কেন আপনার বুদ্ধিজীবী হওয়া দরকার—ফাহাম আব্দুস সালামকে

১.
দেখেন আপনি “বুদ্ধিজীবী” হওয়াটারে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন—আমি ততোটা সিরিয়াসলি নেই না। ইন ফ্যাক্ট, একদল মানুষ যারা জানে না যে তারা কী জানে না—তাদের অনুমোদন যে আপনার কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়—এই জিনিসটাই আমার কাছে কৌতুককর মনে হয়।
—ফাহাম আব্দুস সালাম, ৩/৭/২০২১

২.
মানুষ কী বলে আর কী না বলে—এইটা নিয়ে আসলে আমার কোনো আগ্রহ নাই। আমার লেখার মূল্য থাকলে আমি আমার পাঠকের মাথায় ঢুকতে পারবো আর না থাকলে পারবো না। ইট ইজ দ্যাট সিম্পল। কোনো ধরনের সামাজিক সম্মান ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন আমার কাছে অনর্থক লাগে। আপনি যে দুনিয়ার বেকুবদের এইসব তামাশা এখনো বুঝতে পারেন নাই কেন—এইটাই আমি বুঝতে পারি না।
—ফাহাম আব্দুস সালাম, ৩/৭/২০২১


ফাহাম আব্দুস সালাম, আমার ধারণা, আপনি সত্যের জয়ে বিশ্বাসী। আমি তা নই।

আমি মনে করি সত্য তৈরি করা যায়, এবং রাজনৈতিক সত্য তৈরি করাই প্রকৃত রাজনীতি।

বরং চইলা আসা রাজনৈতিক সত্যের অনুবর্তী হওয়া মানে সময়ের শিকার হওয়া এবং রাজনৈতিক না হওয়া।

কাজেই বুদ্ধিজীবী হওয়াটা আমার কাছে রাজনৈতিক হওয়া, যখন আপনি বুদ্ধিজীবিতা করতেছেন। আমি যেহেতু নতুন সত্য তৈরি করতে ও গ্রহণ করাইতে চাই, কাজেই বুদ্ধিজীবী হিসাবে প্রতিভাত হওয়াটা আমার অবস্থানকে সহজ কইরা তুলবে।

এর বাইরে বুদ্ধিজীবী বলতে আসলে কী বোঝায়, এর সংজ্ঞা কী বা কোন অথরিটি কী বলছেন ইত্যাদি আমার কাছে গৌণ। আমি বুদ্ধিজীবীর নতুন অর্থ দিবো, মনে হয় আপনি জানেন এই রকম দেওয়া যায় এবং তা গ্রহণ যখন মানুষ করে তা সত্যে পরিণত হয়।

রাজনীতি ব্যাপারটাই তাই। রাজনৈতিক সত্য সমান সমান সময়ের সত্য তৈরি করা।

আমার অবাক লাগে, আপনি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আদর্শ আর রুচির বার নিয়া বইসা আছেন! যেইটা আসলে অপশন বাছাইয়ের বেশি কিছু না।

যখন বুদ্ধিজীবিতা করবেন, এখন যেমন করতেছেন, কিন্তু বুদ্ধিজীবী হইতে আপনি চাইবেন না (যেন এইটা আপনার চাওয়ার উপরে নির্ভর করে!) তখন আপনি আসলে রোমান্টিকতার চর্চা করতেছেন।

আর আপনি যেরকম বললেন যে আপনার চাহিদার বার নিচু করবেন না অর্থাৎ গ্লোবাল রাখবেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ মূলত আপনি একজন গ্রাহক বা ক্রেতা, এবং যা কিছু গ্লোবাল হিসাবে প্রতিভাত বা আপনার প্লেটে রাখা হইছে আপনি সেই চাহিদা তৈরি হওয়ার রাজনীতির শিকার হইতেছেন।

কিন্তু যদি মালিক হন তবে চাহিদা ব্যতিরেকেই আপনি ব্যবহারকারী হইবেন। সেক্ষেত্রে বারের প্রশ্ন আসে না। বরং যা যেমন আছে তাকে সেভাবে নেওয়ার মহানুভবতা আপনার আসবে বা তার সমঝদার আপনি হইবেন।

আমার মনে হয় আপনার ‘সংজ্ঞা’ বা ‘নাম’ বা ‘অথরিটি’তে যুক্ত থাকার বাসনাটা আসছে সত্য অনুবর্তী থাকার বা ধর্মীয় থাকার সমস্যা থিকা।

আপনি বললেন, আপনার লেখার মূল্য থাকলে আপনি আপনার পাঠকের মাথায় ঢুকতে পারবেন আর না থাকলে পারবেন না। এই চিন্তাকেই বরং আমি কৌতুককর মনে করি।

আমি বুদ্ধিজীবী হওয়াটারে অনুমোদনের দিক থেকে না, বরং ক্ষমতাচর্চার দিক থিকা গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেছি। এইটা না বুঝলে আপনি আমারে একটু কম বুঝতেছেন বলবো। মানে আমারে বোঝার বিষয়ে আপনার কাছে আমার চাহিদার বার আরেকটু বেশি।

যেই পাঠককে আপনি তৈরি করবেন, সেই পাঠকের মাথায় ঢোকার অপেক্ষায় থাকা একটু বেশি রোমান্টিসিজম হইয়া যায়।

যে কোনো প্রকারে হউক ক্ষমতার মধ্যে যে আপনি আছেন তা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।

নতুবা রুচি, ভবিষ্যৎ, চাহিদা, স্মার্টনেস, বনেদিয়ানা এইসব ফাও জিনিস নিয়া পইড়া থাকতে হবে।

উত্তর দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৩/৭/২০২১

Leave a Reply