ফেসবুকে প্রচ্ছদ বিনিময় উৎসব অথবা লেখকরা যেইভাবে পাঠকে পর্যবসিত হন

লেখকদের এই যে বেচাবিক্রি না হওয়া জনিত ‘তবু বই বের করি’ মূলক দ্বিধাথরোথরো ভঙ্গি, অ্যান্ড সাথে ‘লেখক-লেখক প্রচ্ছদ বিনিময়’-এর যে নম্র-লাজুকতা; এর মধ্যে যে গরিবি — তা আমাদের লেখক সমাজের সেই নব্য শ্বাশত ‘সাহিত্যিক দারিদ্রে’রই বিবর্ধিত রূপ।

অপরূপ!

২.
আমি লেখকগো ‘সাহিত্যিক দারিদ্র’রে অর্থাৎ ‘সাহিত্যে কার্যকর কিছু করতে না পারার চর্চাজনিত অক্ষমতা’রে বা ‘কেবলই সম্ভাবনাময় থাইকা যাওয়ার অভ্যাস’রে তাগো প্রকাশিতব্য বইপত্রের প্রচ্ছদ বিনিময় উৎসবের ভাইটাল কারণ ধইরা নিলাম।

প্রচ্ছদ বিনিময়ের এই ‘মরি’ ‘মরি’ এমন — যেন: “ভাই অন্য সাহিত্যিক, পাঠক যেহেতু নাই তুমিই আমার পাঠক হও নাইলে!”

যে-লেখকের সাহিত্যিকগিরি পরিবার, প্রতিবেশী আর অন্য সাহিত্যিকের পাঠক্রিয়ার ভিতর দিয়া স্বর্গলাভ করে সেই সাহিত্যিকের প্রচ্ছদ-লেনদেন যথেষ্টই গরিবের ইন্টারনাল খুদকুড়া আর পান্তার বিনিময়।

লেখকের ভোক্তা যদি ‘কেবলই অন্য লেখক’ তবে এইটা এক রকমের আদি বিনিময় প্রথা হিসাবে কার্যকরই আছে বলতে হবে!

আর নাইলে ‘পাঠক বা ক্রেতার অনুপস্থিতি’তে অন্য লেখকরে ‘পাঠক বানানোর ধান্ধা’ করতেছেন লেখক, প্রচ্ছদ ট্যাগ বা শেয়ার কইরা কইরা।

এই কাণ্ড যেমন লেখকটির নিজের জন্যে বিকল্প মন্দ তেমনি অন্য লেখকরে টাইনা নিচে নামানোরও বা পাঠক বানাইয়া ফেলারও নামান্তর।

মানে প্রচ্ছদ বিনিময়ের — তুলনীয় শবেবরাতে রুটি বিনিময় — এই উৎসব লেখকসমাজরে একটি কার্যকর ক্ষুদ্র পাঠকসমাজে পর্যবসিত করেতেছে! এবং লেখকরাই এই অকাণ্ডটা করতেছেন। সিলি! তারা রুটির বা বইয়ের ব্যবসা করা বাদ দিয়া আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের রুটি খাওয়াইতে ধরছেন!

৩.
লেখকদের লেখকসত্তারে ‘প্রথম প্রেমে পড়া কিশোরীসুলভ চপলতা’য় বা ‘প্রথম সন্তান জন্মদানকারী পুরুষ বা নারীর কষ্টকল্পিত বেদনা’য় লঘু কইরা দেওয়া প্রকাশিতব্য বইপত্রের প্রচ্ছদ বিনিময় উৎসবের পাশাপাশি লেখকরা বই ছড়াইয়া দেওয়ার বা পাঠক যোগাযোগের কার্যকর কোনো হস্তক্ষেপ নিতে পারেন। লেখকদের লেখক হইয়া ওঠার বা সাবালকত্ব অর্জনের স্বার্থে।

কার্যকর ব্যবস্থা বলতে লেখক বই বিক্রি করতে নামবেন তা না। না চলা বা চলা বইয়ের জন্যে মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠানগত রেগুলার বিপণনের একটা কার্যকর রাষ্ট্রপক্ষীয় উদযোগের জন্যে আন্দোলনের কথা বলতেছি। ধরা যাক রাষ্ট্র বই বিক্রি কইরা দিবে না – কিন্তু রাষ্ট্রের প্রচার যন্ত্র কার্যকর লেখকরে যথার্থ প্রচার করার সৌজন্যটুকু করল। এই রকম কিছুর ব্যাপারে লেখকরা রাষ্ট্রের বা পরিচিত রাজনীতিবিদদের কাছে ধর্না ধরতে পারেন। অন্তত বাংলা একাডেমি নামের স্তূপাকার নতুন বিল্ডিংটায় লেখকদের টেলিভাইজড করতে পারে সরকার। কেবল সরকারি লেখকদের দিয়াও শুরু করতে পারে।

৪.
অ্যাজ এ লেখক-পোয়েট বাজে সাহিত্যের প্রচ্ছদ আমারে কেউ ট্যাগ করলে আমার তাতে বিঘ্ন তো হয়ই। চিন্তার একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় খারাপ প্রচ্ছদের, বাজে লেটারিংয়ের পিছনে যায় গা। আমারটায়ও অন্যদের যায় নিশ্চয়ই। আমি তো পাঠক হইতে চাইতেছি না কোনো প্রচ্ছদসর্বস্ব লেখকের!

২৭/১/২০১৪

Flag Counter

 

 

Leave a Reply