কীভাবে আমরা নিজেদের হবো

কেন আমরা আফ্রিকা কেন্দ্রিক না, কারণ আমাদের আফ্রিকা বিরোধী হইতে হয় নাই।

বিরোধিতা যত বেশি কোনো পক্ষকে কেন্দ্র কইরা সাধিত হয়, পক্ষপাতে তা হয় না।

কেবল পক্ষপাতের—বিরোধিতাহীন পক্ষপাতের—অবসান আছে। স্রেফ রুচির বদল হইলেই আর সেই পক্ষ কেন্দ্রিক থাকে না মানুষ।

আরো বহু অনুষঙ্গ আছে যার সচেতন বিকাশে পক্ষ বা ভালোবাসা থিকা সইরা আসা সম্ভব।

কিন্তু বিরোধিতাময় আত্মাদের কেন্দ্রিকতা ফুরায় না। মানব অচেতন যার বিরোধিতা করে তার স্থানে নিজেকে দেখতে চায় মাত্র। সেসব কিছুকে অবজ্ঞা করা তার সম্ভব হয় না সে কারণে।

যতদিন না সাদা বিরোধিতা, ব্রিটিশ বিরোধিতা, পাকিস্তান বিরোধিতা, ভারত বিরোধিতার অবসান হবে ততদিন আমাদের চিন্তা এইসব বিরোধী পক্ষ কেন্দ্রিক হইয়া থাকবে। আমরা তাদের মতো হওয়ার অপেক্ষায় থাকবো, নিজেদের হবো না আমরা।

কাজেই আমাদের তেমন আমরা হইয়া উঠতে হবে যাতে যা না-বিরোধিতার তার বিরোধিতা যেন আমাদের যুগের পর যুগ কইরা যাইতে না হয়।

নিজের হইয়া উঠতে গেলে বিরোধিতা মূলক চৈতন্যের অবসান একটা। এছাড়াও অর্থনৈতিক, চিন্তাগত, অভ্যাসগত, দর্শনগত, স্মৃতিগত বিবিধ প্রকারে আমরা না-ইউরোপ হইয়া উঠতে পারি।

একটা সম্ভাবনা টানি। এদেশে বাঙালি কেরানির প্রতিটা অফিস ইউরোপ দিয়া মোড়া। আত্মায় ও বহিরঙ্গে।

আপনি কি ভাবতে পারেন লুঙ্গি পইরা অফিস করবেন আপনি?

না, ভাবতেই পারেন না। কারণ আপনার আত্মা ইউরোপ দিয়া সীল মোহরকৃত। আপনার জাতীয় আত্মা। কলুষিত এই আত্মাকে আপনার কলুষিত মনে হয় না। কারণ বিক্রি হইয়া যাওয়া আত্মার নিজস্বতা প্রভুর নিজস্বতার সমানুপাতিক।

এই আত্মার উৎখাত বা গভীর অনুসন্ধানে বড়জোর সততা ও কর্মনিষ্ঠার পুরাতন ইউরোপ উইঠা আসতে পারে, তার বেশি নয়।

আমরা বহু বছরের গোলামির অভিশাপে অভিশপ্ত। চাকরের পক্ষে প্রভু হইতে পারাই যথেষ্ট।

এবং কী করলে, কী পোশাকে, কী ভাষায় আপনি প্রভু হইতে পারবেন সে তো সেই দুইশো বছরেরও আগে নির্ধারিত হইয়া আছে।

আপনি কি বুকে হাত দিয়া বলতে পারবেন, এই এতদিন পরেও, আপনার সন্তানের জন্যেও, আপনি সেই একই ব্যবস্থা রাইখা যাইতেছেন না?

১৫/৮/২০২০

Leave a Reply