হে ভাস্কর্য, তুমি কি মূর্তি? (২০০৮)

[লেখাটা লিখছিলাম সামহোয়ার ইন ব্লগে। লেখার পরে কমেন্ট লিখতে গিয়া আমার মনে হইছিল, বাউল বা লালনপন্থীদের মূর্তি বানানো ঠিক না। কারণ তারা নিজেদেরে মূর্তি আকারে দেখতে চান না। তারা না চাইলেও যে তাদের মূর্তি বানানো যাইতেই পারে, এমন চিন্তা অনেক “অ-শুদ্ধতাবাদী”দের থাকতে পারে। আমি এখনও যারা যা চায় না তাদেরে সেই অববাহিকায় দেখাইতে চাই না।

আর মূর্তি ভাঙার এই ছবিটা দেইখা সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’র কথা মনে পড়লো। কেবল ‘প্রগতি’র দেবতাদের নয়, ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ মাদ্রাসা ছাত্রদেরও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। গ্রেট ম্যান। দড়ি ধরে মারো টান। রাজা হবে খান খান। যে সব মূর্তি বা আইকন মানে রাজা সে সব মূর্তি ভাঙো! এইটা আমার চাওয়া না, সত্যজিতের।

আমি রাজার বা বিশেষের মহিমায় আপত্তি রাখি না। / ব্রারা, ১৩/১১/২০১০]

মাদ্রাসাছাত্রদের হুমকির মুখে বিমানবন্দরের সামনে নির্মাণাধীন ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা বাউল ভাস্কর্য ভেঙেছে, তারা সেটিকে মূর্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু একে মূর্তি হিসেবে উল্লেখ করে শিল্পকে অপমান করা হয়েছে।’ (পি আলো)

হাঃ হাঃ হাঃ। (হাসলাম একটু) 🙂

কওমী মাদ্রাসার চালাক ছাত্ররা আবার এইটারে “ভাস্কর্য” বলতেছে না, বলতেছে “মূর্তি”।

হোয়াই।

কারণ, এই দেশে অন্ধকারাচ্ছন্ন (সিইচৌ কথিত) ও আলোকিত (আআসা আবিষ্কৃত) উভয় পক্ষই মূর্তি নির্মাণে অনাগ্রহী। বহু বছর হয় “ভাস্কর্য” নাম দিয়াই “মূর্তি” নির্মাণ চলতেছে।

সময় হইছে মূর্তি নির্মাণের ব্যাপারে সরব হওয়ার। ভাস্কর্যের ব্যাপারেও ধর্মে মূর্তি মোতাবেক নিষেধই আছে। ধর্ম পালন করবেন আবার মূর্তিও বানাইবেন এ চলে না।

তবে মজার ব্যাপার, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং কওমী ছাত্র দুই পক্ষই মূর্তির বিরোধী।

আমি খুশি, কুৎসিত ভাস্কর্য তথা মূর্তি দেখার হাত থিকা আর্ট-এর সমঝদার কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা আমাদের মুক্তি দিতে চলেছেন।

নাগরিকদের সম্মতি ছাড়াই যত্রতত্র ভাস্কর্য/মূর্তি নির্মাণের অধিকার আপনেগো কে দিছে! উন্মুক্ত রাস্তায় আমার দৃষ্টিকে কী পীড়া দিবে না দিবে তা জরুরি বিষয়। মূর্তি ভাইঙ্গা মাদ্রাসা ছাত্ররা তাদের ধর্ম রক্ষার আন্দোলন করতেছে। তাতে আমার সায় নাই। কিন্তু সরকারের উচিত নাগরিকদের সম্মতি লইয়া ফালতু ভাস্কর্য ভাইঙ্গা ভালো ভালো মূর্তি নির্মাণ করা। টেকা খাইয়া বিবিধ মন্ত্রণালয়ের লোকরা খারাপ আর্টিস্টদের যে কাজ দেয় তারও তদন্ত হওয়ার দরকার।

দুইটা ভাস্কর্য তো এই মুহূর্তেই ভাঙা দরকার, বাংলা একাডেমী ভাস্কর্যটা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীম শিকদারের আখাম্বা মরার ভাস্কর্য!

ধর্ম নিয়া কিন্তু প্রগতিশীলরা একটা কথাও কয় না। ডরায় বোধহয়।

হক মাওলা। ফিরা আসুক আবার মূর্তির দিন! আবার ধর্মহীনতার দিন!!

(ফ্রম সামহোয়ার, ১৯/১০/২০০৮ http://bit.ly/bRXb0)

২.
ভাড়ামি বা সার্কাসের মত যদি মূর্তিরে তিনি শিল্প বা আর্টের ময়দানে রাখতে না চান তাইলে মূর্তিরে মূর্তির পাওনা দিতেছেন না বইলা মনে করি। তার এই প্রাপ্য মর্যাদা না দেওয়ার কার্পণ্যরে বিরোধিতা বলতে চাইলাম। মূর্তি ভাঙলেই কেবল মূর্তি বিরোধীতা হয় না নিশ্চয়ই। যদি পজেটিভ ভাবে দেখি তাইলে তারে বলা যায় ভাস্কর্যপন্থী।

আমার কাছে অন্তত যা ভাস্কর্য তাই মূরতি। মাদ্রাসার ভাইরা যদি মনে করেন তাদের ভাঙার যোগ্য জিনিস আছে তাইলে তো তারা ভাঙতে চাইবেনই। সেই ব্যাপারে তাদের চোখে তুলা দিলে লাভ নাই। তারা শিল্পঅন্তপ্রাণ লোকদের মতো কইরা ভাববেন না বইলাই মনে হয়। ভাস্কর্য ভাঙতেও তাদের ভালো লাগার কথা। বরং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হিন্দু ধার্মিকদের পূজার মূর্তিগুলারেই খালি মূর্তি বলতেছেন কিনা ভাবা যাইতে পারে। আর তেমন ভাবতে পারলে এও ভাবা যায় যে উনি মুসলমান ছাত্রদের ওইসব মূর্তির কথা স্মরণ করায় দিলেন। কী সাংঘাতিক! সে রকম হইলে এই বাক্যরে সাম্প্রদায়িক উসকানি বলা যাইতে পারে।

ভাবা দরকার, মূর্তি ভাঙার ইঙ্গিত দেওয়া সত্ত্বেও মাদ্রাসা ছাত্ররা কেন এই দেশে হিন্দুদের পূজার মূর্তি ভাঙতে যায় না কিন্তু বিমান বন্দরের বাউল মূর্তি টাইনা নামাইয়া ফেলায়। হোয়াই?

(নভেম্বর ১৩, ২০১০)

Flag Counter

Leave a Reply