১.
প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের বাসায় লইয়া গেছিলেন ছফা ভাই। ওনাদের কথাবার্তা রেকর্ডও করছিলাম। সেগুলা প্রায় অনুদ্ধারণীয় হইয়া আছে। ভিতর বাড়ি থিকা বাকরখানি আর গরুর গোশত আসছিল। উনি তখন লিটু সাহেবের গুলশান দুই নাম্বারের বাসায় থাকতেন। পরে আর ওনারে দেখি নাই আমি। খালি রাজ্জাক স্যার মরার পরে হন্তদন্ত হইয়া ছফা ভাই ফোন করছিলেন। আরো কারে কারে জানি সঙ্গে লইয়া আমরা মরদেহ দেখতে গেছিলাম। গুলশান আমেরিকান ক্লাবের কাছের এক বাড়িতে। ওইখানে অনেকে আসছিলেন। তার কয় বছর পরে তো ছফা ভাইও মারা গেছিলেন।
২.
রাজ্জাক সাহেবরে লিভিং এনসাইক্লোপেডিয়া হিসাবে দেখনের চিন্তা বা প্রোজেক্টের ধারণাটা ধারণা করি ছফা ভাইয়ের মাথা থিকা আসা। বাজে চিন্তা। রাজ্জাক সাহেব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধির কারণে না। তথ্যরে দেখনের তার নন-এনসাইক্লোপিডিস্ট পদ্ধতির কারণে। যারা তার কাছে তথ্য খোঁজনের লাইগ্গা যাইত এরা সবিশেষ অসচেতন ছিল। তথ্য তো লাইব্রেরিতেই পাওন যায়। রাজ্জাক সাহেবের কাছে ছফা সে রকম তথ্যের কারণে যাইতেন মনে হয় নাই। লাইফ স্টাইল, মুসলিম সমাজরে হিন্দুত্ববাদীতার বাইরে থিকা, নিজের পরিচয়ে দেখনের ব্যাপারে ছফা হয়ত রাজ্জাক সাহেবের কাছে শিক্ষা লাভ করছিলেন। তবে এই শিক্ষা পাওনের সামাজিক পদ্ধতি নিয়া আমার একটু সমালোচনা আছে।
৩.
রাজ্জাক সাহেব নিশ্চয়ই যার যার লগে তার তার প্রকারে মিশতে পারতেন। বড়লোকদের আহলাদের ধন ছিলেন তিনি। কামাল হোসেন, হামিদা হোসেনরা তার কাছে যাইতেন। রাজ্জাক স্যার বাসায় লুঙ্গি গামছা পরতেন বইলা তাদের সমস্যা হইত না নিশ্চয়ই।
যেইটা ভাবার ব্যাপার, হোয়াই ছফার লগে রাজ্জাক স্যারের বাসায় কামাল হোসেন গংদের তেমন সাক্ষাৎ হইত না। রাজ্জাক সাহেব কি চিকনে আশরাফ-আতরাফ আলাদা রাখতেন। কামাল হোসেন বা ঢাকাই এলিটদের সমাবেশ নিয়া ছফার বইয়ে কিছু নাই। (নাকি আছে?) রাজ্জাক সাহেবরে ঘিরা এলিট সমাবেশ তো হইতই। ছফা কি আছিলেন রাজ্জাক সাহেবের গরীব মেধাবী শিষ্যদের একজন। যাদেরে গ্রামাগমিত কাঁঠাল ফলের ন্যায় রান্নাঘরে লুকাইয়া রাখতে হয়? সরদার স্যারও কি তাই আছিলেন রাজ্জাক সাহেবের কাছে?
একটা গল্প মনে পড়ল। আমার এক বন্ধু, এখন বিলাতে থাকেন। ওনাদের ভ্রমণকালীন বাড়ি তখন—১৯৯১/৯২ সালে—রাজশাহীতে। আমি বেড়াইতে গেছি ওনাদের সঙ্গে। একদিন কী এক অনুষ্ঠান হবে বাড়িতে। হাসান আজিজুল হকও বেড়াইতে আসছিলেন। রাজশাহীর এলিট হিসাবে উনি আসছিলেন আশা করি। তো আমার বন্ধু তার কাজিনরে বললেন, দেইখেন রাইসু যাতে আবার নিচে নাইমা না যায়। তো ওই বাড়ির স্থাপত্য এই রকম হাহাকারময় আছিল যে এক রুমের কথা আরেক রুমে ভাইসা আসতো। আমি শুইনা ফেললাম। মন খারাপ হইল না। মনে হইল এইটা ওনাগো ব্যাপার।
ছফা ভাইও বোধ করি ওই রকম কোনো একটা কায়দা কইরা নিছিলেন। যতটুকু পাইতেন তাতে সন্তুষ্ট আছিলেন।
২৫/১/২০০৯
2 Comments
Add Yours →