যদি লালন শাহে পইড়া থাকেন

অর্গানিক ফুড, ধনী দেশের কার্বন দুঃশ্চিন্তা, সাসটেইনেবল লাইফস্টাইল ইত্যাদি যখন আপনি গরীব দেশে প্রয়োগ করতে যাইবেন আপনার লালন লাগবে তখন।

এইনজিওগুলি মূর্খ লোকেদের আধুনিকতা খাওয়াইতে এই রকম লোকাল আইকন বা ট্রফির সাহায্য লয়।

লালন প্রমুখের যে দেহবাদী হওয়ার প্রয়োজন ছিল সেই আমলে সেইটা ছিল অপর্যাপ্ত চিকিৎসা শাস্ত্রেরই বিকল্প।

দীর্ঘ আয়ু লাভ করতে হইলে এখন কিডনি, লিভার ও হার্ট ঠিক রাখতে হয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, সাপ্লিমেন্ট ও পর্যাপ্ত ঘুম লাগে। এবং তাতে দুরারোগ্য ব্যাধি না থাকলে আল্লাহর দুনিয়ায় সচরাচর দীর্ঘ জীবনের দেখা মিলে ভাগ্যবানদের।

আগে যেহেতু চিকিৎসার দৌড় অল্প ছিল, মনে করা হইত মন দিয়াই দেহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কইরা সেইটারে আপনি বলবেন দেহতত্ত্ব।

কেন মনের উপর দেহের দায়িত্ব রাখতে হয়? দেহ নিজেই কি দেহ হইতে পারে না?

এই মন তথা বুদ্ধিরে সর্দার বানানোর চিন্তা একলা লালন সাহেবের ছিল তা না। চিকিৎসা যখন অপ্রতুল তখন যেমন ভগবানের উপর নির্ভর করতে হইছে, তেমনই মনের উপরও। ইয়োগা ইত্যাদিও সেই কারণ গ্রো করছে। এবং এইসব জিনিস যে প্রভূত কার্যকর তা বোঝাও যাইতেছে।

দেহবাদী না হইয়াও এর সুফল আপনে পাইবেন। ইয়োগা, ধ্যান ও বাছাই খাদ্য খাইয়া, ঘুমাইয়া।

মেডিটেশন বা দম আপনার দেহরে ফিট রাখে। এর বাইরে দেহই সকল বলবেন অথচ মনেরে দিয়া রাখবেন দেহের নিয়ন্ত্রণ, আবার তারে বলবেন দেহচর্চা। কেন, এইটা তো মন নিয়ন্ত্রণ আসলে!

আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন সব সময়ই আছে, কিন্তু যখন বিজ্ঞান আপনার ও আপনার দেহের কিছু প্রবলেমের সমাধান দিতে পারতেছে, তখন দেহ বিষয়ক নতুন আধ্যাত্মিকতার দরকার পড়বে আপনার। চিকিৎসা শাস্ত্রীয় লালন ধরনের আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন যেহেতু ফুরাইছে।

তখনও আপনি যদি লালন শাহে পইড়া থাকেন, সেইটা রোমান্টিসিজম, কেউ সেই চর্চায় আনন্দও পাইতে পারে। কিন্তু সেই লাইনে আহ্বানের অর্থ হবে আপনি ম্যানিপুলেশনের ব্রত লইছেন।

হেলদি লাইফস্টাইল ও হেলদি আধ্যাত্মিকতার জন্যে লালন অপ্রাসঙ্গিক এখন।

এমনিতে সারা দুনিয়া যখন অর্গানিক ফুড, অর্গানিক কৃষি ও অর্গানিক লাইফস্টাইলে হিপিদের মতোই মাতোয়ারা তখন আপনি নিজের দেশের অর্গানিক ঐতিহ্যের শরণ তো লইতেই পারেন।

তাতে বিশ্বরে এড়াইয়া এই নয়া অর্গানিক আপনার নিজের অর্গানিক হবে। হবেই।

২.
আমার এই উপলব্ধি দিয়া আমি লালনরে ছোট করতে চাইতেছি না। লালন ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট ছিলেন, দার্শনিক ছিলেন, আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। কিন্তু সমালোচনার উর্ধ্বে তিনি থাকেন না। তারে যারা পালন করেন তারাও না।

আমি এই লেখায় একটা টাইমের পরে সেই টাইমরে বহাল রাখার বা ফিরাইয়া আনার যে রোমান্টিসিজম তার সামাজিক-রাজনৈতিক গুরুত্বহীনতা ও সমস্যার কথা বলতেছি। সেইটা সেইভাবে যদি বোঝা না যায় তবে তা আমার বলার দোষ।

এই আমলে আইসা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কবিতা লেখা, সক্রেটিসের দর্শন অনুসরণ করা যেই রকম রোমান্টিসিজম, লালনের গান ভালো লাগার বরাতে তার ভাববাদের চর্চাও সেই রকমই।

কেননা লালন কোনো ধর্ম না। ধর্মের পরিবর্তন কাল অনুসারে ঘটে, ফলে তা রোমান্টিসিজমে চঙ্ক্রমিত হয় না। ধর্মের সামাজিক বর্তমানতা প্রশ্নহীন।

কিন্তু কাল্ট নিরেট, তার পরিবর্তন নাই। তার মূর্খতা, অবিচলতা ও ব্যাখ্যাহীনতা পরবর্তী যুগে বিকট গাম্ভীর্যে রূপ নেয়। যা দেখতে ধর্মের মতো লাগলেও মূলত অগভীর, ফাঁপা, সমাজ বিচ্ছিন্ন এবং নিষ্ঠুর।

Leave a Reply