছাল বিষয়ে প্রশ্নও গুরুত্বের দাবি রাখে। বরং এই সাক্ষাৎকার আমার কাছে সরদারের নিজের নেয়া মুগ্ধ সাক্ষাৎকারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। রাজ্জাক কী পরতেন, কী খাইতেন, বিয়া কেন করেন নাই–এ বিষয়ে যে আলাপ করা যাবে না তেমন গভীরতা যে আলী ভাইরে পায় নাই তার জন্যে তাঁরে অভিনন্দন জানাই।

যারা পথ খুঁইজা বেড়াইতেছে তাদের কাণ্ডারি আবশ্যক। তাঁরা কেবল মহতে নিবেদিত থাকতে চায়। সো, আমি বলতেছি রাজ্জাক বা ছফা বা সরদাররে জিগাইয়া জিগাইয়া তাদের গভীরতা খুঁজতে হবে না। যদি কারো মনে হয় তাদের জ্ঞানের ব্যাপার ছিল তা কী ছিল তা দেখানোর দায় তাদের তাদেরই। আমার সংশয় আছে রাজ্জাকের জ্ঞানকর্মের তালিকা নিয়া। তার যা ছিল না তা দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব না। যদি আমি বলতাম হ্যাঁ, ওনার এই এই জ্ঞানের কাজ আমি পাইছি, তখন তা দেখাইতে পারতাম। যা নাই তারে আমি কেমনে দেখাই!

এই ওয়ালে ফের কোনো গালি বা ব্যক্তি আক্রমণ মূলক কথা বললে কমেন্ট ডিলিট করা হবে।

ও, হমায়ুন আজাদই তাইলে এই আবেগী বিশেষণের সূত্রপাত করেন। নাইস।

আমার যে নিখাদ বালকসুলভ প্রশ্ন, যে, আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞানের লিস্টি কোথায় তার উত্তর দিলেই তো হয়। জ্ঞানীদের সার্টিফিকেট দানকারী হুমায়ুন আজাদের জ্ঞান (তারই বা তালিকা কোথায়!) দিয়া তো আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা হয় না–বা আমার বালকসুলভতা বা জ্ঞান না থাকা দিয়া।

Leave a Reply