“স্বাধীনতার পরে শহীদ পরিবার হিসেবে মোহাম্মদপুরে বাড়ি দিল সরকার। তিন দিন পর সেই বাড়িতে রক্ষীবাহিনী এসে হাজির। আমার মতো মানুষরে উচ্ছেদ করতে ট্রাকভর্তি অস্ত্রশস্ত্র আনছে! সুবেদার মেজর হাফিজ আমাদের বাসার পর্দাটর্দা ছিঁড়া ফেলল। অশালীনভাবে আমাদের উচ্ছেদ করল। এ সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়াইল আহমদ ছফা। রক্ষীবাহিনীর অন্যায়ের প্রতিবাদে কেরোসিন ঢাইলা নিজের গায়ে আগুন ধরাইয়া দেওয়ার হুমকি দিল সে।”
– আয়েশা ফয়েজ [হুমায়ূন আহমেদের মা]
১.
ছফা ভাইয়ের এই কেরোসিন ঢাইলা আত্মাহুতির হুমকিরে আমি একটু কম গুরুত্ব দিয়া দেখতে চাই। তিনি ছোট কাজে বড় থ্রেট দিছিলেন। থ্রেট কাজে লাগছিল, কাজে লাগা পদ্ধতি হিসাবে কেরোসিনের টিনের উপস্থিতি ঠিক আছে।
কিন্তু বাড়ি থিকা উচ্ছেদের চাইতেও ঐ আমলের নিত্য ঘটমান বাস্তবতা, রক্ষীবাহিনীর খুন-খারাবির ব্যাপারে কেন তিনি একই থ্রেট দিতেছিলেন না উচ্ছেদের আগে বা পরে? রক্ষকরা কি ঐ উচ্ছেদ বন্ধ করার পরে তাদের কার্যক্রমে ভাটা দিছিল? নাকি আন্তর্জাতিক মণ্ডলী ছফা ভাইয়ের আগুনে পোড়া দেহ দেখতে পাইতো না দূর থিকা যেমনটা থিচ কুয়াং দুকেরটা (ছবির বিবরণ >> থিচ কুয়াং দুক, দি বার্নিং মংক) তারা পাইছিল, ১৯৬৩ সালে–যখন তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নিধনের বিরুদ্ধে আগুন ধরায়ছিলেন আপন শরীরে?
সো এইটা ছিল মধ্যবিত্তের ভাবাবেগজনিত অরাজনৈতিক কাণ্ড। যে মধ্যবিত্ত বাড়িঘরহীন ছোটলোকদের ব্যাপারে থাকে দার্শনিকসুলভ আর আপন শ্রেণীর বেইজ্জতিতে মইরা যাইতে চায়। সেন্টিমেন্ট নির্ভর মধ্যবিত্তের বৃহতের বোধ সঞ্জীবিত হইছে এই রকম ছোট ছোট অরাজনৈতিক মহত্ত্ব দিয়া। এই ধরনের মহত্ত্বের বিচার রাজনৈতিক বিবেচনা সহযোগেই করা উচিত।
২.
ছফার গুরুত্ব এইখানে যে উনি আগুন ধরান নাই গায়ে, হুমকি দান পর্যন্ত ছিলেন। তার ভক্তেরা তখন সামনে থাকলে নিশ্চয়ই গায়ে আগুন না দিয়া উপায় থাকতো না! তিনি কদ্যপি মহত্ত্বের জন্যে বা মহাত্মা হওয়ার জন্য কিছু করেন নাই। তিনি যেহেতু মহৎ হওয়ার জন্যে তা করেন নাই সেই জন্যেই তিনি মহৎ–এমন বলার লোকেরও অভাব হবে না! সমাজে মহতের দরকার, ছফা তার বলি হইতেছেন।
তাই মহত্ত্বের ভক্তেরা যখন দেখে ছফার সেই মহত্ত্ব আর নাই তখন তাদের প্রজেক্ট আটকায়া যায়। বাট ছফা ইজ বেটার ছফা উইদাউট হিজ সো কলড মহত্ত্ব টহত্ত্ব। ছফা সাধারণ মানুষ হিসাবে চমকপ্রদ ছিলেন, সেই ছফাকে তারা চায় না। ছফা নামখানিতে রবীন্দ্রনাথ আনয়নের জন্যে তার সকল কিছুতে মহত্ত্ব মিশানো দরকার হইয়া পড়ে। ছফাকে বাঙালি মুসলমানের রবীন্দ্রনাথ বানানোর কোনো প্রয়োজন নাই। তাতে রবীন্দ্র সমালোচনায় বরং ছাড় পড়তে পারে থ্রু ছফার সমালোচনাহীনতা।
৫ আগস্ট ২০১২