মিডিয়াস্টার লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক মাহফুজ আনাম কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকা মাহফুজ আনামের কন্যা তাহমিমা আনাম-এর এ গোল্ডেন এজ বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রকাশে আজকের পিআলো পত্রিকায় যে সংবাদ বর্ণনা দিয়েছে তা তেমন খারাপ কিছু না। পরে যাতে বিবিধ মিডিয়া মালিকরা আপনাপন ছেলেময়ের যশোগাথা আপনাপন মিডিয়ায় যথাযথ শক্তিমত্তায় প্রকাশ করতে পারেন সে কারণেই এটি এখানে নথিভুক্ত হলো।
লেখাটি প্রথম আলোর সাংবাদিক ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর। নিচে তুলে দিচ্ছি, তাহমিমা আনাম-এর অংশটুকু:
`প্রিয়তম,
আজ তোমাকে বলতে এসেছি আমাদের যুদ্ধের কথা আর কিভাবে আমরা বাঁচলাম সে কথা।
আজ যুদ্ধ শেষ হবে। আমি হাজার বছর পেরিয়ে এসেছি। নিজেকে কদর্য আর শ্রান্ত লাগছে। কিন্তু আমি বেঁচে আছি। ছিয়ানব্বই দিন একজন মানুষ ছিল আমাদের বাসায়।…দেশকে রক্ষার জন্য ওর ভেতরে এমন এক ধরনের গোঁ ছিল যা যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে সোহেলের চোখে আমি ধিকিধিকি জ্বলতে দেখেছি।’
এ উদ্ধৃতি তাহমিমা আনামের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা উপন্যাস এ গোল্ডেন এজ-এর বাংলা সংস্করণ সোনাঝরা দিন-এর শেষ পরিচ্ছেদের। আন্তর্জাতিক পাঠক মহলে শোরগোল ফেলে দেওয়া এ বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে গতকাল একুশে বইমেলায়। সোনাঝরা দিন মেলায় এনেছে সাহিত্য প্রকাশ।
’আমার বইয়ের মাধ্যমে সারা দুনিয়াকে আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা জানিয়েছি। তবে বাংলাদেশে এসে বইটির কথা নতুন করে বলতে পেরে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে। মাতৃভাষায় বইটি প্রকাশ করতে পারাটা ভীষণ আনন্দের একটা ব্যাপার।’ বলছিলেন তাহমিমা আনাম।
সোনাঝরা দিন-এর মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইংরেজির মতো বইটির বাংলা সংস্করণও ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ’আমি গর্বিত, কারণ আমার মেয়ে তার লেখার বিষয় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে বেছে নিয়েছে।’
২.
লক্ষণীয়, মিডিয়া স্টার তার গুরুত্বপূর্ণ লেখক-সাংবাদিকদের দিয়া তাহমিমা আনামের রিপোর্টিংটা করাইতে পারে নাই। আনিসুল হক, সাজ্জাদ শরিফ, জামিল বিন সিদ্দিক* বা এমনকি জাফর আহমেদ রাশেদও এই রিপোর্টটা করতে রাজি হন নাই বা রাজি ছিলেন কিন্তু মেলা নিয়া রিপোর্ট করার যে অশুভ সাহিত্যিক চক্র সেইটাতে হয়তো ইকবালেরই দায়িত্ব পড়ছিল। হায় ইকবাল! হায় অসহায় মিডিয়া মালিক ও তার তরফে সম্পাদক! অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ একজনরে দিয়া এই রিপোর্ট করাইতে বাধ্য হইছে তারা। কথা হইল হোয়াই? কেন গুরুত্বপূর্ণ কইরা তোলা সাংবাদিক তথা লেখকরা প্রকাশকের মেয়ের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সংবাদভাষ্য লিখতে রাজি হইল না। এইটা লেখা উচিত ছিল স্বয়ং সম্পাদকের। কারণ আমরা দেখছি রাষ্ট্রীয় তথা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিতে সম্পাদক কেমন সাড়া দেন! আর এইটা হইল একটা আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির তথা না-জানা বা কম-জানা মুক্তিযুদ্ধরে বিশ্বের দরবারে হাজির করনের বাংলা অনুষ্ঠান।
