অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলের প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার গভীর মরুভূমিতে বেশ কয়েক বছর আগে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একটি প্রাচীন গ্রন্থ, যাকে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন মনে করে সংরক্ষণ করা হচ্ছিল।
কিন্তু একজন অস্ট্রেলিয়ান-বাংলাদেশি গবেষক সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন এটি আসলে বাংলা ভাষায় লেখা শত বছরেরও আগের একটি পুঁথি।
গবেষক ড: সামিয়া খাতুন এই গবেষণার সূত্র ধরে বিশ শতকের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় তৎকালীন বাংলা এবং ভারতবর্ষ থেকে মানুষের অভিবাসনের চমকপ্রদ এক ইতিহাসের সন্ধান পেয়েছেন, যা নিয়ে তার একটি বই শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে লন্ডন থেকে।
ড: সামিয়া খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ইতিহাসের বই-এ যখন তিনি ওই কোরআনের কথা পড়েন তখন তিনি তা দেখতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সেখানে।
“পাঁচশ কিলোমিটার পথ গিয়ে বইটি খুঁজে বের করার পর খুলে দেখি সেটি কোরআন নয়, বাংলা কবিতা,” বলেছেন ড: সামিয়া খাতুন।
– ‘অস্ট্রেলিয়ার গহীন মরুতে ১৮শতাব্দীর বাংলা পুঁথি’, বিবিসি বাংলা
ছবি ১. ব্রোকেন হিল গহীন মরু নয়
ছবি ২. ব্রোকেন হিল গহীন মরু নয়
১.
নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্রোকেন হিল মসজিদ বহুদিন থেকেই পরিচিত জায়গা। বিবিসি যেই রকম ফাউল বকতেছে তেমন দুর্গম ফুর্গম কিছু না এই জায়গা। ১৯৬০ সালেও তেমন ছিল না।
তো এই মসজিদে ১৯৬০ সালে একটা বাংলা পুঁথিকে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান হিসাবে সংরক্ষণ করা হইছিল।
যারা বাংলা ভাষা জানেন না তারাই এই রকম ভাইবা নিছিলেন, বোঝা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সামিয়া খাতুন তার ইতিহাসের পাঠ্যবই ঘাটতে গিয়া আবিষ্কার করেন পবিত্র কোরান নয়, এটি আসলে পুঁথি। তাও বাংলা পুঁথি।
সেই পুঁথি নিয়া প্রতিবেদন করছে বিবিসি। বিবিসি আধাখেচড়া ও অতিশায়িত প্রতিবেদন যে করে তা আবারও বোঝা গেল এই প্রতিবেদন দেইখা।
পুঁথি কবে ছাপা তা বললেও পুঁথির নাম বলে নাই বিবিসি? কারণ কী?
২.
২০১২ সালেও এই নিয়া ফিচার করছিল এসবিএস—The mystery of the Bengali book in country NSW. সেখানেও পুঁথির নাম বলেন নাই সামিয়া।
ইউটিউব ভিডিও (২০১২): Muslim poetry book found in country NSW. এই ভিডিওতেও পুঁথির নাম বলা হচ্ছে না। রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে কি তাতে?
৩.
ড. খাতুনের পিএইচডি সাঙ্গ হওয়ার পরে, ২০১৩ সালে নাম জানা গেছে পুঁথির। পুঁথিটি হচ্ছে কাজী সফিউদ্দিন এর কাছাছুল আম্বিয়া।
ধরেন তিনি এই বিষয়ে পিএইচডি যদি না করতেন, তাইলে কী হইত?
২০১২ সালেই আমরা হয়ত এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতাম।
আরেক প্রকাশিত প্রতিবেদনের (What would a rare Bengali manuscript be doing in a Broken Hill mosque?, priyoaustralia.com.au) তারিখে বিশ্বাস রাখলে মনে হয় ২০০৯ সালেই আমরা জানতে পারতাম কাছাছুল আম্বিয়ার একটা কপি ব্রোকেন হিল মসজিদে সংরক্ষিত আছে।
তাতে কি আমাদের আগ্রহে একটু ভাটা পড়তে পারত?
পিএইচডির বা প্রতিবেদনগুলির মিস্ট্রি একটু কইমা যাইত তাতে?
কিন্তু পিএইচডি কী করল: পুঁথির নামটারেও আড়াল কইরা রাখল।
কারণ, নাম না জানা পুঁথি থেকে নাম জানা পুঁথির রহস্য কম।
৪.
নিচে বিবিসি বাংলা ২০১৭ প্রতিবেদনের লিংক, অন্যদের ২০০৯ ও ২০১২ সালের ফিচারের লিংক। এছাড়া ড. সামিয়ার ২০১৩ সালে প্রকাশিত পিএইচডি থিসিসের রিভিউর লিংক।
ফিচারগুলি থিকা জানা যাইতেছে সামিয়া ২০০৯ সালেই এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারতেন।
বলেন নাই কি তার গভীর ধৈর্য্য নাকি তার বিলম্বিত পিএইচডির স্বার্থে?
ড. খাতুনকে তবু ধন্যবাদ, এবার লন্ডন থেকে বই প্রকাশ কইরা আমাদের তিনি সব জানাইবেন।
তার বইয়ের সার্বিক সাফল্য কামনা করি। কামনা করি, বিবিসি বাংলারও ধৈর্য্য এবং শিক্ষা।
২১/১০/২০১৭
লিংক
ক. অস্ট্রেলিয়ার গহীন মরুতে ১৮শতাব্দীর বাংলা পুঁথি, বিবিসি, ২০/১০/২০১৭। লিংক: http://bbc.in/2zEHqVb
খ. The mystery of the Bengali book in country NSW, sbs.com.au, ২৬/১২/২০১২। লিংক: http://bit.ly/2xU8fT7
গ. What would a rare Bengali manuscript be doing in a Broken Hill mosque?, priyoaustralia.com.au, ২২/৮/২০০৯। লিংক: http://bit.ly/2xUAdhw
ঘ. The South Asian Diaspora in Australia, ১৪/১১/২০১৩। লিংক: http://bit.ly/2zEdetm