সেরীন ফেরদৌস, নৈতিক সাংবাদিকতা আর না হউক! (২০১০)

[২০১০ সালের এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে সম্পাদক ও সাংবাদিক সেরীন ফেরদৌস তাঁর পত্রিকা নতুন দেশ-এর একটি লেখায় তাঁর ফেলে যাওয়া পুরোনো দেশের কবিদের প্রতারণার চিত্র তুইলা ধরছেন। তিনি লেখাটা ফেসবুকেও আপ করছেন। ‘একজন রোকন সাকুরের প্রতারণার চিত্র’। বস্তুত এই রোকন সাকুর কোনো রোকন সাকুর নন, অন্য লোক। তাকে এই নামে বরণ করলেন সেরীন। সেরীনের এই অপরাধ সাংবাদিকতা নিয়াই আমার লেখা। তাঁর ফেসবুক ওয়ালে কমেন্ট হিসাবেও দিছিলাম। সেরীনের পত্রিকায়—যতদূর দেখা গেল—লেখাগুলা আর পাওয়া যাচ্ছে না। শুরুতে সেরীন ফেরদৌস-এর লেখা। পরে আমার। ব্রা.রা.]

একজন রোকন সাকুরের প্রতারণার চিত্র / সেরীন ফেরদৌস

রোকন সাকুর (পরিবর্তিত নাম)। লুঙ্গি পরিহিত গামছা কাঁধে তাগড়া এক তরুণের অবয়বটাই অনেককেই কৌতূহলী করে তোলে তার ব্যাপারে। তার উপর হৃদয় ছুয়েঁ যাওয়া এমনসব কবিতার লাইন ফেইসবুকে নিয়মিত আপলোড করেন যা তার ব্যাপারে আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দেয়। রোকন স্মার্ট, যে কোনো তরুণীর এই আগ্রহটা সে সহজেই ধরে ফেলতে পারে। পরের খেলাটাতো তারই নিয়ন্ত্রণে!

কবিতায় প্রলুব্ধ করে প্রবাসী নারীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার সংঘবদ্ধ যে চক্রটি নতুনদেশের অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত হয়েছে রোকন সাকুর তার মধ্যে অন্যতম। ফেইসবুকে পোষ্ট করা কবিতাগুলোয় যেসব নারী মন্তব্য করেন, রোকন তাদের প্রোফাইলটা ভালোভাবে দেখে নেন, প্রবাসী নারীদের মন্তব্যের জবাব কখনো লেখেন ‘ওয়ালে’ কখনো লেখেন ইনবক্সে, শুরু হয় সম্পর্ক-পাতানোর খেলা। কথার মারপ্যাঁচে ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলো জেনে নিয়েই শুরু হয় পরবর্তী এপিসোড, টাকা-পয়সা হাতানোর খেলা।

রোকন সাকুরের প্রতারণার শিকার সিডনিতে বসবাসকারী ৩৫ বছর বয়স্কা আফিয়া পারভীন (আসল নাম নয়) একটি পুত্র সন্তানের জননী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার আগেই বছর দশের আগে বৈবাহিক সূত্রে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিয়েছে সে। বিদেশে আসার পরপরই সন্তানের জননী হয়েছেন তিনি। আফিয়ার সঙ্গে ফেইসবুকে রোকন সাকুরের পরিচয় ঘটে ২০০৯ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। পরিচয়ের পর থেকেই রোকন আফিয়াকে কবিতা ট্যাগ করতে শুরু করে এবং রোকনের কবিতা সম্পর্কে আফিয়ার একান্ত নিজস্ব মন্তব্য ইনবক্সে শুনতে চায়। গৃহবধু আফিয়া নিজেও এককালে কবিতা লিখতেন, সংসারের চাপে যা উড়ে গেছে বহু আগেই। আবারো কবিতার প্রতি আগ্রহী হয় আফিয়া। ধীরে ধীরে দু-চার কলম লিখতেও শুরু করে। তরুণ ও অবিবাহিত রোকন ‘বন্ধুত্বে’র ছদ্মাবরণে আফিয়ার নানা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এক পর্যায়ে আফিয়ার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে। আফিয়াও তাতে সায় দেয়। ফোন একতরফা আফিয়াই করে, কেননা সে জানে, অনর্গল সিগারোট-ফোঁকা রোকনের কোনো নির্দিষ্ট আয় নেই। কথাবার্তা চলতে থাকে এভাবে-
‘চাকরি-বাকরি খোঁজো না কেন?’
”কারো…অধীনে থাকতে মন চায় না। স্বাধীনমতো চলবো। রিয়েল কবিরা কারো অধীনে থাকে না।’
‘সংসার চালাও কেমনে?’
‘চইল্যা যায়। এলিফ্যান্ট রোডের বাসা ভাড়া ১৫ হাজার টাকা, অন্যান্য খরচ ১৫ হাজার টাকা। ঠেইকা তো থাকি না। তবু কারো … (লেখার অযোগ্য)ত্যাল দিই না। হা হা হা…।’

