জুন মাসের ২৩ তারিখে (২০২১) একটা নির্ধারিত লাইভ ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা ছিল ভাষাতাত্ত্বিক ও বুদ্ধিজীবী-দার্শনিক নোয়াম চমস্কির। ইন্টারভিউয়ার ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক তানভীরুল মিরাজ রিপন। ইন্টারভিউয়ার নির্ধারিত সময়ে লাইভে যুক্ত হইতে না পারায় মি. চমস্কি ইন্টারভিউ দিতে অসম্মত হন।
এই প্রত্যাখ্যান লাইভে প্রচার পাওয়ার পর ইন্টারভিউয়ারের সময় সম্পর্কিত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে দেশ ও প্রবাসের সাধারণ বুদ্ধিমান মানুষ ও বুদ্ধিজীবীরা ইন্টারভিউয়ারের নিন্দায় মুখর হয়েছেন।
আমি এই লেখায় দেখাইতে চাইছি চমস্কি কোথায় বুদ্ধিজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইছেন। চমস্কি লাইভ অনুষ্ঠানে আইসা ইন্টারভিউ দিতে না চাইয়া আসলে কী চাইতেছেন?
– ব্রাত্য রাইসু
১.
তানভীরুল মিরাজ রিপন কিন্তু নোয়াম চমস্কির ইন্টারভিউ ঠিকই লইছেন। প্রশ্ন অল্প জিজ্ঞেস করতে পারছেন, কিন্তু এইটাও তো ইন্টারভিউই।
চমস্কি সাব আবারও তারে সময় ঠিক হইলে ইন্টারভিউ দিতে রাজি আছেন দেখা গেছে।
বসাইয়া রাখছেন, টাইম রাখতে পারেন নাই, ইংরাজি ভাষা সাহেবটিকে আমেরিকানদের মতো কইরা বলতে পারেন নাই তানভীরুল মিরাজ রিপন। এতে কিছু যায় আসে না।
চমস্কি কিংবা যেকোনো মহামানবের সঙ্গে এই ধরনের অব্যবস্থাপনা করা যাইতেই পারে। তায় এইটা ফেসবুক লাইভ। এখানে কোনো কিছুই অত কঠিন মিডিয়া ধরনের হবে না। হওয়ার দরকারও নাই।
সোশ্যাল মিডিয়ারে যারা মিডিয়া বানাইতে তৎপর সেই ছাগলেরা রিপন সাবের যেই সব দোষ খুঁজতেছেন তার একটাও কোনো দোষ না।
আর বাংলাদেশের পক্ষ থিকা ইন্টারভিউ নেন নাই রিপন, তিনি নিজের ইন্টারভিউ নিজে নিছেন। সরকারি কর্মকাণ্ড হইলে টাইম ইত্যাদি নিয়া জনসাধারণ হিসাবে গোস্বা করতে পারতেন আপনেরা।
রিপন আবারও চমস্কির দীর্ঘ ইন্টারভিউ নিবেন আশা করি।
২.
চমস্কি সাহেব দেখলাম বুড়া হইছেন অনেক। কাজেই টাইম মেইনটেন না করার কারণে যে রিপনরে ইন্টারভিউ দিতে চান নাই তাতে চমস্কিরে দোষ দেওয়া যায় না।
বয়সের কারণে তারে ছাড় দেওয়া যায়। নয়তো রিপনের জন্যে বইসা থাইকা, যত টাইম লাগুক অপেক্ষা কইরা, ইন্টারভিউ দেওয়া #চমস্কি সাহেবের দায়িত্ব ছিল।
এমনকি রিপন সাব যদি বাংলায় প্রশ্ন করতেন সেইটারে সহযোগীর সাহায্যে অনুবাদ কইরা ইন্টারভিউ দেওয়ার দায়িত্ব থাকে আসলে চমস্কি মহাশয়ের।
কেন?
কারণ অত অল্পেতে বিশ্বের দায়িত্ব নেওয়া যায় না। পিছাইয়া থাকা দেশের কাউরে যখন ইন্টারভিউ দিবেন, আপনার দায়িত্ব তার সমস্যা এবং ড্রব্যাকগুলাও দেখা। নাইলে আপনি চমস্কি কীসের বুদ্ধিজীবী হইবেন?
আপনি পণ্ডিত, তাই কত জানেন সেইটা জানাইবেন, দ্যাট ইজ নট বুদ্ধিজীবিতা।
চমস্কিরা বিশ্বের মঙ্গল করতে বসছেন। অ্যাটিচিউড দেখাইতে বসেন নাই। দেখানও নাই। তিনি ভালো মানুষ।
কিন্তু ফাজিল বাংলাদেশীরা নিজের লোকরে অপমান করতেছে চমস্কির প্রতি উপনিবেশবাদী ভক্তি আর ডেকোরাম থিকা।
এইটা আপনাদের করুণ দশা হে ভৃত্যের দল।
৩.
ইন্টারভিউ না দেওয়ার যুক্তি হিসাবে নির্ধারিত সময়ে লাইভে না আসাকে পয়েন্ট হিসাবে ধরাটা একান্তই পশ্চিমা মানসিকতার ব্যাপার।
ইন্টারভিউয়ারের প্রতি রুড এই আচরণ চমস্কির মতন নিজের খাইয়া বনের মোষ তাড়ানো বুদ্ধিজীবীর জন্যে বেমানান আচরণ।
দুঃখিত বড়ভাই চমস্কি, কত কিছুই না বাকি থাইকা যায় শিখনের।
ঢাকা, ২৪/৬/২০২১
(কমেন্টে আপনার যেকোনো সমালোচনা ও ভিন্নমত লিখুন।)