যাই হউক, তাহমিমার জন্য আমার আন্তরিক স্নেহ রইল। ভবিষ্যতে যাতে তিনি তার পিতার রাহুচক্র তথা আনিসুজ্জামান-প্রথম আলো গং থিকা নিজেরে আলাদা করতে পারেন। যদিও ইকবাল তাঁর উপন্যাসের যে অংশটা উদ্ধৃত করছে তা নেহায়েত ফালতু জিনিস, তথাপি নিশ্চিতই তিনি ভালো উপন্যাস লেখছেন। নাইলে কি আর বিশ্বসাহিত্যে তথা আন্তর্জাতিক পাঠক মহলে শোরগোল ফেলাইয়া দেওন যায়। এক তসলিমা তাঁর বোকা বোকা লেখা দিয়া এই রকম শোরগোল ফেলছিলেন। আজ তাঁরেও স্মরি। তবে তসলিমা দেখতে ভালো না। তাহমিমার বইয়ের ব্যাক কভারের ছবি আমাকে আকর্ষণ করে। প্রচ্ছদও।
সাহিত্য প্রকাশের রুচিময় প্রকাশক মফিদুল হক-এর প্রতি অনুরোধ পরবর্তী সংস্করণগুলাতে দয়া কইরা কভারে অনুবাদক লীসা গাজীর নাম দিবেন। (আশ্চর্য, ইকবাল একবারও অনুবাদকের নাম নেন নাই তাঁর লেখায়। অথবা কে জানে হয়তো নিছিলেন, সম্পাদক বা প্রকাশক বা বইয়ের ইংরেজি সংস্করণের লেখকের অনুরোধে সেইটা কাইটা দিয়া থাকবেন।)
বইয়ের সম্পাদক হিসাবে মশিউল আলম, শিবব্রত বর্মণ (আসলে হবে বর্মন) ও মফিদুল হকের নাম-এর ফন্ট ছোট করার পরামর্শ রইল। এ বড় অরুচিকর, অনুবাদকের নামের ঠিক নিচে নিচেই প্রায় সমান ফন্ট সাইজে ধর্ষণোদ্যত তিন সম্পাদকের নামের কলরব!
৩.
চ্যানেল আইএ রাবেয়া খাতুনের লেখা নাটক করতে লোকজন চৌদ্দ পায়ে খাড়া। বা এশিয়াটিক-এর ইরেশ যাকেররে নিয়া নাটক বানাইতেও। এগুলা স্বাভাবিক ব্যাপার। পয়সা যেই হাত থিকা আসে সংস্কৃতিও সেইখানে হাতড়াবে, ক্ষতি কী? কিন্তু দেখা গেছে এই কাজগুলা যারা করেন তাদের মধ্যে একটা অবহেলা বা অবজ্ঞা কাজ করে যাদের পয়সা খাচ্ছে তাদের প্রতি। টাকার জন্য কাজ করি বোঝাইতে গিয়া ইচ্ছাকৃত ভাবে অনেকে এঁদের কাজ অবহেলাভরে করেন। তাহমিমা আনামরে কাভার করতে ইকবালরে দায়িত্ব দেওয়াটারে আমি সেই রকম একটা অবহেলা হিসাবেই দেখতে চাই। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুরে সঠিক গুরুত্বে সার্ভ না করা এক রকমের মিথ্যাচার।
তাহমিমা আনাম যে লেখার বা বইয়ের জোরেই সম্প্রচার পাওয়ার যোগ্য সেইটা যদি পিআলোর সাংবাদিক কর্তারা বিশ্বাস করতেন তাইলে লেখালেখির জগতে গুরুত্বপূর্ণ কাউরে দিয়া রিপোর্টিংটা করাইতেন। তাহমিমা আনামের সমস্যা তিনি প্রকাশকের কন্যা, এবং তাঁর পিতাও হস্তক্ষেপ কইরা তাঁরে বড় করতে চান। যদি ভাবি তিনি মিডিয়াস্টারের কেউ না বা তিনি প্রথম আলো গুষ্টির কেউ না তাইলে এই রকম একটা ‘আন্তর্জাতিক শোরগোল তোলা’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রকাশে যতটা শোরগোল এইখানে তোলা উচিত ছিল তা ঘটে নাই। ধরি মাছ না ছুঁই পানি প্রকারে তাহমিমা আনামরে প্রথম আলো গ্রাহ্য করলো। এই ভয় কেন? কী সমস্যা তাহমিমা প্রকাশকের কী হন না হন? এই জিনিস এই রকম আধো আধো পন্থায় যে করতে হইল তার কারণ প্রথম আলোর কোনো অথেনটিসিটি নাই। ফলে কাকের মতো চোখ বুইজা আছে সে। বাঘ আসলে তার বলতে হয়, হয়তো বাঘ আসছে!
২১-২২/২/৮
—
* জামিল বিন সিদ্দিক বর্তমানে কালের কণ্ঠে আছেন। বাকিরা প্রথম আলো ঘরে।