আফিয়া ফেসবুকে সত্যি সত্যিই দ্যাখে ফাইন আর্টস ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা এই তরুণের যশ, খ্যাতি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠ-বসের ছবি, তার কবিতার প্রতিক্রিয়ায় ভক্তদের আবেগের আতিশয্য- যার মধ্যে নারীর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। ঠারে-ঠোরে কবি (!) জানাতে ভোলেন না যে, তার প্রতি অন্যান্য নারীরা কতোটা আগ্রহী। আফিয়ার কালো রূপের প্রতি কবির প্রশংসাবাক্য, স্তুতিবাক্য শুনে গলে যায় আফিয়া। মুখে মুখে রোকন টাকা উপার্জনকে যতোই পরোয়া না করুক, আফিয়াকে সে ঠিকই জানিয়ে দিয়েছে যে ২০০৬ সালে বানানো শেষ হওয়া ছবিটি সেন্সরবোর্ডে আটকা পরে আছে। সেই ছবিটি রিলিজ করার জন্য, দেশে দেশে প্রচার করার জন্য প্রচুর টাকা দরকার। নতুন ছবি বা নাটক বানাতেও ভালো ‘প্রফেশনাল’ ক্যামেরা দরকার! তা না হলে ছবির আউটপুট ভালো হবে না। সে আফিয়াকে বলে, ‘তোমার তো দেশে আসতে অনেক দেরী, ছবিটা রিলিজ করাতে পারলে অষ্ট্রেলিয়াতে ছবি নিয়া আমিই আসবো তোমাকে দেখতে। শুধু টাকা ম্যানেজ হলেই সব হযে যাবে।‘ আফিয়া টের পায় কবির (?) রোমান্টিক ভাবনায় ছন্দপতন ঘটাচ্ছে টাকার চিন্তা।রোকনও প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না টাকার চিন্তাটা ভালবাসার ভাবনার গতিকে খানিকটা থামিয়ে দিচ্ছে। আফিয়া একদিন একটি খামে করে পাঁচশো ডলার টুক দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এক প্রতিবেশীর হাতে চালান করে দেয় রোকনের নামে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে সমযে রোকন সাকুর আফিয়াকে ক্যামেরা কিনতে উদ্বুদ্ধ করছে, একই সময়ে নিউইয়র্কের জনৈকা ‘আপু’র কাছে কমপক্ষে ১০০০ আমেরিকান ডলার দামের প্রফেশনাল ক্যামেরা দাবি করেছে, কানাডার স্কারবরো’র ‘সুইটি’ কবে ডিজিটাল ক্যামরাটি কারো হাতে পাঠাতে পারবে সে খোঁজ নিচ্ছে, সাকুরের বন্ধু গাতক ‘সোহেল’ (আসল নাম নয়)এর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের চিন্ময়ী (আসল নাম নয়) ভিডিও ক্যামেরা কিনছে। নিউইয়র্কের আপু জানতে চায়, ‘ঠিক কোন ধরনের ক্যামেরা তোমার দরকার। কোন কোন প্রফেশনাল সুবিধাসহ বলতো?’ উত্তর আসে, ‘আরে, তুমি যেটা ভালো মনে করবা সেটাই আনবা, একটু দামী হইতে হইবো আর কি!’

