“হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের করা হাতুড়িকে আজ হানো।
প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।।”(হে মহাজীবন / সুকান্ত ভট্টাচার্য )
সুকান্তের এই লেখারে যদি কেউ মাক্সবাদী বিপ্লবের হাতিয়ার মনে করে তাতে সমস্যা দেখি না। বিশুদ্ধ সমাজতাত্ত্বিক প্রেরণা থিকাই সকল বিপ্লব সাধিত হয় না।
গরিবের পেটের ক্ষুধারে না বুইঝা বা ভুল বুইঝাও কবিতা লেখা যাইতে পারে। কবিতা বিশুদ্ধ অনুভূতির তল্পিবাহক না, বরং কবিতা যে অনুভূতি বাজারে বা গরিবের হৃদয়েও নাই তাও সঞ্চার করতে সক্ষম।
চমৎকার ও মেবি রোমান্টিক ঘরানার ছোট্ট এই কবিতাটির জন্য বড় ভাই সুকান্ত ভট্টাচার্যকে নমস্কার!
২.
কোনো মধ্যবিত্ত যখন গরিবের বিপ্লবী কাব্য না লেইখা মধ্যবিত্ত ভাবধারায় রোমান্টিক কাব্য লেখবে সেইটা অধিকতর সৎ অনুভূতির অভিপ্রকাশ হওনের সম্ভাবনা হাজির রাখে। গরিবের পেটের ক্ষুধা তার মাথায় চাঁদকে রুটি বানাইয়া খাইয়া ফেলতে চায় কিনা এই তুলনামূলক মনস্তাত্ত্বিক বিচার কবিতা বিচারে কোনো জরুরি বিষয় না।
৩.
সুকান্ত তাঁর এই কবিতায় “কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি” বলার পরেও কেন আরো কবিতা লেখছিলেন তেমন কেরানিসুলভ জিজ্ঞাসা যেন আমাদের সাহিত্যবোদ্ধাদের আলোড়িত না করে–এই আবদার রইল। কবিতার এলাকা আর একটু ভিন্ন ধরনে কাজ করে। ইশতেহার হিসাবে কবিতা না পড়বেন যেন, ভাই গরিবদরদী সমালোচকবৃন্দ।
২৯/৬/১৩