রবীন্দ্রগোঁজামিল

ভাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে এই জোড়াতালি গানটি লিখেছিলেন।

 

সন্ত্রাসের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান।

সংকটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ।

মুক্ত করো ভয়,

আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।

দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো,

নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো।

মুক্ত করো ভয়,

নিজের ‘পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।

ধর্ম যবে শঙ্খরবে করিবে আহ্বান

নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিয়ো প্রাণ।

মুক্ত করো ভয়,

দুরূহ কাজে নিজেরি দিয়ো কঠিন পরিচয়।

(রচনাকাল: ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬)

 

আহা কী দুর্বল এই গান! গানের বাণী অনুসরিলে এর লেখকরেও রক্ষাকল্পে আগাইয়া যাইতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু তিনি অলরেডি অ-ভবলীলায়িত।

রবীন্দ্রনাথের আমলে বানান নিয়া শুচিতা প্রায় সকলেরই আছিল। শুচিবাইগ্রস্ত ব্রাহ্মণদের প্রভাব মেবি! তাই তাঁরও বানান সঠিক রাখার কসরৎ অত্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু তুলনীয় ভাবে লক্ষণীয় তাঁর চিন্তার গোঁজামিল। ভাইবা দেখা দরকার পুরা বাংলা তাল্লুকই এই রকম কাছা-আলগা আছিল কিনা। লালনে, পরমহংসে ভিন্নতা থাকা বাঞ্ছনীয়, কারণ অ-হীনম্মন্যতা। কিন্তু ছোট আত্মার বাঙালীরা গোঁজামিল আর পরিশুদ্ধতায় এখনও অগ্রসরমান।

যা নিয়া বলতেছিলাম। এই গানে রবীন্দ্রনাথ কী করতেছেন?

‍‍”আপনা-মাঝে শক্তি ধরো” বলতেছেন।

কে শক্তি ধরবে?

যে দুর্বল, যার শক্তি নাই বইলা প্রতীয়মান হয়, নাকি? তো সেই দুর্বলরেই আবার রবি আহবানিছেন, “দুর্বলেরে রক্ষা করো”; কী ঘটতেছে তাইলে? দুর্বলরে বলতেছেন, তারে রক্ষা করার লোক আছে। যদি দুর্বলরে অন্যে রক্ষা করবে তাইলে সেই দুর্বলরেই “আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়” বলার কারণ কী? যিনি দুর্বলরে রক্ষা করতে বলতেছেন, তিনিই, সেই দুর্বলরেই, আবার আপনা মাঝে শক্তি ধরতে বলতেছেন। মানে কিছু দুর্বল আপনা মাঝে শক্তি ধইরা অন্য দুর্বলদের রক্ষা করবে। বাস্তবে এমন হয় অবশ্য। কিন্তু প্রেরণা মূলক গানে সব দুর্বলরেই শক্তি ধরতে দিতে আপত্তি কেন! কিছু দুর্বলরে কেন শক্তিমানদের অপেক্ষায় ওয়েটিং লিস্টে হোয়াইয়া রাখা। নাকি গান লিখতে হইব, তাই লিখছিলেন?

অর্থাৎ রাজ্যের দায়িত্ব তিনি নিয়া নিছিলেন। এরে বলে জমিদারি চিন্তা। জমিদারের চিন্তা জমিদারি মূলকই হবে!

২.

“যা খুবই স্বাভাবিক ও সরল” ভাবনা তাতে গোঁজামিল থাকেই সচরাচর। কারণ মিলানোটাই সেইখানে প্রধান। আপনি একজনরে বলবেন, হে, তুমি শক্তি ধরো, তারপরে যে শক্তিমান তারে গিয়া বলবেন ঐ যে অই দুর্বলটা অইটারে রক্ষা করো। তখন রবীন্দ্র প্রভাবিত শক্তিমান রবীন্দ্র নির্দেশিত দুর্বলরে রক্ষা করতে আসবে।

কিন্তু তাতে লাভ হবে না, কারণ রবীন্দ্র প্রভাবিত দুর্বল তো অন্যের দ্বারা রক্ষা পাইতে চায় না, সে আপনা মাঝে শক্তি ধরতে চেষ্টা করতেছে।

জুন ১৯, ২০১০

 

Leave a Reply