কেন রাজনৈতিক সাহিত্য খারাপ

আমি দেখছি অনেকেই যারপরনাই অভিনিবেশ সহকারে ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’ লেখেন। ও অনেকেই ঐতিহাসিক উপন্যাসে গভীর শ্রদ্ধা আরোপ করেন।

কিন্তু ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’ একটা ভুয়া টার্ম।

‘সাহিত্য’ মানেই হচ্ছে ‘কালনির্ভর’ বা ‘বর্তমান সময়ের’ সাহিত্য, এই ধরনের একটা অস্বচ্ছ ধারণা থিকা উইঠা আসছে এই টার্ম।

সমসাময়িক ৯৯ লেখকরেই দেখছি তারা নিজেদের টাইমটারেই সবচেয়ে বিপজ্জনক, গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল সময় মনে করে। যেন এই সময়ের ও এ সময়ে ঘটতে থাকা সম্পর্ক ও ঘটনার ফলাফলই সাহিত্য।

তাতো না। সাহিত্য সময় নিরপেক্ষ জিনিস। তাতে ইতিহাস বা বর্তমানরে নায়ক করতে গেলে সেইটা প্রজেক্টে পরিণত হয়। এরে বলা যাইতে রাজনৈতিক প্রজেক্ট। বা রাজনীতির সাহিত্যগত অভিপ্রকাশ। মানে ঠিক সাহিত্য এইটা না।

বিশ্বব্যাপী সাহিত্যরে “বর্তমান কেন্দ্রিক করার” যে জাতিগত ও স্বার্থগত ঝোঁক এই ছোট দৃষ্টিই রাজনৈতিক সাহিত্যের গুরুত্ব পাওয়ার কারণ। যেই রাজনৈতিক সাহিত্য শেষ পর্যন্ত বিশ্ব কর্পোরেট ও শক্তিমান দেশগুলির বাইছা দেওয়া লক্ষ্য, গন্তব্য, মানবিকতা, রাজনীতি, লাইফস্টাইল, রসিকতা, সম্পর্কের ধরন ইত্যাদি গ্রহণ কইরা গরিব দেশের হাইব্রিড এনজিও সাহিত্যে পরিণত হয়।

এইসব বিশ্বমান গ্রহণ করানোর জন্যে যে আলাদা কৌশল গ্রহণ করতে হয় কর্পোরেট সংস্থা বা বড়লোক দেশগুলির, তাও না। বরং গরিব দেশগুলির মধ্যবিত্ত লেখকেরা নিজস্ব অভাবের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আন্তর্জাতিক এই সমস্ত আচরণ ও বিশ্বাস রপ্ত করতে থাকে। এমনকি এদের বিরোধ বা বিদ্রোহগুলিও সেই আন্তর্জাতিকতা অনুসারে সাজানো-গোছানো থাকে।

এভাবে আন্তর্জাতিকতা-অনুসারী ও কর্পোরেট-বিরোধী উভয় সাহিত্যিকরা রাজনৈতিক সাহিত্য করার মাধ্যমে এনজিওতে অধঃপতিত হয় ও আন্তর্জাতিকতার তথা শক্তিমান বিশ্বের ঘানি টানতে থাকে।

দুনিয়া জুইড়া যে এনজিও সাহিত্যের বিপুল রমরমা তা মূলত রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত সাহিত্যের গন্তব্যহীনতা মাত্র।

সাহিত্যরে সর্বকালের বা কাল নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখতে পারা দরকার। সে হিসাবে ইতিহাসও সাহিত্যের একটা অংশ মাত্র। এবং পুরাতনকে সব সময় ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে দেখতে চাওয়া আদতে নিজের সময়কে গুরুত্ব বেশি দেওয়ার মতো একটা অসাহিত্যিক আচরণ।

বড় সাহিত্যিকরা তেমন কেন করবেন?

১২/১০/২০২১

Leave a Reply