প্রাণদুর্ভিক্ষ

জিল্লুর রহমান (৯.৩.১৯২৯ - ২০.৩.২০১৩)
জিল্লুর রহমান (৯.৩.১৯২৯ – ২০.৩.২০১৩)

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচজন খুনিকে প্রাণভিক্ষা দিতে পারলেন না। কিন্তু তিনি কি চাইলেই প্রাণভিক্ষা দিতে পারতেন?

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামওয়ালা রাষ্ট্রে ইসলাম প্রাণের প্রতি সংবেদনশীল; এ ব্যাপারে মুসলমানরা কেবল আল্লাহতালার উপরই নির্ভরশীল। ফলে প্রাণভিক্ষা দেওয়া না দেওয়া অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রাণভিক্ষা দানের বিষয়টি শিরকের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সংকটের মধ্যে থাকে। আমি এখনও ইসলামি চিন্তাবিদ হইয়া উঠতে পারি নাই তাই এই ব্যাপারে ইসলামি বুদ্ধিজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি।

যদি প্রাণভিক্ষা দিতে না পারেন তাইলে রাষ্ট্রপতি কী দিবেন? তিনি আদালতের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল করতে পারেন। সেটি তাঁর রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসাবে এখতিয়ার। তাতে কি প্রাণভিক্ষা ঘটে না। না ঘটে না। তাতে কেবল একটি নির্বাহী কার্যক্রম সাধিত হয়। ইসলামি রাষ্ট্রে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসাবে রাষ্ট্র কর্তৃক বিধিবদ্ধ একটি নিয়মিত কার্যক্রম সাধিত হয়। প্রাণের মালিকানা তৈরি হয় না।

আপনারা জানেন ক্ষমাভিক্ষার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির অভ্যাস রয়েছে। তিনি এই তো সেদিন একজন ১৬ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামীর দণ্ড মওকুফ করেছেন। সাধু! কিন্তু প্রাণের ব্যাপারে তিনি তেমন মওকুফ দেন না, দেখা গেল।

২.

প্রাণদণ্ড আল্লাহর নামে দেওয়া হয়। যেমন আল্লাহর নামে কুরবানি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসিও আল্লার নামে দেওয়া হইছে। ইমাম সাহেবের ছবিটি নিশ্চয়ই দেখছেন পিআলোতে।

কিন্তু আল্লাহর নামে প্রাণভিক্ষা দেওয়া চলে না। প্রাণের মালিক একচ্ছত্র আল্লা। মুষ্টিভিক্ষা আল্লাহর নামে দেয়া যায়। আপনি বলবেন মুষ্টির মালিকও তাইলে আল্লা! সব কিছুরই মালিক আল্লা বটে। কিন্তু তিনি মানুষরে কিছু দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের হক দিয়া দিছেন। জানের হক দেন নাই। যে কারণে ইসলামে জানের মালিকানা সে অর্থে মানুষের নাই। যে কারণে ইসলামে আত্মহত্যা ব্যাপারটা পাপ।

৩.
প্রাণ সংহার বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে মডার্ন মানুষদের আপত্তি আছে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সম্পাদক মতিউর রহমান দেখলাম ফাঁসির পক্ষে আবাহন করছেন। তিনি ‘ন্যায়বিচারের জয়’ নামের খবরে লিখছেন, “আমরা চাই সব ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর হোক।”

প্রথমত, তিনি মনে করেন এটি ন্যায়বিচার হয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণার পর বিচার-কে ন্যায় বা অন্যায় বিচার বলা যায় কিনা সেটি এক প্রশ্ন। দুই, ন্যায়বিচার হইলে তা কি ন্যায়বিচারের জয় হওয়া বলা যায় কিনা? একদা বামপন্থীর এই ফাঁসির পক্ষে সম্পাদকীয় লৈখন কি ট্রান্সকম গ্রুপকে একটি টিভি চ্যানেল হাতে ধরাইয়া দিবে না, এই আওয়ামী লীগ আমলেই? দেখা যাক।

সকল প্রকার হত্যা ও মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আমার সোচ্চার মত জানাই। আমাকেও কি একটি টিভি চ্যানেল দেওয়া যায় না? আমি সেখানে শুধু প্রধানমন্ত্রী সঙ্গীত গাইব।

২৮/১/২০১০

 

Leave a Reply