জাতে ওঠা কেন জরুরি

আর্ট-কালচার, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা ও বুদ্ধিজীবিতা দিয়া জাতে ওঠারে আমি জরুরি কাজ মনে করি।

যখন জাত বিরাজ করে, এবং জাতের লোকজন আপনাকে উপরে উঠতে দিতে রাজি নাই, তখন তাদের গজফিতা বা মই বাইয়াই আপনাকে জাতে উঠতে হবে।

জাতে ওঠার জন্যে আর্ট-কালচার ও বুদ্ধিজীবিতা মোক্ষম অস্ত্র। যখন যা দিয়া কাজ হবে তখন তা ব্যবহার না করার নাম রোমান্টিসিজম।

২.
যেহেতু জাতের লোকজন অ-জাতের বা নিচের শ্রেণীর লোকজনের সঙ্গে আলাপে রাজি হয় না বা অবজ্ঞামূলক ভাবে রাজি হয় সুতরাং এই ব্যারিয়ার আপনি চাইলেই ভাঙতে পারবেন এমন না।

কেননা এইটাই জাত।

৩.
এইখানেই আমাদের সকলের উঠতে হবে। অন্তত যতদিন জাতের দম্ভ ও করুণা দূরীভূত না হইতেছে।

দম্ভ ও করুণা দূর করতে পারলে আর জাতও জাত থাকবে না। জাতের পদতলে বইসা জাতের প্রতি গালাগালি আর বিপরীত অবজ্ঞা দিয়া এই দম্ভ ও করুণার কালচাররে আপনি হঠাইতে পারবেন না।

আগে জাতে উঠতে হবে। এবং জাতে ওঠা মানেই জাতের সকল খারাপ গ্রহণ করা নয়। বরং জাতকে কীভাবে আপনি ডিকনস্ট্রাক্ট করবেন সেই পর্যায়ের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন আপনি।

জাত তখন আপনার কর্ষণ ক্ষেত্র। আপনি আপনার জাত ও মানুষরে স্থিতাবস্থায় তখন রাখবেন নাকি আমার মত কইরা তাদের সকল প্রাইড, দম্ভ ও করুণাকে ভাইঙ্গা-চুইড়া দিবেন তা আপনার বিবেচনা।

৪.
আমি দেখছি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অবস্থান পাওয়ার আশায় ও সামাজিক অবস্থান নষ্ট হওয়ার ভয়ে আমার অনেক গুরুস্থানীয় বুদ্ধিজীবী এই ব্যাপারে তেমন বদলের দিকে আর অগ্রসর হন নাই।

তারা বরং ছোট জাতের জন্যে অ্যাকটিভিস্টদের করুণা ও সহানুভূতির ব্যাগ সঙ্গে লইয়া আগাইয়া গেছেন এবং এখনও যাইতেছেন। এখনও নিচু জাতের লোকজন যে আসলে নিচু না এই সুসমাচার উঁচু কালচারের জন্য সুন্দর সুন্দর প্যাকেটে কইরা বিতরণ করতে আছেন।

তাদের এই অপচয় খুবই দুঃখজনক অপচয়।

৫.
আমি আর্ট-কালচার কইরা জাতে ওঠা লোক। কিন্তু জাতে যে আমি উঠলেও উঠি নাই তা আমার নামের সঙ্গে ‘ব্রাত্য’ কথাটি যুক্ত করার মাধ্যমে তা ঘোষিত হইয়াই আছে। আমার জাতে ওঠাকে ঘোষিত ভাবেই তাদের কালচারাল সংস্কারের অংশ ধরতে হবে।

আমি মিথ্যা আড়াল না কইরাই জাতের ও কম জাতের দূরত্ব কমাইতে আসছি।

যাতে জিনিসটারে সঠিক ট্র্যাকে বসাইতে পারলে তা এক সময় নিজের নিয়মেই ঘুইচা যাইতে পারে।

আমারে নিয়া আপনাদের হাস্য, ট্রল, ব্যঙ্গ ও আমার নাম নিয়া আপনাদের বিদ্রূপ এর সবই আপনাদের জাতের ভিতরে আমারে গ্রহণের অসম্মতি। তা ঠিক আছে।

আমি এই জিনিস কেবল যে উপভোগ করি তাই না, আমি আপনাদের এই কুত্তা খেদানিরে আমার নিজের কর্তব্য মনে করাইয়া দেওয়ার অ্যালার্ম বিবেচনা করি। যাতে আমি ভুইলা না যাই বুদ্ধিজীবী হিসাবে ঢুইকা পড়ার পর আমার কী করতে হবে, কুক্ষিগত ক্ষমতার ভাণ্ডার অভিজাত এই বিদ্যাসমাজরে নিয়া।

আপনারা দেখতেছেন আমি কী করি, এবং এইটাই আমার করার।

৬.
আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব যারা তিরিশ-পয়ত্রিশ বছর আগে আর্ট-কালচার শুরু করছিলেন তাদের অনেকেই এখন উচ্চ জাতের সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব। তাদের সকলেই যে জাতের প্রাইড ভাঙতে আগ্রহী বা তৎপর আছেন তা নয়। বরং জাতীয় ব্যক্তিত্বদের সহিত এক পঙ্‌ক্তিতে বসতে পারার আনন্দে উচ্ছল কল কল ঝর্নাধারা তারা।

আমি যে তা না তা আমার সচেতন অবস্থান। আমার সচেতনতা: জাতে ওঠা, ও জাতরে নামানো।

৭.
আপনি নিজের জাত ও জাতের আভিজাত্যরে ভাইঙ্গা দিবেন কিনা বা দিতে পারবেন কিনা তা জাতের নিচে থাইকা সম্ভব হবে না। শুরুতে আপনার জাতে উঠতে হবে।

তাই যারা আর্ট-কালচার ও সুবিধাবাদের মাধ্যমে জাতে ওঠার বিরোধী তাদেরকে আমি বলব, অবস্থান পরিবর্তন করেন।

তা করতে না পারলে আপনি যখন জাতের নিচে আছেন আপনি প্রকৃতপক্ষে জাতের স্বার্থপর একজন হিসাবে জাতের নিচে বইসা উঁচু জাতের দালালি কইরা যাইতেছেন।

যেমন দেখবেন অনেক গরিব শ্রমিক কারখানা মালিকের স্বার্থরেই নিজের স্বার্থ বিবেচনা কইরা অন্য গরিবদের প্রতিহত করে।

এমনটা কইরেন না। জাতের নিচে হাঁটু গাইড়া জাতের প্রাইড ধারণ কইরেন না। জাতে ওঠেন। আর্ট-কালচার থিকা শুরু কইরা যার যা আছে তা নিয়াই ওঠেন। উইঠা জাত ভাঙতে শুরু করেন।

৬/৭/২০২১

Leave a Reply