ধর্মীয়গোষ্ঠীর প্রতি অ-সহানুভূতিশীল কিন্তু বিরুদ্ধে না যারা

জিপ্লাসে একজন সাপ্তাহিক পত্রিকায় দেওয়া ফরহাদ মজহারের সাক্ষাৎকার (‘চিন্তা করা মানেই প্রথাগত এবং বদ্ধমূল মতকে প্রশ্নাত্মক করে তোলা’) পড়বেন কি পড়বেন না তা নিয়া ছুৎমার্গ দেখাইতে গিয়া বললেন, “কিন্তু ফরহাদ মাজাহারের দর্শনের সাথে আমি খুব একটা পরিচিত নই। অনেকে তাকে ধর্মীয়গোষ্ঠিদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে লিখেন। আমি আসলে কনফিউজড এই ব্যাপারে।”

আমি আর এইখানে তাঁর নাম বলতে গেলাম না। কিন্তু এই কনফিউশন অনেকের কাছে আর কনফিউশনও না। নিশ্চিত জ্ঞান। তো, যদি ফরহাদ মজহার ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল তো তাঁর লেখা আর পড়া যাবে না! বা যারা নিজেরাই ধর্মকর্ম তাদের লেখাও আপনারা পড়বেন না তাইলে? ধর্মগ্রন্থ যে আর পড়বেন না তা বোঝাই যাইতেছে।

২.

“ধর্মীয়গোষ্ঠিদের প্রতি সহানুভূতিশীল” না যারা তারা কাদের প্রতি সহানুভূতিশীল? যারা ধর্মীয় গোষ্ঠী বইলা একটা অবস্থানরে চিহ্নিত করে তারা প্রথমত জামাত শিবির বা তৎকালীন বা এখনকার পাকিস্তানপন্থীদের সঙ্গে ধর্মপালনকারীদের এক কইরা দেখে। এই দেখইন্না গোষ্ঠীর পক্ষেই ফরহাদ মজহাররে “ধর্মীয়গোষ্ঠিদের প্রতি সহানুভূতিশীল” বইলা চিহ্নিত করা সম্ভব। অর্থাৎ তারা নিজেরা ধর্মের বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠী তাইলে।

কিন্তু জিগাইয়া দেখেন ধর্মের বিরুদ্ধে হেরা একটা লাঠি কেন কলমও ধরবে না! তো এরা হইলেন ধর্মের-বিরুদ্ধে-না কিন্তু সহানুভূতিহীন গোষ্ঠী। যে গোষ্ঠী ধর্মের বিরুদ্ধে-না পক্ষেও-না সে গোষ্ঠী কি “ধর্মীয়গোষ্ঠিদের প্রতি সহানুভূতিশীল”? না কেন? বিরুদ্ধে না যাওয়াটাও তো সহানুভূতিই। অর্থাৎ ‘ধর্মীয়গোষ্ঠীর-প্রতি সহানুভূতিশীল’ একটি গোষ্ঠী ‘ধর্মীয়গোষ্ঠীর-প্রতি সহানুভূতিশীল’ আরেক গোষ্ঠীর দর্শন ধাঁচের লেখা পড়তে চায় না। সংক্রমণের ভয়?

এখন এই ধর্মীয়গোষ্ঠীর-প্রতি তথাকথিত অ-সহানুভূতিশীল কিন্তু আদৌ বিরুদ্ধে-না গোষ্ঠীর অবস্থান কীরূপ? তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্রদের শিক্ষার ব্যাপারে তাদের মত হইল এই শিক্ষা বন্ধ কইরা দেওয়া উচিত। মানে উচিত শব্দটা এইখানে এই রকম যে রাষ্ট্র তাদের হইয়া কাজটা করবে। রাষ্ট্ররে তারা স্বৈরাচারীর ভূমিকায় চায়। তারা নিজেরা গণতন্ত্রী থাকবে কিন্তু মামারবাড়ির রাষ্ট্রটি অপরাধীদের খুন করবে আর মোল্লাদের সাইজ করবে তবে তো দেশে প্রগতিশীলতা আসবে। তো আমেরিকান মডেলের এই গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করে তারা ফরহাদ মজহাররে বলে “ধর্মীয়গোষ্ঠিদের প্রতি সহানুভূতিশীল!” ফরহাদ মজহার বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক মানুষ। ফলে কেবল প্রগতিশীলতার মোহে বা সহানুভূতিতে তিনি আটকা পড়েন নাই। তিনি যা বলেন বা বলছেন তা খণ্ডন করলেই তো হয়।

৩.

