১.
বাউল তো হইতে হবে। উনি কখনো বাউল হন নাই। মোছলমানের মত বাউলের বাচ্চা বাউল হয় কিনা জানা নাই, তেমন ভাবেও তাঁর বাপ-মা কেউ বাউল ছিলেন না। যিনি বাউলই হইলেন না তাঁরে বাউলসম্রাট বানাইয়া রাখছে। কিমাশ্চর্যম!
বাউল না হইয়াও বাউলসম্রাটের উপাধি ভক্ষণ করছেন উনি। এইটা নিন্দনীয়। বাউলরা তাঁরে কী রকম হাসি হাসি মুখে দেখতেছেন এখন, এই মইরা যাওয়ার পরেও, ভাবেন একবার। বাউল গান গাইলে বড়জোর নগরবাউল কি আনুশেহ হওয়া যায়, বাউল হইতে কিছু আচার পালন করতে হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গায়ক শাহ আবদুল করিম তা করেন নাই। কারণ উনি আদৌ বাউল হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন নাই।
২.
কোনো পেশাজীবী বা ধর্মপন্থীদের পরিচয় তাদের গুণ দিয়া তৈরি হয় না, তারা সেই পেশা গ্রহণ করছেন কিনা, সেই ধর্ম কবুল করছেন কিনা তার দ্বারা শণাক্ত হয়।
শাহ আবদুল করিমের বাউল ধর্ম গ্রহণ ঘইটা ওঠে নাই। গান গাইয়া বা গান লেইখা বাউল হওয়ার সুযোগ নাই। নামাজ রোজা করলেই মোছলমান হওয়া যাবে না, কলমা পড়তে হবে। বাউল হইতে গেলে, সে আপনি আখড়ার বাউলই হন আর গৃহী বাউলই হন তাদের ধর্মপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আবদুল করিম সেইটা করছেন এমন রেফারেন্স নাই।
৩.
গান গাইলাম, গান লেখলাম ৫০০০ তাই বাউল হইয়া গেলাম এই “চমকবাজী” চিন্তা বাউল ধর্মের লোকদের প্রতি নিতান্ত অবজ্ঞার একটা রূপ। বাউলদের অবশ্য এই কইরা কষ্ট দেওন যায় না। লেচুতলার মধ্যবিত্তরা বাউলদের স্রেফ গায়ক জ্ঞান করে। তাই তাদের বাউলসম্রাট দরকার পড়ে।
আমার এই লেখার কারণে লোকজন যদি শাহ আবদুল করিমরে বাউলসম্রাট ডাকা বন্ধ করে তাইলে যারা আসলে বাউল তারা খুশিই হইবেন, আশা করি। তাতে যদি ছিঁচকাঁদুনে মধ্যবিত্তের মনে মিথ্যা বলতে না পারার কষ্টের উপক্রম হয়, সিরাজ সাঁই যেন আমারে ক্ষমা করেন!
৪.
অধিকন্তু, “বাউলসম্রাট” উপাধি গ্রহণ করলে–সে ফকির লালনও যদি গ্রহণ করেন–তাঁর আর বাউলত্ব থাকে না। বাউল আর সম্রাট দুই প্রান্তের জিনিস। লোভ আর ভোগ করতে পারলে বাউল হওয়ার দরকারটা কী? গান, সে আপনি গাইতেই পারেন।
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০