ফ্যাসিবাদের টাইমে বুদ্ধিজীবী হিসাবে আমার কাজ কী বা আমি আসলে কী করি?

ফ্যাসিবাদ মূলত আমজনতার বিষয়।

আমজনতার প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া ফ্যাসিবাদ গইড়া ওঠে না। টিকতেও পারে না।

যেসব বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিজীবীরা সকল অবস্থায় প্রোপিপল বা জনতাপক্ষ বা সাধারণ মানুষের তরে কার্যকর থাকেন, তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আসলে কিছুই করেন না, করতে পারেনও না।

বরং পরোক্ষ ভাবে ফ্যাসিবাদের মদদদাতার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন তারা।

২.
যেহেতু ফ্যাসিবাদের রমরমার কালে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না, কাজেই সে অবস্থায় অনলি বিকল্প জনতার “পশ্চাৎদেশে তৈলমর্দন পূর্বক” বা “পাবলিকের পাছায় তেল দেওয়ার মাধ্যমে” ফ্যাসিবাদের জ্বালানি সরবরাহ।

এটিই তখন বুদ্ধিজীবীদের একমাত্র কাজ হইয়া দাঁড়ায়।

বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা “কেবলই সরকার বিরোধিতার মাধ্যমে জনতার হৃদয় জয় ও পরে সরকার উৎখাত” ধরনের প্রকল্পে স্বপনে বিভোর থাকেন তারা মূলত জনতার মধ্যকার অভ্যাসে পরিণত ফ্যাসিবাদকে নানা রঙে এন্টারটেইন বা বিনোদিত বা উজ্জীবিত করতে থাকেন।

তবে তা সরকারের ফ্যাসিবাদ পদ্ধতির বাইরে ভিন্নতর পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়। অনেক সময় বোঝাও যায় না যে ফ্যাসিবাদ ঘটতেছে। ওই মিষ্টি বা কল্যাণ ফ্যাসিবাদ সাধারণত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পিপল মতামতের শুভ প্রকাশ হিসাবে উদযাপিত হইতে থাকে।

৩.
তো এই অবস্থায় পিপল বা জনতা দেশের সরকার এবং বিরোধী পক্ষ এই দুই ফ্যাসিবাদী অভিভাবকের কাছ থেকে পাওয়া দুই ধরনের ফ্যাসিবাদ অনুশীলনে লিপ্ত হয়।

এ সময় আইনের শাসন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি ক্ষমতাবান বা সুবিধাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে পাবলিক রোষও বাড়তে থাকে। তার ফলাফল ও প্রতি ফলাফল হিসাবে সামগ্রিক ভাবে দেশ আরো বেশি ফ্যাসিবাদের মধ্যে নিপতিত হয়।

৪.
আমি বুদ্ধিজীবী হিসাবে তাই পিপল রঞ্জনের বিরোধী। এবং আমার কাজ যেহেতু সরকার বিরোধিতাও নয়, কাজেই আমি বুদ্ধিজীবী হিসাবে আসলে কী করি তা জানার দরকার যেমন পিপলের, তেমনি আমারও।

৫.
আমি আসলে কী করি?

বেশি না, মূলত আমি তিনটা কাজ করি।

এক, আমি সরকার, জনসাধারণ ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে গাইড়া থাকা ফ্যাসিবাদকে চিহ্নিত করার কাজ করি। এবং তা রাষ্ট্র কইরা দেই।

এই ব্যাপারে লোকলজ্জা, লঘুতা, ঘৃণা বা সম্মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে ভীত থাকি না।

সরকার ও বিরোধী পক্ষকে যেমন তাদের ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে অবহিত করি আমার লেখালেখি ও নানান ভঙ্গি বা জেশ্চারের মাধ্যমে তেমনি পিপলের মধ্যকার সুপ্ত ও প্রকাশিত নানান ফ্যাসিবাদী প্রবণতাকে চিহ্নিত করি।

বুদ্ধিজীবী হিসাবে এইটা আমার বড় কাজ। এর বাইরে অন্য বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা জারি রাখা আমার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

তৃতীয়টি কী?

তা হইল নিজের মতো থাকা।

এই থাকাটি সব বুদ্ধিজীবীর আরাধ্য বিষয়। বুদ্ধিজীবী যখন দায়িত্ব, কতর্ব্য ইত্যাদির চাপে জনতার অভিভাবক বা শিক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করেন তখন তিনি জাতির বিবেক বা বস্তায় পরিণত হন।

জাতির বিবেক নামক বস্তা বা বস্তুধারকটি জাতির সরকার, বিরোধী পক্ষ ও জাতির জনগণের তুলনায় নিকৃষ্ট জিনিস।

৫/৭/২০২১

Leave a Reply