সংস্কৃতির কোনো বিধিবদ্ধ অনুসরণীয় রূপ নাই।
যা গ্রামে আছে, যা গ্রামে চলে, যা গরিবের তাই আমাদের সকলের সংস্কৃতি, তাই চালাইতে হবে—এমন ভাবার কিছু নাই। পরিবেশ প্রভাব অভাব ইত্যাদি কারণে কালচার ঘটতে থাকে।
আমরা যারা শহরে থাকি তাদের পক্ষে শাক কুড়ানো সম্ভব ব্যাপার না। আমরা শাকপান্তার বদলে পান্তাইলিশ খাইলে সংস্কৃতির খেলাপ হবে না। এমনকি গ্রামে বইসা শাক না কুড়াইয়া পান্তা-ইলিশ খাইলেই বা সমস্যা কী?
যতদূর জানি, জাটকা খাওয়ায় কোনো অপরাধ হয় না (স্বাদ নাই বটে!)—কিন্তু জাটকা ধরলে অপরাধ ঘটতে থাকে।
ফলে মাছ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চেষ্টা থাকবে কীভাবে আমরা শহরের ইলিশ-পান্তায় আগ্রহী নাগরিকরা পয়লা বৈশাখে জাটকা না খাইয়া ইলিশ খাইতে পারি তার যোগান দেওয়ার।
যদি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে মাছ ধরা নিষেধ থাকে তাইলে সরকার চেষ্টা করবে সরকারী টাইমে না-জাটকা ইলিশ ধইরা রপ্তানি কম কইরা আমাগো পয়লা বৈশাখের মাছের যোগান ঠিক রাখার।
আইন বিরোধী ব্যাপার (জাটকা ধরা) মানেই অনৈতিক ব্যাপার (জাটকা খাওয়া)—এ প্রপাগান্ডা সরল মূর্খদের সমাজে চলতে পারে। আমরা শহুরে শিক্ষিত শ্রেণী। পান্তা ও ইলিশ খাওয়ায় সক্ষম নাগরিক। গরিবে ইলিশ খায় না তাই মোরাও ইলিশ খাবো না—আমাদের কেন তেমন ভাবতে হবে? উপরন্তু, পান্তা জিনিসটা ভোর অব্দি ভাত সংরক্ষণের আদিম একটা রূপ, এর সঙ্গে গরিবির কোনো সম্পর্ক নাই।
গ্রামে অনেক অবস্থাপন্ন লোক পান্তা খায়। ফ্রিজ আসনের পরে শহরের লোকেরা আর তেমন কইরা খায় না।
আমরা গরিবে পান্তা খায় তথাপি পান্তা খাইব, গরিবে ইলিশ খাইতে পায় না তবুও ইলিশ খাবো। শুধু পয়লা বৈশাখ না, যাতে সারাবছর ইলিশ মাছ ভক্ষণ করতে পারি সরকারের লক্ষ্য তেমন থাকা উচিত।
বৈদেশিক মুদ্রা নিয়া আসে এমন রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ব্যাপারে সরকার ও বুদ্ধিজীবীরা নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করবে, তাতে কান দেওয়া ঠিক হবে না।
সংস্কৃতির একটা গুণ অপর গোষ্ঠির ইচ্ছার প্রকাশরে রুদ্ধ না করা। যদি জাটকা খাওয়া একটা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি—প্রকৃতির খেয়ালে—দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম বিভাগেই—তৈয়ার হইয়া যায়—আমরা যেন তাদের আদর কইরা জাটকা খাইতে দিতে পারি। পাঠশালার পণ্ডিতদের মতো ‘এই না’ ‘সেই না’ তো অনেক হইল!
১৫/৪/২০১১
1 Comment
Add Yours →