ইনস্ট্যান্ট শাস্তি, পত্রিকা ও পাবলিকের আমোদ (২০১০)

পত্রিকার আমোদ

২৬ নভেম্বর ২০১০-এ পি আলোতে ছাপা ৩ কলামের এই ছবি শুধু সংবাদ নয়; সমাজের প্রতি পত্রিকার কর্তব্যের প্রকাশও বটে!
২৬ নভেম্বর ২০১০-এ পি আলোতে ছাপা ৩ কলামের এই ছবি শুধু সংবাদ নয়; সমাজের প্রতি পত্রিকার কর্তব্যের প্রকাশও বটে!

 

ইনস্ট্যান্ট শাস্তি ও পাবলিকের আমোদ

ভেজাল দুধ তৈরির অপরাধে মাথায় দুধ ঢালা বা মেয়েদের উত্যক্ত করার অপরাধে কান ধইরা উঠবস করানো এইগুলা খুব মজাদার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সন্দেহ নাই। এখানে জনসমক্ষে অপমানই হইল শাস্তি। জনগণও বুঝতে পারে, বাহ অন্যায়কারীর তো শাস্তি হইতেছে, খুব ভালো! পাবলিক নিজের হাতে শাস্তি দেওনের সুখভোগ করতে পারে এই প্রক্রিয়ায়। যেমন দোররা মারার কালে উপস্থিত সুধীসমাজ পুলক পাইয়া থাকে, নাইলে তাকায়া তাকায়া দেখে কেন!

আগে সামরিক শাসন আগমনীর কালে শাড়িপরা মেয়েদের নাভি দেখা গেলে সেখানে আলকাতরা লেইপা দিতেন সেপাইরা। সেইটা ছিল আব্রুহীনতার শাস্তি। এই রকম আলগা আইনে জনমানস ফুলফিল্ড হইলে আরো আরো ফতোয়ার দেখা মিলবে। আজকে ভেজাল দুধ বানানোর অপরাধে মাথায় দুধ ঢালা হচ্ছে, কালকে চুরির অপরাধে হাত কাটা শুরু হবে, পরশু মিছিল করার অপরাধে কান ধইরা উঠবস করানো হবে। তখনও একই পাবলিক চিত্ত একই ভাবে আমোদিত হবে সন্দেহ কি!

২.

এই ধরনের ইনস্ট্যান্ট শাস্তি প্রদান দেশে আইন প্রয়োগের ফাঁকিবাজিরে দৃশ্যমান করে। আইনরক্ষাকারীদের দীর্ঘ দিনের অপারগতা তারা একদিনেই খতম কইরা দিতে চায়। এবং আমাদের সচেতন মধ্যবিত্ত চোররে থুতু দিয়া, নারী উত্যক্তকারীরে কান ধইরা উঠবস করাইয়া, ভেজালকারীর মাথায় দুধ ঢাইলা দিয়া অবৈধ উল্লাসে মত্ত হইতেছে।

গণতান্ত্রিক সমাজে অপরাধীর মর্যাদাও রক্ষা করতে হবে। যে কোনো অপরাধে নির্ধারিত শাস্তির বিধান আছে; অপরাধীরে ইনস্ট্যান্ট শাস্তিদানের মাধ্যমে পাবলিকরে অপরাধে সহজ ও অভ্যস্ত কইরা তুলবেন না।

যে কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বোঝায় যে আইনের লোকেরা তাদের কর্তব্য না কইরা বরং দৃষ্টান্ত স্থাপনেই বেশি আগ্রহী।

৩.

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যে আইনের লোকদের করা নতুন কোনো অপরাধ না সে ব্যাপারে নিঃসংশয় হওয়া গেল না।

 

১৯/৫/২০১০

 

Flag Counter

Leave a Reply