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, প্রথম কিস্তি টাকা পাবার পর আফিয়ার প্রতি তরুণ কবির(?) প্রেম আরো গদগদ হয়ে ওঠে! মাছ তাহলে টোপ গিলেছে! এবার খেলার পালা! ফোনের তার বেয়ে রোকনের তরল কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, ‘আমার ইদানিংকার যাবতীয় কবিতারই প্রেরণা তুমি’। আফিয়ার জীবনে চরম উত্তেজনা নেমে আসে রোকনের কল্যাণে। এক নিষিদ্ধ আনন্দ, ভয় আর উত্তেজনায় কাঁপে আফিয়া। তার একঢাল কালো চুলের প্রশংসা শেষবার কবে শুনেছে স্বামীর কণ্ঠে মনে করতে পারে না সে। কিন্তু ফেসবুকে দেখা এই চুলের গভীরে রোকন প্রতিরাতেই মুখ লুকিয়ে ঘুমুতে যান!

তবে রোকন অকপট, খোলামেলা তার কথাবার্তায়, চালচলনে। ফেসবুকে অনর্গল কবিতা পোস্ট করা ছাড়াও নারীদের গলায়, কাঁধে হাত দিয়ে, নিজেকে গামছায় আর বসন্তের রঙে রাঙিয়ে নিত্য ছবি পোস্ট করতে সে কিছুতেই ক্লান্ত নয়। আফিয়াকে জানায়, সে নিয়মিত মাদকদ্রব্যে আসক্ত, যদিও আফিয়া একটু হেল্প করলেই সে এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। রোকনকে আফিয়া নেশা করার বদলে সিনেমা দেখতে যেতে বলে, ভালো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে বলে, ঢাকার বাইরে গিয়ে ঘুরে আসতে বলে। ‘একান্ত বাধ্যগত’ রোকন রাজীও হয়, কিন্তু জানাতে ভোলেনা যে, তাতে তো টাকার দরকার। মাঝে মাঝে কবি মাতাল অবস্থায়, উত্তপ্ত অবস্থায় আফিয়াকে ফোন করতে বলে…।

ইনবক্সে কবি(?) আফিয়ার মেধা ও রূপেরই শুধু প্রশংসা করে না, মাস্টার্সটা কমপ্লিট করতে বলে, আফিয়াকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহ দেয়। পাশাপাশি আফিয়ার কবিতার ‘গ্রামার ঠিকঠাক’ করে দেয়, আফিয়াও ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু-বান্ধবের প্রশংসা পায।
ইতিমধ্যে অক্টোবরে রোকন অসুস্থ হয়ে পরে। তার বাসায় তাকে দেখাশোনার কেউ নেই, জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে থাকে সে। অস্থির হয়ে ওঠে আফিয়া, আহারে!

১। তুমি কাউকে বাসায় আনিয়ে নাও। ঠিকমতো ওষুধ খাও।

২। আমি নড়তে পারছি না, ওষুধ কে কিনবে, কে খাওয়াবে। ঘরে টাকা-পয়সাও নেই।

৩। আমি তোমার টাকার ব্যবস্থা করছি। তুমি আমার কাজিন খালেদা’র কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে আসবে। খালেদার সঙ্গে আমি ফোনে কথা বলে রাখছি। কোনো অসুবিধা নেই।

যথাসময়ে রোকনের ‘চ্যালা’ গিয়ে খালেদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসে। আফিয়া তার ওষুধ খাওয়ার সময়গুলো নিজের রান্নাঘরের ক্যালেণ্ডারে লিখে রাখে। ফেসবুকে, ফোনে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সে রোগীকে ওষুধ খাওয়ার সময় হলে ডাকে। আফিয়া ‘নি:স্ব’ ব্যক্তিটিকে নিয়মিত টাকা পাঠাতে শুরু করে কাজিনের মাধ্যমে।

