‘ঊর্ধ্বকমা’র বাইরে যারা থাকেন তারা কারা!

১.
‘ঊর্ধ্বকমা’র বাইরে থাকার ব্যাপারটা মাথায় আসে এইভাবে—আমি প্রায়ই দেখি লোকে বইসা দুই দিকে দুই হাত কনুইয়ে ভাঁজ কইরা হাতের আঙুলের মধ্যমা আর তর্জনী খাড়া কইরা তাদের বক্তব্যের মধ্যে নিতান্ত আসমানী এক ঊর্ধ্বকমার ইঙ্গিত করে।

অতীব রুচিশীলতা! এবং আন্তর্জাতিকতা। এবং তত্ত্ববিশ্ব সম্পর্কে কী পরিষ্কার ধারণা—এমন উপভাব হয় এমন চার খাড়া আঙুল দেখলে। আবার লজ্জাও লাগে এই লোকগুলা কী রকম স্বার্থপরের মতো নিজের গরহাজির চিন্তার কী এক উচ্চম্মন্যতা জাহির করতেছে দেইখা। যেন অন্যের চিন্তার ভ্রান্তিই আপন চিন্তার উচ্চতা নির্মাণ করতেছে।

জাস্ট অন্যের চিন্তার ভিন্নতা অস্পষ্টতা, পরস্পরবিরোধিতা, হীনতা, ভুল নির্দেশ করার জন্য তারা আঙুল খাড়া করে। চাইরটা। যেন অন্যের চিন্তার ভিন্নতাটা খুব দেখাইয়া দেওয়ার ব্যাপার, এমনে বোঝন যায় না!

যে সব ব্যাপাররে তারা ঊর্ধ্বকমার মধ্যে রাখেন বা দেখেন তা কোনো ভাবেই তাদের যেন ব্যাপার না। তারা নিজেদের দোষমুক্ত বক্তব্যরে অন্যের বা নিজের দোষযুক্ত বক্তব্য থিকা আলাদা রাখেন এইভাবে। কিন্তু কারো বক্তব্য যদি অন্যের বক্তব্যের খণ্ডন হয় তাইলে আঙুলের ঊর্ধ্বকমা ছাড়াই তা বোঝা যাইতে পারে।

 

আমার জিজ্ঞাস্য, এই চার আঙুল খাড়া না করলে কি অন্যের কথা যে তার নিজের কথা না—তা বোঝা যাইত না? মনে হয়, যাইত। তাইলে চারটা আঙুল খাড়া করা জনিত এই এয়ার কোটিং বা বুদ্ধিবৃত্তিক এই এক্সপ্রেশন কেন?

২.
আমার ধারণা, ব্যাপারটা ফিরা পাওনের।

পাবলিকলি থুতু ফেলা, নাক ঝাড়া, নাক খোঁটা, পাদ দেওয়া, হাগামুতা করা, যৌনসঙ্গম করা ইত্যাদি মৌলিক মানব উপাচার হারাইয়া ফেলছে মানুষের ভদ্র শরীর। ভদ্রতা সেইসব লস্ট ব্যাপারগুলারে নতুনতর সঙ্কেত, মুদ্রা আর ভঙ্গির মাধ্যমে ফেরত পাইতে চায়।

শ্রাগ করাও এই রকম একটা লব্ধ শারীরিকতা। বা অধ্যাপকেরা বা টকশো উপস্থাপকরা যেভাবে হাতের আঙুল নাড়ায়!

৩.
কিন্তু এই এক রহস্য, ফিরা পাওনের এই আয়োজন কেন ভদ্রলোকদের অভদ্রজনদের থিকা আলাদা করার লগে লগে উচ্চ কইরাও তোলে।

আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে লোক বা লোকি পাবলিকলি নাক খুঁটতে পারে বা নাকের ভিতর আঙুল ঢুকাইয়া তার অস্বস্তি দূর করার স্বাভাবিকতা রাখে সে লো বা লোকি শ্রাগ করতে পারবে না বা যেইটা আমাদের নোটীয় আবাহন—আঙুলের ঊর্ধ্বকমা তৈরি করতে পারবে না!

যে ভদ্রলোকরা ও ভদ্রমহিলারা বদ্ধ স্পেসে হাগেন—আমিও তাই, আমাদের অনেক সংখ্যা—তারাও চেষ্টা কইরা দেখতে পারেন আপনারা যখন হাগামুতা করবেন ওই চার আঙুলের ঊর্ধ্বকমা কোনো কাজ করে না।

কেন?

কারণ উর্ধ্বকমা নিজের জন্যে কোনো বিষয় না। এটি অন্যের জন্যে অন্যের কাছে উপস্থাপিত এক রূপময়তা। বিভা। উদ্ভাস। আনন্দ। কালচারাল উচ্চম্মন্যতা।

২৪/১০/২০১০

Leave a Reply