একেকটা টাইমে একেক জিনিস ধর্ম হিসাবে দেখা দেয়। এখন ধর্মের প্রত্যয় লইয়া সামনে খাড়াইছে পলিটিক্যাল কারেক্টনেস।
সে আমাদের মতি ঠিক করতে চায়।
আমরা যারা তার ধর্মে রাজি না তাদেরকে একঘরে করবে সাইন্সের ছোটভাই পলিটিক্যাল কারেক্টনেস।
হুম।
২.
পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের কাছে সবকিছু সমান। কসমিক সাম্যবাদ লইয়া আসছেন ইনি। ছোট-বড় বইলা কোনো বিষয় নাই তার। সবই ভালো। সবই মহৎ। সবই সুন্দর।
এমনকি কুৎসিত দেখতে মানুষগুলিও নাকি সুন্দর!
কুৎসিতকে কুৎসিত বলবেন না আঘাত দিতে চান না তাই, তা বুঝলাম, কিন্তু সুন্দর বলতে হবে কেন!
সমাজ ‘সুন্দর’ বইলা একটা বুঝ তৈরি করছে, এই রকম সব বুঝগুলিরে পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বদলাইয়া ফেলতে চায়। একবিশ্ব তৈরি করবে তারা।
এই বদলানোর ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের সালিশ যন্ত্রসমুদয় বিশ্বব্যাপী সংঘ, রাষ্ট্র, এনজিও ও আর্ট-কালচারকে সঙ্গে রাখতে পারতেছে।
এইটা বিপজ্জনক।
৩.
তবে আশার কথা তাদের এই আগ্রাসী ধর্মপন্থায় গোল বাঁধাইছে মুসলমানরা।
অন্য ধর্মের বেশির ভাগই মডার্নিটি, বিজ্ঞান ও সঠিকতার কাছে পরাভব মানছে।
মুসলমানরা নিজেদের ধর্ম বাদ দিয়া পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের নতুন ধর্মে দল বদলাইতে রাজি হয় নাই।
তার ফলও তারা ভোগ করতেছে, মডার্ন সোসাইটি তাদের বিরুদ্ধে সেইটা ঠিক, সেইটা মডারেট মুসলমানরাও বলাবলি করে।
৪.
কিন্তু কেবল মুসলমানের সমাজেই না, সব সমাজেই টার্ম, চিহ্ন, অভ্যাস, বিনিময় এগুলির বোধগম্য ও লালিত অর্থ আছে। যেইটা বলা ও না বলা দিয়া তৈরি হয়। বেঠিকতা ও ভুলভালসহ। ভুলটি না থাকলে অর্থটি থাকবে না!
সমাজে এই অর্থগুলি তৈরি হয় সংস্কৃতির যেসব ধইরা নেওয়ার উপরে তাতে সকলের সায় কিংবা মাইনা নেওয়ার ব্যাপার থাকে। সে কারণেই সমন্বয় বা ভাষা তৈরি হয়। ভাষা মানে সায় বা সম্মতি।
সাম্রাজ্যবাদী ধর্মগুলি সব সময় সংস্কৃতির ভিতরে ভাষার যে অর্থ তার উপরে ইঞ্জিনিয়ারিং ফলায়, এখন পলিটিক্যাল কারেক্টনেসও তাই করতেছে। যেহেতু ভাষা নষ্ট হইলে বা ভাষার অর্থ চেঞ্জ হইলে সমাজ ভাইঙ্গা পড়ে। তখন আর বিরোধগুলিও বর্তমান থাকে না। কেবল কেনাকাটা চলে তখন। কিনে আর খায়।
যে কারণে যে কোনো সাম্রাজ্যবাদী শাসক প্রথমেই ভাষা চেঞ্জ করতে তৎপর হয়।
৫.
পলিটিক্যাল কারেক্টনেস সমাজের ভাষা বদল করতে আসছে টার্ম চেঞ্জ করার মধ্য দিয়া। শব্দে নতুন অর্থ ইনজেক্ট কইরা।
তারা বলে তোমরা যা যা করো আমরা তা করি না। তারপর তারা অপেক্ষা করে আপনিও বলবেন, আমি এই করি না, সেই করি না। যদি তা না বলেন, তখন পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বলে, আমি তোমার লগে থাকবো না। তুমি অনেক খারাপ, তুমি বদলাইতে চাও না!
এবং আইন, মিডিয়া, শিক্ষা, সাহিত্য ইত্যাদি জন মনস্তত্ত্ব শাসনের টুলগুলির মাধ্যমে তা সমাজকে নতুন খণ্ডভাষা ও আধা জীবনযাপনের বদলানিটা মানতে বাধ্য করে।
পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের ধীর ও সাসটেইনেবল চাপে সমাজ তার অর্থ হারাইয়া কর্পোরেট আচরণবিধির মধ্যে ঢুকতে থাকে। আর জিনিস কিনে।
৬.
এই নতুন ধর্মের হাত থেকে নিজেরে বাঁচাইবেন কেমনে? আপনের পোলাপাইনরেই বা বাঁচাইবেন কেমনে? বিরোধ কোনো পন্থা না। পুরাতন ধর্মে আশ্রয়ও আপনারে কিছু দিবে না। কারণ পুরাতন ধর্মগুলি তো পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের দাদাঠাকুর মর্যাল কারেক্টনেসের আখড়া।
তাইলে কী করবেন?
১১/১/২০২১