শিক্ষিত লোকের আত্মহত্যার এই ধরনটা একটু চিপ। বই বা লেখাপত্র দিয়া প্রভাবিত হইয়া আত্মহত্যা। তারা অবশ্য এরে বলতে চান ফিলসফি বা দর্শন। যে আত্ম বা সেলফ লইয়া কী করবেন তা বোঝার জন্যে আত্মহত্যা। হাঃ হাঃ।
সম্প্রতি এক ভদ্রলোক আত্মহত্যা করেছেন, ইউনিভার্সিটির ছাত্র। বড়সর একটা ইংরাজি নোট লেইখা সবাই যাতে সেই নোট দেখতে পায় তার মরণের পরে তা ঠিক কইরা পরে আত্মহত্যা করছেন। তার সেই নোট দেইখা অল্পপ্রাণ আত্ম বা সেলফ সন্ধানী পোলাপাইন আহা উঁহু করতে শুরু করছেন।
অর্থাৎ ছাত্র ভদ্রলোক যেমন মোটিভেশনাল ভুয়া চিন্তা বা সিউডো ফিলসফিক্যাল লেখালেখি দিয়া উদ্বুদ্ধ হইছিলেন, তেমনি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যে একটা নোট লেইখা গেছেন!
তার এই নোট দিয়া নিশ্চয়ই তার চাইতে কম শিক্ষিত আরেক ছাত্র বা ছাত্রী আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ হবেন।
কী অপচয়! এবং কী ভুল কারণে মানুষের অপচয়।
ভদ্রলোক ভাইবা নিছিলেন তার জীবন কেবল তারই জীবন। তারে তৈরি করার পিছনে বাপমা, ভাইবোন, পরিবার, প্রতিবেশী ও একটা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অকৃতজ্ঞ থাইকা কেবলই নিজের সেলফের বোঝাপড়া সারতে চাইছেন তিনি।
আহাম্মক একজন মানুষের আত্মহত্যা উদযাপনের কোনো কারণ নাই আপনাদের। তার এই আত্মহত্যারে কলঙ্কজনক মনে করি।
কী কারণে উনি ইংরাজিতে নোট লিখতে গেলেন এমনকি আত্মহত্যার সময়েও?
গ্লোবাল প্রচারের আশায়? যাতে যত না বাংলাদেশীরা দেখে তার চাইতে বেশি দেখে পশ্চিমের বেশি অভিজাত মানুষেরা?
নাকি তিনি যে গড়পরতা বাংলাদেশের মানুষের চাইতে উন্নত ভাষা চর্চাকারী একজন তা বোঝাইতে?
তিনি কি ধইরা নিছিলেন বাংলায় লেখলে কেউ অনুবাদ কইরা পশ্চিমের জ্ঞানী লোকদের কাছে তার নোটখানি আদৌ পাঠাবে না?
কী জানি।
তবে দার্শনিক উপলব্ধির গণ্ডগোলের কারণে কেন এত আত্মহত্যা করে লোকে তার গবেষণা হওয়ার দরকার।
এবং আত্মহত্যার টাইমেও মানুষ কেন শ্রেণী, আভিজাত্য, লজ্জা, প্রচার, আত্মবিশাস এইসব ঠিক রাইখা পরে আত্মহত্যা করে তারও গবেষণা দরকার।
ধরেন ভদ্রলোক তো নগ্ন হইয়া আত্মহত্যা করতে পারতেন, তা কেন করলেন না?
তিনি আত্মহত্যার পরে তারে কীভাবে দেখা যাইতে হবে তা ঠিক করতে চাইছিলেন?
ইংরাজিতে যে লিখলেন তা কেন?
তারে যাতে গ্লোবাল বিশ্বের নাগরিক মনে হয় সেইজন্যে?
বহু ব্যাপার আছে। আমার কথা হইল, এত কিছু ঠিক রাইখা যারা আত্মহত্যা করেন তাদের মহত্ত্ব বেশি কী কারণে?
তার লোভও এই সব ঠিক রাইখা জীবন যাপন কারী মানুষের মতই। সব তো একই রকম!
আত্মহত্যাও এক ধরনের জাগতিক লোভ। জাগতিক মানুষের কাছে নায়ক বা নায়িকা হওয়ার এই লোভ সংবরণ করতে পারার দরকার আছে।
মানুষ হিসাবে যথেষ্ট মানুষ হওয়া না হইলে তা ঘটবে না।
আত্মহত্যা যত না বোকামির ব্যাপার তার চাইতে বেশি অশিক্ষার। ভ্রান্ত দার্শনিক শিক্ষা বা উপলব্ধির কারণে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে।
৫/৪/২০২৩