সাসটেইনেবল ‘ইভ টিজিং’ কেন উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

যে দেশে—মানে আমগো সোনার বাংলায়—নারীর উন্নয়ন দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত সেইখানে এনজিও তরফে গণমাধ্যম অ্যাকটিভ রাখতে পারে এমন ‘ইভ টিজিং’ চলতে দেওয়াটা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয়তা। মনে রাখতে হবে, এই দেশে গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের মালিকের বউরা নিতান্তই এনজিওঘনিষ্ঠ—বেগবান!

তো, নারীর আন্তর্জাতিক উন্নতির মহীসোপানের সামনে বাধা হইয়া থাকা ধর্মীয় লোকাল কাঠ-আব্বাগো সাইজে রাখনের জন্য ‘ইভ টিজার’দের সামাজিক উপস্থিতি এই দেশে নেসেসিটি। তারা না থাকলে নারীর শত্রু মাত্র হইয়া থাকে ধর্মপ্রাণ জাগ্রত মুসলমান। তাতে কী হয় তার উদাহরণ পাকিস্তানে আছে, আফগানিস্তানে আছে। ফলে নারীর ধীর ও সাসটেইনেবল উন্নতির জন্য তৃতীয় একটা পক্ষ দরকার যার উপস্থিতিতে ধর্মের মালিকেরা খানিক হাইবারনেশনে থাকবে।

আমাদের দেশে ‘ইভ টিজার’রা সে উপস্থিতি হিসাবে মর্যাদা লাভ করছে। সো, ধর্মের মালিকগো পাশ কাটাইয়া পরিবারের কুলীনতার জন্য নমনীয় ধর্মীয় অনুশাসন চালু রাখতে ইভ টিজাররা একটা হাতিয়ার বটেই। কিন্তু এই পর্দামতি নারী সমাজরে কি কর্পোরেট দুনিয়া নিজের কইরা পাইতে চায় না?

অবশ্যই চায়। পর্দা মানেই শসতা। পর্দা মানেই নিশ্চিতি।

‘ইভ টিজার’রা কেবল কোমলমতি নারীরই শত্রু না, তারা উপরে উপরে পর্দাপ্রথা তথা ধর্মমালিকগোও বিরোধী পক্ষ।

‘ইভ টিজিং’য়ের শিকার নারীরা যা চায় না তার নাম প্রথমত অকৌলিন্য বা বেইজ্জতি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রেণীগত ভাবে নিচের দিকের এমন বখাটের দ্বারা অনিচ্ছুক নারী সেক্স ও প্রেমের প্রস্তাব পাইতে থাকে। এতে নারীর আত্মগ্লানির উদ্ভব ঘটে।

তখন সম্মান রক্ষার্থে নারী আত্মহত্যা করে। (অন্য ধরনের আত্মহত্যা তো আছেই। তার লিস্ট আপনারা দিবেন।)

ফলে ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে নারীর অভিভাবকগো সামাজিক আন্দোলনে ধর্মমালিকগো নিরব সম্মতি থাকে। তারা নারীর ক্ষমতায়ণের বিরুদ্ধে এই ‘ইভ টিজার’ উপদ্রুত সময়ে অ্যাকশনে যায় না। ‘ইভ টিজার’গো লগে ফাইট দিতে দিতে বাংলার নারী এক সময় ক্ষমতায়ণ প্রক্রিয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার চাহিদা মোতাবেক দক্ষ শ্রমিক হইয়া উঠতে পারবে আশা করা যাক। আর তাতে ধর্মরক্ষাকারীদের আক্রোশের শিকার হইতে হবে না নারীর—যেমনটা পাকিস্তানে হয়; বা আফগানিস্তানে।

২.

‘ইভ টিজিং’ বিরোধী আন্দোলন নারীর ‘মা’, ‘বোন’, ’কন্যা’, ‘সাধ্বী’ ইত্যাদিসহ একগামিতা বা কুমারীত্ব রিলেটেড পুরুষতান্ত্রিক ভাব বা আদর্শগুলারে সামাজিক ভাবে রক্ষাও করে, পুনপ্রতিষ্ঠাও দেয়।

এবং ইউরোপ-আমেরিকার উন্নয়ন কর্ত্রীরা এশিয়ার নারীর জন্য শ্রমিক নারীর উপযোগী ধর্মীয় সম্ভ্রম নিশ্চিত রাখতেই আগ্রহী, তা ছাইটা ফেলার চাইতে। অর্থাৎ ধর্মও থাকবে, পুরুষ-নিয়ন্ত্রিতও থাকবে আবার শ্রমিকও হবে।