রোকনের যেহেতু নির্দিষ্ট আয় নেই, আর আফিয়ারও নেই, সঙ্গতভাবেই আফিয়ার স্বামী একদিন প্রবলভাবে সংসারের খরচের ব্যাপারে আফিয়াকে প্রশ্ন করে। ভীতা আফিয়া রোকনকে জানায়, সে আর টাকা পাঠাতে পারবে না শীঘ্র। এ সংবাদে রোকনের প্রেমে খুব দ্রুত ভাঁটা নেমে আসে। আফিয়ার ফোন সে ধরে না, চ্যাটিংয়ে আফিয়াকে দেখলে দ্রুত সটকে পরে, ’ওয়াল’ আর ‘ইনবক্স’ শূণ্য। আফিয়ার চারিদিক অন্ধকার দ্যাখে, ফোন ঘুরায় বাংলাদেশে। শুরু হয় অভিযোগ এবং তর্ক। রোকন পরিষ্কার আফিয়াকে আর বিরক্ত করতে না করে দেয়। আফিয়া তাতেও নিবৃত্ত হয় না, কাজিন খালেদাকে রোকনের ঠিকানায় পাঠায় খোঁজ-খবরের জন্য। রোকন এইবার খালেদাকে পেয়ে আফিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ফাঁস করে দেয় এবং বলে আফিয়া একটি ‘উন্মাদ’ মহিলা। এও বলে, আফিয়া যদি আরো …অংকের টাকা তাকে দিতে না পারে, তবে আফিয়া যেন তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তাকে আর না জ্বালায়! যদি এরপরও তাকে জ্বালায়, তবে সে আফিয়ার স্বামীর কাছে আফিয়ার যাবতীয় মেইল এবং ফেসবুক মেসেজ প্রকাশ করে দেবে। তার নাকি হারানোর কিছু নেই, কারণ সে কাউকে ‘পোছে না’। মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আফিয়া এই পর্যায়ে ভারসাম্য হারাতে শুরু করে।

আফিয়ার ঘটনার সূত্রধরে নতুনদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯ সালের শেষের দিকে একইসঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াএবং যুক্তরাষ্ট্রের তিন শহরের তিনজন নারীর সঙ্গেই একই মাত্রায় সম্পর্ক চালিয়ে গেছে এবং নিয়মিত দামি উপহার এবং টাকা পয়সা নিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত ২রা এপ্রিল ২০১০ রাতে রোকন মাথা ব্যথার কথা বলে একই সময়ে তিন শহরের তিনজনের কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কযেক মিনিটরে ব্যবধানে তিনজনকেই সেই একই ডায়ালগ দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত আগের নিউজ পড়তে ক্লিক করুন- কবির প্রতারণার ফাঁদে প্রবাসী নারী

ফেসবুক নোটের লিংক: একজন রোকন সাকুরের প্রতারণার চিত্র


 

দুই.

সেরীন ফেরদৌস, নৈতিক সাংবাদিকতা আর না হউক!
ব্রাত্য রাইসু

প্রভুকে ভিক্ষা দিতে সবার হৈল মন

– শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, কৃষ্ণদাস কবিরাজ (আনুমানিক ১৫৩০-১৬১০)

সেরীন ফেরদৌসের এই সাংবাদিক গদ্যে রোকন সাকুরের প্রতারণা দেখা গেল না।

ভিক্ষাবৃত্তি দেখতে পাইলাম বটে। বাংলার কবিরা এখনো ভিক্ষা করতে পারতেছেন এইটা ভালো লাগলো। ভিক্ষা অপরাধ না। প্রতারণাও না। পঙ্গু না হইলে, অন্ধ না হইলে ভিক্ষা করন যাইব না, কে কইছে?

