সাহায্য না করলেও আপনই

“কিন্তু শোকোৎসবকারী এবং আত্মপ্রচারনাকারীর চেহারার নিখুত তফাৎটা আমাদের বোঝা দরকার। সমাজের উঁচু স্তরে নানা সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাওয়া অনেকেই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক খ্যাতিমানের বিশেষত: শিল্পীদের খবর না রেখে, তাদের সংকটের জায়গাটাকে এড্রেস না করে তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে তিনি তার কতো আপন ছিলো প্রমানে নিজেদের সাথে তোলা ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন। এতে সেই খ্যাতিমানের মৃত্যু কি মহিমান্বিত হয় নাকি তাঁর মৃত্যু নিয়ে আত্মপ্রচারণা, বানিজ্য হয়?”

কাজী জেসিন
এফবি কমেন্ট ১৩/৩/২০১৬

১.
প্রিয় কাজী জেসিন, যেই সমস্যাটা আপনি আনছেন তা আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের উদ্ভট একটা সমস্যা।

আমরা ভাবি, সচ্ছল ব্যক্তিরা আমাদের বন্ধু, তাই আমাদের বিপদে-আপদে তারা সাহায্য করবেন।

করবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু করতেই হবে তা আমরা বলতে পারি না। না করলেও তারা আপনজন হিসাবে সমাজে প্রচারিত থাকতে পারবেন। তাদের দিক থিকা তারা মনে করতেই পারেন এক দিন সাহায্য না করলেই কেউ আপনজন থিকা খারিজ হইয়া যায় না।

আমাদের নিদানের কালে আমাদের আপনজন বন্ধুবান্ধবরা আমাদের সাহায্য করবেন এইটা আশার কথা। এই রকম না হইলে তা আশাভঙ্গের কারণও হইতে পারে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি প্রয়োজনে হেল্প করে না এমন বন্ধুদের থিকা সাধারণত নিজেরে উইথড্র করি। কিন্তু যুক্তিসঙ্গত কোনো অভিযোগ আমি তুলতে পারবো না যে আমারে কেন ওরা সাহায্য করল না!

কেউ আমারে সাহায্য করবেন কিনা এইটা একান্তই তার অভিরুচির ব্যাপার। দাবি তাতে কাজ করে না।

২.
এমনিতে আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিকরা সচরাচর সব সরকাররেই সুবিধা অনুসারে মারা দিয়া থাকেন। বিধায় তারা সরকারের বন্ধুস্থানীয়ই থাকেন বটে। এই বা সেই সরকার আসেন যান। তারা থাকেন।

ফলে কোনো শিল্পীর বা সাহিত্যিকের দুর্দশায় যদি সমাজের উঁচু স্তরে সিঁড়ি বাইয়া উইঠা যাওয়া ঘনিষ্ঠ সামর্থ্যবানরা শিল্পীরে বা সাহিত্যিকরে সাহায্য না করেন বা তার অর্থনৈতিক সংকটে সাড়া না দেন তাদের আদৌ দোষ দেওয়া যায় না।

সাহায্য তো দেশব্যাপী সকল মানুষেরই কমবেশি দরকার। শিল্পী-সাহিত্যিকরা নাইলে একটু বেশিই তা পাইতেছেন। কিন্তু অন্য শিল্পীদের সাহায্য বা খয়রাত প্রাপ্তি সব শিল্পী বা সাহিত্যিকের দুর্দশায় হেল্পের যুক্তি বা নিশ্চয়তা দেয় না।

রফিক আজাদ ভাত দে হারামজাদা কবিতা লেখার পর আওয়ামী সরকারের সেই হেল্প না পাইবেন ও না চাইবেন এইটাই তো স্বাভাবিক ও রাজনৈতিক।

কিন্তু কবি রফিক আজাদরে হেল্প করবেন না বইলা তার মৃত্যুতে কেউ তাদেরকে আপন হিসাবে নিজেরে দেখাইতে পারবেন না কেন!

অবশ্যই পারবেন। এবং তা কেবলই আত্মপ্রচার না। (আত্মপ্রচার করলেও সমস্যা নাই অবশ্য।) যারা কবি রফিক আজাদের মৃত্যুর পর তারে নিয়া লিখতেছেন তারা রফিক আজাদেরও সম্প্রচার চালাইতেছেন, তা দেখা দরকার।

আমাদের গভীর সেলিব্রিটি নিবেদিত মন থিকা ব্যক্তিপূজারে বাদ দিতে পারলে আমরা তা দেখতে পাব। যে, সব লোকেরই বলার ব্যাপার থাকে। সেলিব্রিটি তাদের বিষয় মাত্র। সেলিব্রিটিরাও সাধারণত নিজেরেই হাইলাইট করতে চান, সাধারণের গল্প বইলা। তো এনারা চাইবেন না কেন!

কারো মৃত্যুর পর তিনি আমার কত আপন ছিলেনের সঙ্গে তারে আমি হেল্প করছিলাম কি করছিলাম নার কোনোই যোগ নাই। বহু আপন ভাই বা বোন আপন ভাই বা বোনদের সাহায্য করেন না। কিন্তু তারা আপনই থাকেন। থাকতে থাকেন।

১৩/৩/২০১৬

Leave a Reply