বনসাই এর সলিমুল্লাহ গীতি

সলিমুল্লাহ খান ভাই আমারে “বনসাই” বলছেন। তার কথায়, “উনি কিন্তু গত বিশ বছরে একইঞ্চিও বড় হননি। বনসাই বলে একটা কথা আছে না? রাইসু হচ্ছেন বনসাই।”

তারপরে বলছেন “তিনি যে লেখাপড়া জানেন না একথা তো সত্য, অস্বীকার করা যায় না। এটা ভালো কি মন্দ আমি জানি না।”

এইটা তিনি আঠারো সালে একটা ইন্টারভিউতে আমার সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়া এই মন্তব্য করছিলেন।

তার এই কথা লইয়া মিডল ক্লাস পড়ালেখা জানা লোকেদের আনন্দের প্রকাশ দেখতে পাই। তারা এই কথা শেয়ার করেন, আমারে তাতে ট্যাগও করেন।

আমি সে সময় একটা ফেসবুক পোস্টে তার ব্রাত্য রাইসু বিষয়ক বিচার বিবেচনারে একসঙ্গে কইরা পোস্ট দিছিলাম। আজকে দেখলাম সে পোস্টরে ফেসবুক তার কম্যুনিটি স্ট্যঅনডার্ডের খেলাপ মনে করতেছে। ফলে লিংক দিতে দিতেছে না। তাই পোস্ট ডিলিট দিয়া আমার কুতর্কের দোকানে ওনার আমার সম্পর্কিত মূল্যায়ন যোগ করলাম। আগ্রহীদের জন্যে লিংক দিতেছি এইখানে: সলিমুল্লাহ খানের ব্রাত্য রাইসু বিচার, ২০১৮

২.
বনসাই বলার মাধ্যমে উনি আমার মর্যাদা হানি কইরা কথা বলছেন, কিন্তু তুলনাটা মজার। অর্থাৎ আমার কোনো দৃশ্যগত বটগাছত্ব নাই, যেইটা আছে সলিমুল্লাহ খানের, কিন্তু আমার মহিমা বটগাছেরই, সে কারণে লাগে বনসাই।

আমি নিজে এমনিতে বইবাহার কোনো বটগাছ হইতে চাই না, এমনকি বটের বা সলিসমুল্লাহ খানের ভাবধারী বনসাইও না। বরং ছোট্ট কোনো ঘাসফুল বা তিতপুঁটি হইতে পারলেই জনম সার্থক।

এখন আমি সলিমুল্লাহ খান বা বইমানব তো হইতে চাইও না। সেইটা যারা আমারে দেখেন, পড়েন তারা অনুধাবন কইরা থাকবেন। যা আমি হইতে চাই না তা আমার বৈশিষ্ট্য হইতে পারে, কিন্তু কোনো দোষ কীভাবে হয়?

নিজের পড়ালেখা থাকারে বা না থাকারে নিজের কথা নিজে বলবার সাপোর্ট হিসাবে দেখতে চাই না আমি।

আমি তো এমন করতেছি না যে, মহারাজা লাঁকা এইটা বলছেন বইলা কোনো ভুল রেফারেন্স দিলাম। আমার ভুলটাও আমার নিজেরই কথার ভুল, হইতে পারে। সে স্বাধীনতা তো সবার আছে। রেফারেন্সজীবীদের তা অবশ্য নাই। তাদের ভুলের স্পেস নাই।

অর্থাৎ তথ্য বা জ্ঞানের যে রেফারেন্স নির্ভরতা তা আমার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে না। সলিমুল্লাহ ভাইয়ের সেইটাই বেহেশত। উনি যদি চান তার স্বর্গ আমার হউক, তা কি এই সময়ে আইসা আর চলে, বলেন? আমার নিজের পছন্দ আছে না!

৩.
আমার কথা যেহেতু আমার কথা, তাই সলিমুল্লাহ খানের এই সাক্ষ্য বোঝায় যে আমি পড়ালেখা ছাড়াই কথা বলি। তা যেই রকমই বলি। আর উনি পড়ালেখা দিয়া কথা বলেন।

যদিও উনি বলছেন, “এটা ভালো কি মন্দ আমি জানি না” তথাপি পড়ালেখা সম্পর্কিত এই বর্ণনা তো অনেকটা “গরু ঘাস খায়” বা “মানুষ বই পড়ে” এর মত হইল, তাই না? বিদ্যার বা তর্কের জগতে এর গুরুত্ব কোথায়? বই পইড়া তর্ক করতে হবে কেন? যদি না সেই তর্ক কোনো বই বা লেখক বিষয়ে হয়?

তর্ক যখন আগে ঠিক করা বেষ্টনির মধ্যে সাধন করতে হয় তখন তা গুরুমুখী তর্ক হয়। সলিমুল্লাহ ভাই তাই চান হয়ত।

কিন্তু আমি তো তার বা তার লাঁকার ছাত্র না, যদিও তিনি আমার আরো আরো গুরুর একজন।

সমস্যা হইল সলিমুল্লাহ খান তার এই বই কেন্দ্রিকতা বা অন্য লেখকদের সম্প্রচারের দায়িত্বের বোঝাটা তুইলা দিতে পারছেন বাংলার তরুণ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে। এই মুখস্থ বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বালটা ফেলেন তা দেখার বিষয়।

সলিমুল্লাহ ভাই আমারে নিয়া কী বলছেন তা আলাপের বিষয়; কুণ্ঠা বা বিদ্বেষের নয়। কুচুন্ডে বুদ্ধিজীবিতারও নয়।

১৯/৮/২০২২

Leave a Reply