কর্পোরেট দুনিয়া দেখছে গরিব মুসলমানের দেশে এইটাই ভালো।

পয়সাও কম দিতে হয়, কামও করে।

ইন্দোনেশিয়ায় দেখেন, মালয়েশিয়ায় দেখেন—‘ইভ টিজিং’ নাই, পর্দা আছে। শস্তা দক্ষ নারীশ্রম আছে। (নারীশ্রম শস্তা মানে পুরুষের শ্রমও শস্তাই থাকবে!) কর্পোরেট দুনিয়ার শস্তা শ্রম চালু রাখবে পর্দাবান মুসলমান মেয়েরা—আর নারীর বহুগামিতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরুষতন্ত্র শ্রমের শস্তা অবস্থার নিশ্চয়তা দিবে।

ফলে ‘ইভ টিজিং’ বিরোধী আন্দোলনে এনজিও ফান্ড হাজির আছে কিনা তা জানার আগ্রহ রইয়া গেল।

৩.

‘ইভ টিজার’রা মূলত নোংরা কোকিল। যারা নারীকে বিপথগামী করতে চায়, বহুগামিতার ডাক দেয়।

এবং কিশোরী নারী যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক পরিবারের বহু অনুশীলনে ঋদ্ধ একটি ‘প্যাকেট’ বিশেষ, যে তখনও এমনকি একগামিও হইতে পারে নাই—ধর্ম আর পরিবার তার সতীত্ব রক্ষা কইরাই চলতেছে ভবিষ্যৎ উপযুক্ত হাসবেন্ডের জন্য—সে কোকিলের প্ররোচনা, ডাক বা স্পর্শমাত্র আত্মহত্যা কইরা পরিবারের ইজ্জত বাঁচানোয় প্রাণ সমর্পণ করে।

কী দুঃখজনক!

ইভ টিজিং বিরোধী এই আন্দোলন, নারীর হ্যারাসমেন্টরে যৌন অপরাধ না দেখাইয়া দেখায় সামাজিক সমস্যা আকারে।

এবং এর আশু ফলাফল হইল রাস্তায় বা প্রতিষ্ঠানে বা মাঠে বা ঘাটে তরুণীরা কীভাবে চলবে না, হাঁটবে না, দৌড়াবে না, বইসা পড়বে না, হুইয়া পড়বে না—তার এক সামাজিক কলা আবিষ্কৃত হয়।

টিজারদের নামে ধর্মীয় ও রক্ষণশীল মূল্যবোধগ্রস্ত পরিবার, পরিবারের বাপ আর ভাইয়েরা তরুণীদের যৌবন অদৃশ্য কইরা দিতে চায়। বরং এক টিজারের বদলে হাজার আগ্রহী টিজার নিবারণকারীর সামনাসামনি হইতে হয় নারীর। তার উপরে আছে আত্মহত্যার জন্য পত্রিকা আর পরিবারের সন্নিহিত চাপ।

পাড়ার তরুণদের, রকবাজদের ভদ্র না হওয়ার যে অধিকার আছে তা খর্ব করা ঠিক হবে না।

একই ভাবে কোনো তরুণী বা তরুণের কাছে যদি বিদ্যালয়ের সামনে বা চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো কোনো তরুণ বা তরুণীরে ভালো লাইগা যায় তার জন্য সমাজরে রাস্তার ঐ অংশটুকু বরাদ্দ দিতে হবে।

টিজার, হুজুর আর অভিভাবক-টিজারদের হাতে পথের দাবি ছাইড়া দেওয়াটা ঠিক হবে না।

বরং পরিবারই সমস্যা। এবং পত্রিকাগুলা।

এই পরিবার আর পত্রিকা গুনগুনায় ইভ টিজিং-এর শিকার মেয়েদের আত্মহত্যা করা কর্তব্য—আত্মহত্যা করা কর্তব্য! আত্মহত্যায় খুব গৌরব।

এবং যে কোনো মূল্যে নারীকে তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কুমারীত্ব বা সম্ভ্রম বজায় রাখতেই হবে।

সম্ভ্রম গেল তো এখন আত্মহত্যা কর!

নাইলে সমাজে মুখ দেখানো যাবে না।

সমাজের এই চোখ দুইটা (পরিবার আর পত্রিকা) ঠিক করন দরকার আগে। যেখানে আমাদের সকলেরই মুখ দেখাইতে হয়।

২৬/১১/২০১০-২৬/৬/২০১১

Leave a Reply