মুক্ত মত প্রকাশের প্রসঙ্গ ধরে ব্লগিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি [তৌফিক ইমরোজ খালিদী] বলেন, “আমি সবিনয়ে বলতে চাই, মত প্রকাশের নামে যা ইচ্ছা তাই প্রকাশের আমি বিরোধিতা করি। মত প্রকাশ করতে হবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে। আর তা প্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া জরুরি।”
তার মতে, কোনো ব্যক্তির নামে কল্পকাহিনী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো কথা ব্লগ কিংবা ফেইসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ অনুচিত।
“এটা এক ধরনের অপরাধ, আর এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সরকারকে অবশ্যই নতুন আইন করতে হবে। স¤প্রতি শীর্ষ পর্যায়ের এক রাজনীতিকও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তার সঙ্গে আমি একমত, আর এত দিন ধরে তা না করার দায় রাজনীতিক হিসেবে তারও স্বীকার করতে হবে,” বলেন তিনি।
– ‘দায়িত্বহীন মুক্তমত নয়’ / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম / ২০/১২/২০১১
তৌফিক ভাইয়ের বিনয়টুকু গ্রহণ করলাম। মতের বিরোধিতা করি। প্রথম কথা হইল, যা ইচ্ছা তাই প্রকাশের নাম মতপ্রকাশ নয়। কিন্তু যা ইচ্ছা তাই প্রকাশের একটা ক্ষেত্র তৈরি হইছে, এর নাম ব্লগ। এই প্রকাশনা রুদ্ধ করা যাবে না। এইটা বিশ্বসমাজের নতুন ভাব, গ্রহণ না করলে দেশ হিসাবে ব্যবসা ও রাজনীতিতে ধরা খাইয়া থাকতে হবে। ব্লগরে পত্রিকার লগে মিলাইয়া দেখার বোকামি সরকারের শীর্ষ পর্যায়গুলি করবে না আশা করি।
ব্লগ মিডিয়া হিসাবে পত্রিকার মতো পাবলিক মিডিয়া না। এইটা সোশ্যাল মিডিয়া। যেমন ফেসবুক একটা সোশ্যাল মিডিয়া। এইখানে দায়িত্বশীলতার চাইতে পারস্পরিক মতামত বিনিময়ের মধ্য দিয়া দায়িত্বশীল অ-দায়িত্বশীল নির্বিশেষে সব ধরনের প্রকাশনার ব্যাপারে সহনশীলতা তৈরি হয়। ব্লগরে দায়িত্বশীল হইতে বলা আর ফেসবুক জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়ারে কর্তব্যপরায়ণ হইতে বলা একই কথা। কোনো কোনো দেশ যেমন ফেসবুক ইত্যাদি বন্ধ কইরা দিছে, এই পরামর্শ তেমনই। ফেসবুক বন্ধ না কইরা ব্লগ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব ব্যাপার। ফলে ইউনূস নিয়া বেকায়দায় পড়া এই আওয়ামী সরকার ফেসবুক বন্ধ করতে চাইবে কিনা দেখার বিষয়।
কেবল শোনার বা দেখার বা পড়ার ভার ব্লগারদের নাই। তাই কোনো ব্লগার এইখানে দায়িত্বশীল না হইলেও অসুবিধা হয় না। নেহায়েত মন্তব্যকারীও এইখানে সেই দায়িত্বহীনতা খণ্ডন করার দায়িত্ব নিতে পারে। এইখানে পত্রিকার মতো আপাত শেষকথা বলার অবকাশ নাই। কাজেই দায়িত্বশীলতা যেই অভিভাবকত্বের বার্তা দেয় সেই সন্দেশ ব্লগারভক্ষ্য নয়।
পত্রিকাগুলা নিজস্ব ফোরাম তৈরি কইরা তার নাম দিছে ব্লগ। এখানে পত্রিকাশৃঙ্খলার আন্ডারে ব্লগ কায়েম হইছে। যেহেতু পত্রিকার নিজের ব্লগ সেইখানে প্রথমত যা ইচ্ছা তাই প্রকাশ করা যায় না; উপরন্তু মতপ্রকাশ প্রেস অ্যাক্টের আইনি শৃঙ্খলার মইধ্যে করতে হয়। অ-পত্রিকা ব্লগগুলা সেই অধীনতার মইধ্যে পড়ে না। কিন্তু যেহেতু পত্রিকার অফিসপালিত ব্লগগুলার চাইতে অ-পত্রিকা ব্লগ স্বাধীনতা তথা অ-দায়িত্বশীলতার কারণে অতি-জনপ্রিয় হইয়া উঠতেছে এখন পত্রিকার ব্লগ লেজহীন বান্দর দশায় নিপতিত হইছে। এবং সে কারণে পত্রিকাগুলার একটা মাথাব্যথা হইয়া দাঁড়াইছে ব্লগগুলারে নিয়ন্ত্রণ করার।
পত্রিকার যা কাজ ব্লগের তা না। যে দায়িত্ব ব্লগের নাই, সে দায়িত্বশীলতারও তার দরকার নাই। তথ্য মন্ত্রণালয় বরং বিচার কইরা দেখতে পারে পত্রিকা আইনের মইধ্যে ব্লগ পুষতে দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা। ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলার স্বাধীন প্রকাশনার জন্য জাতীয় দৈনিক বা মিডিয়ার পোষা ব্লগগুলি ক্ষতিকর হইয়া উঠতেছে।
আমি ২০০৮ সালে লেখছিলাম `প্রথম আলো ব্লগ শুরু করলে কী কী ঘটতে পারে?’–তাতে লেখছিলাম “ব্লগ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করার মারফতে পিআলো বন্ধুসভা উপযোগী ব্লগীয় কানুন প্রতিষ্ঠা করবে। যার জের টানতে হবে সকলের।”
এখন বিডিনিউজ ব্লগ তৈরির পর একই অ্যাকশন শুরু করলো। ব্লগার সাবধান!
২১/১২/২০১১