তো মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের কথা শুইনা যখন মাদ্রাসা ছাত্ররা স্কুলের শিক্ষা বন্ধ করতে যাবে তখন রাষ্ট্ররে নিজের আব্বার সম্পত্তি ভাইবা প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা বলবে এরা জঙ্গি, এরা পশ্চাৎপদ, এদের আমেরিকান দ্রোন বিমান দিয়া মাইরা ফেলাও! ইত্যাদি। মাদ্রাসা ছাত্ররা আন্দোলন করতে আসলে পুলিশের হাতে গুরুতর আহত হইলেও পুলিশের কাজ নিয়া এই সচেতনরা কিছু বলবে না। কারণ তারা এই মাদ্রাসা ছাত্র বা মোল্লা মৌলবীদের ভয় পায়, কিন্তু আশা করে কোনো দৈব উপায়ে এরা খারিজ হইয়া যাবে! কিন্তু সে গুড়ে বালি। ধর্মপন্থীরা বাচ্চা নেয় বেশি। অল্প বয়সে বিয়া করে। ফলে তারা বাড়তেছে। এই বাড়ন্ত শ্রেণীর আশা আকাঙ্ক্ষা অধিকার নিয়া কেউ কথা বললে তারে স্রেফ ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল বললে হবে না। সে আসলে জনতার স্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ। সে জাস্ট ভাগ কইরা দেখতে শিখে নাই। যারা সত্যিকারের মানুষ, যারা আসল মানুষ… এমন ভাগ সে করতে শিখে নাই। আপনাদেরও তা করা কর্তব্য না। নাকি কর্তব্য?

৪.

যারা ধর্মীয়গোষ্ঠীদের এই দেশ থিকা উচ্ছেদ করতে চান তারা অসম্ভব কল্পনায় মত্ত। আপনেরা ধর্মীয়গোষ্ঠীর প্রতি অ-সহানুভূতিশীল হইলে কি ফরহাদ মজহারের লেখা না পড়লেই হইবে না, ফাইট দিতে হবে মোল্লাদের সঙ্গে–কিন্তু প্রগতিশীলদের নফসে কি ওই জোর আছে, ভাইয়েরা আমার? সুতরাং রাষ্ট্রের সকল সাধারণের অধিকার মান্য করতে হবে। এবং চেষ্টা কইরা দেখেন স্কুল না মাদ্রাসা কোন জিনিসরে আপনে শাসকের জায়গায় রাখবেন। নাকি ওইটা এতদিনে ঠিক হইয়া গেছে। ঠিক কীসের ভিত্তিতে ঠিক হইল?

৫.

এইটা ঠিক যে মাদ্রাসার লোকরা ক্ষমতায় আসলে আপনাদের ধইরা ধইরা মসজিদে খাড়া করাবে, কম্যুনিস্টদের খতম করতে থাকবে, নারীরে বস্তার মইধ্যে ঢুকাইয়া ফেলবে… কিন্তু সেই জুজুর ভয়ে আপনারাই যদি মোল্লাদের ধইরা ধইরা আল্লার নারাজী পথে নিয়া যান, পুলিশ, যুবলীগ আর ছাত্রলীগ দিয়া তাদের সাইজ করেন আর প্রগতিশীলতার বস্তার মধ্যে ঢুকাইয়া ফেলেন… আপনারা কি তাদের থিকা আলাদা কিছু করতেছেন? আদৌ?

১১/৭/২০১১

Flag Counter

1 Comment

Add Yours →

Leave a Reply