HSBC ব্যাংকের বাংলা ভাষা প্রীতি দেখা দিছে। তারা এতদ্দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রথম আলোর সঙ্গে এক হইয়া মিশনারী কায়দায় আমাগোরে বাণী দিতেছে :
১. “কজন আমরা এই বর্ণমালাকে সঠিকভাবে জানি?”
২. “আমরা কি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে বর্ণমালা পৌঁছে দিতে পেরেছি?”
৩. “আসুন প্রতিজ্ঞা করি নিজেদের যেন আমরা বর্ণমালার যোগ্য করে তুলতে পারি।”
বর্ণমালা সঠিকভাবে না জানলে কী বালের সমস্যা? বর্ণমালায় শিক্ষিত হইয়া বেরাদররা যাতে বিজ্ঞাপন পড়তে পারে বা পত্রিকা কিন্না পড়তে পারে সেই জন্য এই ভাষা প্রতিযোগ আমার মনে হয় না। নিশ্চয়ই দেশের অশিক্ষা নিয়া দুশ্চিন্তিত হইয়া তারা এগুলা করতেছেন।
যার শিক্ষা নাই সে তো আপন ইচ্ছায়-ই অশিক্ষিত। এখন আপনেরা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়া বর্ণমালা শিখাইবেন। অনেক স্পর্ধা! অশিক্ষিত মানুষদের পক্ষে মর্যাদা হানিকর এই অশুভ উদ্যোগের নিন্দা জানাই।
দুই.
শুদ্ধ ভাষা বইলা যেইটা আছে চিরদিন এরে শুদ্ধ রাখা যাইব না। একটা অঞ্চলের ভাষার মাতব্বরি চলতেছে, এখন দেশসুদ্ধা লোকরে অই শুদ্ধ গিলাইতে হইব এইটা হিটলারী কায়দা। শুদ্ধ ভাষায় কথা কওয়া লোক কমলে এইটা তো ভালো নিউজ। লোকজন এহন এট্টু স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নেওন যায় এই রকম ভাষায় কথা কউক।
তিন.
যারা বর্ণমালা শিখে নাই তাদের সেই না শিখাটারে ‘অযোগ্যতা’ জ্ঞান কইরা শিখাইতে যাওয়াটারে ‘স্পর্ধা’ ধরা হইতেছে।
কেন একজন বর্ণমালা শিখে না?
১. তার ইচ্ছা করে না।
২. বর্ণমালা শিখনের পয়সা তার নাই।
দুই নম্বর যুক্তি ধোপে টিকে না। বর্ণমালা শিখনের জন্য (শিক্ষা না, বর্ণমালা শিক্ষা) যে পরিমাণ পয়সাপাতি খরচ করা দরকার তা এমনকি ভিক্ষুকেরও আছে বা থাকে। এখন যদি প্রথম আলো বা এইচএসবিসি ম্যানিপুলেশনে বিশ্বাসী হয় তাইলে তারা এই সব অনিচ্ছুক বর্ণমালা-অশিক্ষিতদের শিক্ষিত কইরা তুলতে পারে। তাগো গিয়া বর্ণমালা-মূর্খগো কইতে হইব যে আপনেরা যে বর্ণমালা জানেন না এইটা আপনেগোরে মূর্খ বা অশিক্ষিত কইরা রাখছে। এইটা থিকা আপনেগোরে আমরা মুক্তি দিতে চাই। এই চাহিদাটারে আমি স্পর্ধা কইতে চাই।
এইটা একটা মিশনারী কাম। কোনো মিশনারী কামই অন্যরে ছোট বা দুর্বল প্রতিপন্ন না কইরা সমাধা হইতে পারে না। বর্ণমালা-শিক্ষিতরা আলোকিত আর বর্ণমালা-অশিক্ষিত অন্ধকারে পইড়া আছে এই রকম ফালতু চিন্তা যাগো মইধ্যে এহনো কাজ করে হেরাই এই রকম ভাবতে পারে।
ভাষাগত-অশিক্ষা কখনোই অযোগ্যতা না, যখন আপনে ভাষা সম্পর্কিত চাকরি করতে যাইতেছেন না। এই যে শিক্ষা লইয়া লম্বাচওড়া কথা কওয়া হয়, তো শিক্ষা গ্রহণ কইরা আমরা কী করি? সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থিকা শুরু কইরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরের কাজ করি। মজুররা বা ব্যবসায়ীরা বা বাসাবাড়ির চাকরেরা যদি মনে করে শিক্ষা না লইয়া অল্প পয়সায়ই জীবন গুজরান করবেন তখন আপনি কে যে তারে আগ বাড়াইয়া বর্ণমালা শিখাইতে যাবেন।
আপনাদের বুঝি দরকার শিক্ষিত চাকর, শিক্ষিত রিকশাঅলা, শিক্ষিত বেকার—যারা দিবাকালে বর্ণজ্ঞানের জোরে প্রথম আলো পত্রিকা পইড়া জগত আলোকিত করবে?!
ধরা যাউক কোনো বর্ণজ্ঞানহীন চাষা বা মজুর প্রথম আলোর সাংবাদিক আর এইচএসবিসির ব্যাংকারগো হাইদ্দা চাষাবাদ আর মালটানা শিখাইতে গেছে। মেটাফরার্থে না বা পানার্থেও না, সত্যি সত্যি সেই চাষা বা মজুর মনে করে এই কায়িক-শ্রম-অশিক্ষিত লোকগুলারে কাম শিখানো দরকার… সেই জিনিস যেমন স্পর্ধা বা ফালতু কাম হইব, প্রথম আলো-এইচএসবিসির এই মিশনারী অ্যাকশনও হেই রকম ফালতু কাম ও স্পর্ধা।
১৯/৪/২০০৭ – ১৬/৫/২০০৭