কেন আমি ঢাকা লিট ফেস্ট এর পক্ষে

১.
আমি ঢাকা লিট ফেস্টের পক্ষে, যেমন আমি একুশে বইমেলার পক্ষে এবং বাউল মেলার পক্ষে।

২.
রাষ্ট্রে মানুষের শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ অনুসারে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন ভিন্ন হবে। সে কারণেই রাষ্ট্র রাষ্ট্র।

এবং আমরা শ্রেণীযুদ্ধ করতেছি না। আমাদের মধ্যে যারা মিডল ক্লাস (যেমন আমি ব্রাত্য রাইসু, সাং বাড্ডা) আমরা সাধারণত এলিটের কর্মক্ষেত্রে কাজ করি, ও বাসাবাড়িতে কাজের লোক রাখি।

আপনারা জানেন, এখনো মিডল ক্লাসের হাতে রাষ্ট্রের সব অধিকার ন্যস্ত হয় নাই। তেমনটা হওয়ার কারণও নাই। যার যার ক্লাস অনুযায়ী সে সে শিল্প-সাহিত্য করতে পারতেছে কিনা তা দেখা রাষ্ট্রের কাজ। বুদ্ধিজীবীদের তা ভাবতে পারাটা শুভ বুদ্ধির লক্ষণ।

শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ ঘুচাইয়া দিয়া সবাইরে মিডল ক্লাস বানানোর যে কারখানা সেইটা চূড়ান্ত সাম্যবাদী রাষ্ট্রের চেহারা। এর ফল কী হয়, কত হত্যা সংঘটিত হয় তা আমরা দেখছি।

যেহেতু তার কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নাই, এবং সে বিষয়ে কোনো অ্যাকশন নাই, কাজেই সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষার উৎসব রূপটিকে মিডল ক্লাস খুব পছন্দ করে।

মিডল ক্লাসকে যেসব আন্দোলন করতে দেখা যায় সেগুলি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার আন্দোলন নয়। বরং বিরোধিতা বা স্থিতাবস্থায় ফিরা যাওনের দলীয় আকাঙ্ক্ষা মূলক দরকারি আন্দোলন এগুলি।

আমি এই রকম আন্দোলনের সমালোচনা করতেছি না। বলতেছি, এইটা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার আন্দোলন না।

রাজনৈতিক বিরোধিতারে আমি আকাঙ্ক্ষা বলতে রাজি না আর কি। তবে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাহীন রাজনৈতিক বিরোধিতা আলটিমেটলি কিছু দেয় না।

রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার অভাবেই এই দেশের মিডল ক্লাসের এই দশা। ছোটলোকের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থাকার কথা না। আর এলিট বা লুটেরার বা বড়লোকের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থাকার কারণ নাই।

৩.
উৎসব সংক্রান্ত ব্যাপারে ছোটলোকদের ক্ষেত্রে অবজ্ঞা ও করুণা এবং বড়লোক বা এলিটের ক্ষেত্রে ঈর্ষা ও ঘৃণা প্রচার করে মিডল ক্লাস।

তারা অদ্ভূত ভাবে দাবি করে এলিট বা বড়লোকের উৎসবকেও অবশ্যই মিডল ক্লাসের হইতে হবে, নাইলে তারা উৎসব করতে পারবে না!

৪.
এইখানটাতেই আমার আপত্তি। এইখানেই আমি গুলশান, বনানী, বারিধারায় বইমেলা আয়োজনরে যেমন স্বাগত জানাই, তেমনি গ্রামেগঞ্জে বাউল গানের উৎসবরেও স্বাগত জানাই আমি।

(এবং মনে করি রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রামেগঞ্জে বাউলদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান। মাঝে মাঝেই উগ্রবাদীরা বাউলদের আক্রমণ করে, চুল কাইটা দেয়—এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখানোর বেলায় সরকার ও মিডল ক্লাস বুদ্ধিজীবী কেউ কারো চাইতে কম যায় না।)

৫.
বড়লোকের উৎসবরেও যে মিডল ক্লাসের হইতে হবে এইখান থিকাই বুদ্ধিজীবীরা ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্য (যেমন তাদের যে এতে বেশি বেশি দেশীয় সাহিত্যিক ঢুকাইতে হবে, এই কর্তব্য) নির্ধারণ কইরা লিট ফেস্টরে সর্বজনতার জিনিস বানানোর বা জাতীয় চরিত্র দেওয়ার কাজ করেন। একটা বেসরকারী প্রযোজনারে লইয়া তাদের এই কেন আশা!

এরে আপনি বলতে পারবেন দেশপ্রেম। তবে এইটা তা না, এর নাম হচ্ছে বুদ্ধিজীবীদের শ্রেণী-অন্ধত্ব।

লিট ফেস্টরে এলিট রাখতে চাওয়ায় একদমই কোনো দোষ নাই। আবারো বলি, এলিটের সাহিত্যিক তৎপরতা ঘটতে দিতে হবে। যেমন প্রলেতারিয়েতের বা মিডল ক্লাসেরটাও ঘটতেছে দেখতে পাই। তবে দুইটারে বা তিনটারে মিলাইলে খিচুড়ি ফেস্ট হবে। এবং হচ্ছেও।

এই দেশে মিডল ক্লাস সাহিত্য যোদ্ধারা এলিট কিংবা ছোটলোকের সাহিত্য শিল্প নিয়া অযৌক্তিক ভাবে মাতব্বরির জায়গায় থাকতে চায়। কিন্তু শিল্প-সাহিত্য কেবলই মিডল ক্লাসের জিনিস নয়।

তবে ঢাকা লিট ফেস্ট যতটা এলিটের সাহিত্য উৎসব তার চাইতেও বেশি এইটা জেমকন গ্রুপের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক শক্তি সংগ্রহের হাব হইয়া উঠতেছে। সেইটা সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা। মিডল ক্লাস বুদ্ধিজীবীদের নয়।

৭/১/২০২৩

Leave a Reply