চাই জনপ্রতিনিধি-হীন সরকার-ব্যবস্থা

এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে কোনো ভোটার যে কোনো বিষয়ে নিজেই নিজের ভোট সরকারের কাছে জানাইতে পারেন।

এইটা প্রযুক্তির আশীর্বাদ। একে গ্রহণ করতে হবে।

নব প্রযুক্তির ফলে যে কোনো ইস্যুতে পাবলিকের ভোট গ্রহণ কইরা সরকার চালাইতে কার্যত কোনো জনপ্রতিনিধি আর লাগে না! তবু রাষ্ট্রের অভ্যাস হিসাবে জনপ্রতিনিধি নামের মধ্যস্বত্বভোগীরা রয়ে গেছেন। আরো কিছুদিন হয়তো থাকবেন।

আগে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি লাগতো। জনগণের মূল্যবান মত গ্রহণ করতে দীর্ঘ সময় ও অর্থের দরকার পড়ত। তাই প্রতি ব্যাপারে পাবলিকের ভোট না নিয়া তার প্রতিনিধির মারফতে ভোট গ্রহণ করা হইত। এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতিই চলছে। কিন্তু এখন যেহেতু প্রতি ব্যাপারেই পাবলিকের ভোট প্রায় নিখরচায় ও নিঃসময়ে গ্রহণ করা সম্ভব – সুতরাং তা করতে হবে।

সময়ের বিবর্তনে ডিজিটাল যুগে আইসা ‘জনপ্রতিনিধি’ বিষয়টা একটা গণতান্ত্রিক কুসংস্কারে পরিণত হইছে। পাবলিক যত আগে বুঝতে পারে ততই মঙ্গল।

তাই জনপ্রতিনিধি মূলক সরকার ব্যবস্থার আশু বিলুপ্তি দরকার। বিশ্বব্যাপীই দরকার। বাংলাদেশ থেকে তা শুরু হইতে পারে। এমন সরকার হইলে তা শুধু নামে নয়, কাজেও জনসাধারণের সরকার হবে।

এই সরকার জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তের বদলে দেশব্যাপী ভোটারদের ভোট গ্রহণ করবে। ব্যালট বাক্স ও নানান নখরা বাদ দিয়া যেহেতু আধুনিক প্রযুক্তিতে ভোট গৃহীত হবে তাই এর খরচ হবে নামমাত্র। অধিকন্তু জনপ্রতিনিধি পালবার দরকার যেহেতু থাকছে না তাই তাদের খাতের খরচটুকু সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ডিজিটাল ভোটের পিছনে দেওয়া যাইতে পারে।

২.
প্রজাতন্ত্রে জনগণের সেবক হিসাবে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান থাকতে পারেন। তবে এসকল পদের সঙ্গে যেহেতু রাজরাজরা মার্কা উচ্চম্মন্যতা ও গর্বমূলক সাইকোলজিক্যাল সম্পর্ক আছে এবং এই সমস্ত পদের অধীন পেশাজীবীদের প্রায়শই ঘোড়ারোগ দেখা দেয় তাই এ সমস্ত পদের জনসম্পৃক্ত নামকরণও প্রয়োজন হবে।

৩.
সংসদে এখনও জনসাধারণের প্রতিনিধি আছেন, অধিকাংশই লুটপাট করেন, তাদের নাম সংসদ সদস্য বা সাংসদ। এরা জনপ্রতিনিধি হইলেও প্রায় কেউই জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। অধিকাংশই দলের প্রতিনিধি হিসাবে সরকাররে নিঃস্ব কইরা ফেলেন; আগে নবাব আর রাজারা যেমন করতেন।

তবে কেবল লুটপাটের কারণেই ওনাদের বিদায় দেওয়ার দরকার তা নয়। যেহেতু ওনাদের আর লাগছে না তাই খোদাহাফেজ!

৪.
সরকার যেহেতু জনগণের সরকার এরে সর্বাংশে জনগণের সরকার প্রতিপন্ন করাই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আমিও তাই চাই। আপনাদেরও চাওয়া উচিত। আপনারাও আওয়াজ তুলুন:

চাই জনপ্রতিনিধিহীন সরকারব্যবস্থা!

৫.
আমার প্রস্তাব, এখন ব্যক্তির বা ভোটারের সরাসরি অংশগ্রহণ মূলক নতুন সরকার ব্যবস্থা কায়েম করার টাইম আসছে। ক্ষমতাবান, বিরোধী ক্ষমতাবানরা তা চাইবেন না, নিজেদের স্বার্থে। পাবলিকের চাইতে হবে, পাবলিকের স্বার্থ।

নতুন যুগে পাবলিকের স্বার্থ আর কোনো দলের হাতে নাই। তা পাবলিকেরই হাতে।

তবে জনপ্রতিনিধি ব্যবস্থার অবলুপ্তির কারণে রাজনৈতিক দলের অবলুপ্তির দরকার নাই। বিভিন্ন দল বা নেতৃবৃন্দ মতামত তৈরির জন্য থাকবেন। তাদের বসার জন্য কোনো সিংহাসন বা সংসদ থাকবে না! এমনকি বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক দলও গঠিত হইতে পারে। যারা নিদিষ্ট এলাকার স্বার্থে দল গঠন করবেন।

৬.
নতুন ধরনের সরকারের ব্যাপারে পাবলিকের কাজ করতে হবে। কাজ বলতে এখনই ছোট ছোট ব্যাপারে ডিজিটাল ব্যবস্থায় জন ভোটাধিকার প্রয়োগ শুরুর জন্য কথা বলতে হবে। সরকারকে রাজি বা অভ্যাস করাইতে হবে। অভ্যস্ত হইতে থাকলে সরকারগুলি ধীরে জনপ্রতিনিধি ব্যবস্থার প্রয়োজনহীনতা বুঝতে শুরু করবে।

যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পাবলিক মত গ্রহণ আর আগের মত ভোটবাক্সে আবদ্ধ থাকার ব্যাপার নাই। পাবলিক এখন নিজেই সরকার চালাইতে সক্ষম।

৩০/১২/২০১৩

Flag Counter

Leave a Reply