কলকাতায় হুমায়ূন ও অন্য মুসলমান লেখকেরা

 

 

“বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম হওয়ার পর এই মুসলমান তো আগের মত রইল না। কলকাতা দিল্লির কাছে এমন মাইর খাইল যে কোমর ভাইঙ্গা গেল। আর দাঁড়াতেই পারল না। কলকাতাও বাধ্য হল বাংলাদেশে ঝুঁকতে। হুমায়ূনেও আগ্রহী হল। যারা তাকে অশিক্ষিত লোকের লেখক মনে করত তারাও হুমায়ূনকে খাতির করতে শুরু করল। আর আমরাও মনে করলাম আমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ূন বুঝি ‘জাতে’ উঠল?”

– রেজাউল করিম রনি

কলকাতার লোকেরা হুমায়ূনে আগ্রহী হইতে বা তার বই ওইভাবে পড়তে শুরু করছেন ৯০ এর পরে। আমি জানি কারণ হুমায়ূন ভাইয়ের বইয়ের কলকাতা যাত্রায় আমার খানিক দালালি আছে।

সে সময় পশ্চিমবঙ্গের প্রতিভাস প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী বীজেশ সাহার সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলেন। আমার তখন হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ পরিচয় ছিল। উনি থাকতেন এলিফ্যান্ট রোডের ফ্ল্যাটে।

৯০ এর পরে তো বটেই, সেইটা হইতে পারে একানব্বই বা বিরানব্বই সাল। আমি বীজেশ সাহারে নিয়া হুমায়ূন আহমেদের বাসায় গেলাম। উনি যতদূর মনে পরে ১০ টার মত বই বীজেশ সাহারে দিছিলেন প্রকাশ করতে।

কোনো রয়ালিটিই নিছিলেন না। বীজেশ সাহা বলতে পারবেন আরো ডিটেইলে।

সেইটাই হুমায়ূনের বইয়ের প্রথম বাণিজ্যিক কলকাতা যাত্রা। সুতরাং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের লগে লগে যদি মুসলমানিত্বের পালা বদল হয়ও হুমায়ূন তাতে কোনো অবদান সে সময় রাখেন নাই—স্বাধীনতার পরে পরে।

হুমায়ূন আহমেদের আগেই পশ্চিমবঙ্গের চাইতে  ভিন্ন বাস্তবতার ও ধারার লেখা মুসলমান সংখ্যাগুরুর বাংলাদেশে শুরু হইয়া গেছিল। সে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তো বটেই। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, রশীদ করীম, শওকত ওসমান এনারা ছিলেন।

আরো পড়ুন: শহীদুল জহিরের বাক্যের প্যাটার্ন নির্ভর নাট্য-উপন্যাস

স্বাধীনতার পরেও লিখছেন অনেকেই, যা কলকাতার আদলে তৈরি হয় নাই। ইমদাদুল হক মিলন ছিলেন যিনি কলকাতার ধারায় লিখতেন না, রাহাত খান ছিলেন, সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন, ছিলেন সরদার জয়েনউদ্দিন, মীরজা আবদুল হাই—আরো অনেকে।

তাদেরকে যদি কলকাতা প্রভাবিত বলি সেই প্রভাবনা হুমায়ূনেও যথেষ্টই আছে। আর বড় কথা, কলকাতারও কোনো একাট্টা হিন্দু লেখনরীতি নাই।

৩১/১২/২০১৩

Leave a Reply