রাষ্ট্রপতি ‘খুনী’ বিপ্লবরে ক্ষমা করায় ভালো মানুষেরা রাগ হইয়া গিয়া জিগাইতেছেন তিনি কি তার স্ত্রীর হত্যাকারীদেরও ক্ষমা করতে পারতেন! কীমাশ্চর্যম! রাষ্ট্রপতি যদি ক্ষমা করার যোগ্যতাই রাখেন তাইলে তিনি যারে খুশি তারেই ক্ষমা করতে পারেন। কেবল ভালো মানুষদের ক্ষমা করবেন বইলাই রাষ্ট্রপতিরে ক্ষমা করার ক্ষমতা দেওয়া হয় না।
২.
রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে যে কাউকে যখন খুশি ক্ষমা করতে পারেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণার কোনো বিচার সম্ভব না, সুতরাং তা সব সময়ই প্রশ্নহীন ভাবে আইনসঙ্গত কর্ম। একে প্রশ্ন করার অর্থ আইনকে নৈতিকতার জায়গা থিকা প্রশ্ন করা। তা নীতিসঙ্গত হইলেও আইনসঙ্গত না, বরং আইন বহির্ভূত বিচারের দিকে জনমণ্ডলীরে ধাবিত করে এমন সমালোচনা।
হয় আমরা রাষ্ট্রপতিরে চাই বা চাই না, কিন্তু তার পক্ষ থিকা যে ক্ষমা ঘোষণা তারে প্রশ্ন করা যাবে না। বরং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণার এখতিয়াররে রদ করার ব্যাপারে কথা বলা যায়।
৩.
আদালত আইনগত ভাবে ও দেশের মানুষ নৈতিক ভাবে যারে ক্ষমা করতে রাজি না রাষ্ট্রপতি তারে ক্ষমা করতে পারেন। এইখানেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরমতা। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার কারণে ঐ অপরাধী রাষ্ট্রীয় ভাবেই নিষ্পাপ বা মাসুমে পরিণত হন। আগে অপরাধী যাই ছিলেন না কেন রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষমার কারণে তিনি ভিন্ন একটি ব্যক্তি। তার উপর আগে কৃত অপরাধের দায় প্রযুক্ত করাটা বিবেক বা ধর্মসম্ভূত হইতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র তারে পতির মারফতে ক্ষমা কইরা দিছে। রাষ্ট্রের এই ভেলকিবাজিরে মন্দ বলতে হইলে রাষ্ট্ররেই মন্দ বলতে হয়। রাষ্ট্র গঠনের মূল জিনিসপাতি এই রকম ভেলকির উপরই দণ্ডায়মান।
এই ক্ষমতা যেন রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রস্বামী প্রয়োগ না করেন এমন আবদার করা যাইতে পারে। কিন্তু কোনো ঘটনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা একটি নিখাদ আইনি কর্ম, এতে নৈতিকতারে দাওয়াত দেওনের সুযোগ নাই। কারণ ঐ ধারার ভিতরেই আছে যে তিনি নৈতিকতা ফৈতিকতার বাইরে গিয়াই ক্ষমা করতে পারবেন। তাই ঐ আইনি নির্দিষ্ট ক্ষমাকর্মটিকে নৈতিক ভাবে সমালোচনা করার অর্থ নাগরিকরা আইনরে পাশ কাটাইতে চাইতেছে। এই সমালোচনা রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা যেন তিনি কেবল ভালো ভালো উদাহরণ সৃষ্টিতে ব্যবহার করেন এমন পক্ষপাতে বন্দি।
আল্লাই একমাত্র ক্ষমার ক্ষমতা রাখেন এমনতর ধর্মীয় চিন্তায় যারা নিজেদের সমর্পন করছেন তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমারে সমালোচনা করবেন তো বটেই।
২৭/২/২০১২