ছোটলোক যেভাবে আপনার লেখায় আছে বা যতটা আছে তা যদি সচেতন ভাবেই থাকে, সে জিনিসরে ‘শ্রেণীচেতনা’ বলা যায়।
ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের (১৯৪৮-২০১২) গল্প-উপন্যাসে ছোটলোক আছে মধ্যবিত্ত তারে যেইভাবে চায় সেই মিরর বা আয়নায় ভাসমান ব্যক্তি হিসাবে।
সে ব্যক্তির নিজের সত্তা অনুপস্থিত।
তার মন নাই সেখানে।
সে মিডল ক্লাসের পারিবারিক ছকের মধ্যে তার যতটুকু করণীয় তা জানাইয়াই অদৃশ্য।
বাস্তব কি এই রকম?
মিডল ক্লাস তারে যেইভাবে দেখে ছোটলোক কি সেই সেই রকমই?
না।
কাজেই ছোটলোকের উপস্থিতির কারণেই কারো সাহিত্যে ‘শ্রেণীচেতনা’র দেখা মিলবে এমন না।
আমার মূল্যবান অভিমত, হুমায়ূনের সাহিত্যে ‘শ্রেণীচেতনা’ নাই।
সেখানে ছোটলোকের মনগুলি মিডল ক্লাসের মন অনুসারে রূপান্তরিত বা বিকৃত।
২.
সমাজে নিজের শ্রেণীকে অন্য শ্রেণীগুলির সাপেক্ষে দেখতে পারার ক্ষমতাই “শ্রেণীচেতনা”।
হুমায়ূন উপন্যাসে এর ছাপ দেখা যায় কি?
হুমায়ূন বাদ দিয়া আর কার উপন্যাসেই বা তেমন দেখা যায়?
উপন্যাসে “শ্রেণীচেতনা” থাকতেই হবে এমন না। কিন্তু থাকলে সেইটা একটা বড় জিনিসরে হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা বোঝায়।
উপন্যাসে মিডল ক্লাস চরিত্রগুলির নিজের মত থাকাথাকি কিংবা তার দিনানুদৈনিক কাজকামের সুখপাঠ্য বিবরণ দিয়া শ্রেণী হিসাবে মিডল ক্লাসরে বোঝা হবে না।
যেমন ছোটলোক যখন নিজের মত থাকে, তার গান-বাজনা জীবনযাপন করে, সে তার কনটেন্টে মিডল ক্লাস বা অন্য ক্লাসগুলি নিয়া সচেতন না থাকলে সে নিজের ক্লাসরে বুঝতে পারল কি?
নিশ্চয়ই না।
কাজেই “শ্রেণীচেতনা” একটা উচ্চ বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাপার।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ ঔপন্যাসিকের তা ছিল না, এখনও নাই।
এই না থাকাটা স্বাভাবিক, তবে গৌরবের কিছু না।
৪/৮/২০২২