আর সম্পর্কও কেবল স্বর্গীয় না, ইহা অর্থনৈতিকও। অর্থনৈতিক ভাবে সমান না এমন প্রাণীরা যখন সম্পর্ক করে তখন অর্থ নিম্নগামী হয়। এইজন্য সমান টেকাপয়সা অলা লোক সমান টেকাপয়সা অলাগো লগে মিশে। নাইলে মিশতে গেলে কিছু দিয়া নিতে হয়। আমরা যদি ফোনালাপ করতে চাই, সেরীন ফেরদৌসের পয়সা বেশি থাকলে উনিই করবেন। আমার থাকলে আমি করব। মেয়েদের কাছ থিকা পয়সা চাওয়া যাইব না, এইটা পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা। খালি বিবাহিত বৌরা বিবাহিত স্বামীদের কাছ থিকা পয়সা নিবে… তাই রে! নাই রে!! নাই রে!!!… এই ঘটনা তো অনেক দিনের।

তো পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা কি নারীর কাছ থিকা অর্থ গ্রহণরে প্রতারণা হিসাবে দেখতেছে? নইলে বিবাহিত নারীরা যখন স্বামীর কাছ থিকা মানি নেয় সেইটাও প্রতারণা হওনের কথা আছিল। বৈবাহিক সম্পর্কের দোহাই-এ অর্থগ্রহণের প্রতারণা। কিন্তু তাতো হয় না। সমাজে টাকা চাওয়াটা এখনো দোষের হইয়া ওঠে নাই। ভিক্ষাবৃত্তির উপরে পুরা বৈষ্ণব সাহিত্য দাঁড়াইয়া আছেন। তবে কবিদের আত্মা বড় হইছে:

“‘ঠিক কোন ধরনের ক্যামেরা তোমার দরকার। কোন কোন প্রফেশনাল সুবিধাসহ বলতো?’

‘আরে, তুমি যেটা ভালো মনে করবা সেটাই আনবা, একটু দামী হইতে হইবো আর কি!’”

(এতে প্রতারণা নাই। পছন্দের বালাই আছে। দেওয়ার চেয়ে নেওয়াটা কঠিন–রোকন যে নিতে পারেন এইটা তার খোলা মনের লক্ষণ। রুচির বলি তিনি হন নাই। বরং যারা দিয়েছিলেন, তারা যখন নিজেদের দেওয়া নিয়া আজ অনুযোগের জোতা মারতেছেন তারা নিজেদের বিষ নিজেরা গ্রহণ করতেছেন। রুচিগত ভাবে আমার নিজের রুচিতে এ বড় নিম্ন হয়। কিন্তু রুচি সাবজেক্টিভ। আইন আর নীতি দেখি বরং।)

তো টেকা নেওয়ায় দোষ নাই বইলাই সমাজে দেখি। পরপুরুষে বা পরনারীতে আসক্তিতেও সেরীন দোষ ধরতেছেন না পরহেজগারদের মত। তিনি প্রতারণা নিয়া নৈতিক সাংবাদিকতা করতেছেন। হায় (হে) আল্লাহ, প্রতারণা হইতে মানহানি ভয়ঙ্কর, তুমি জানো কি?

ফলে নিচের কোশচেনগুলা জাগ্লো মোর মনে:

প্রশ্ন ১. পয়সার বিনিময়ে প্রেম করা প্রতারণা কিনা? বা প্রেম করার পরে পয়সা চাওয়াটা প্রতারণা কিনা? বা পয়সা না দিলে আর প্রেম না করতে চাওয়াটা প্রতারণা কিনা?

প্রশ্ন ২. এক সঙ্গে একাধিক গৃহবধূর সঙ্গে প্রেম থাকাটা প্রতারণা কিনা? যখন গৃহবধুরা গৃহবরদের প্রতারণা করা ছাড়াই (!-?) অন্যের সঙ্গে প্রেমমূলক থাকতে পারতেছেন?

প্রশ্ন ৩. নৈতিক/দার্শনিক প্রশ্ন: যদি কেউ প্রতারণাও করেন সামাজিকভাবে তার সম্মানহানি করা যায় কিনা? আরো গভীর ভাবে, যিনি অন্যের সম্মানহানি করেন তার সম্মানহানি করা যায় কিনা? ব্যক্তিগতভাবে কৃত প্রতারণার শাস্তি হিসাবে সামাজিক ভাবে অসম্মান করাটা আপনাদের নৈতিকতা আদৌ অ্যালাউ করে কিনা?

বাই। পরবাসী পরনারীদের প্রতি ভালোবাসা।

ঢাকা, ১৬/৪/২০১০

Leave a Reply