শিল্পসাহিত্য জিনিসটা পেটি বুর্জোয়ার। যা আমরা করি। পেটি বুর্জোয়া হিসাবে এইটা আমাদের যাপিত জীবনের অংশ।
অর্থনৈতিক ভাবে ছোটলোকদের কাছাকাছি অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে আমাদের এই সাধের শিল্পসাহিত্য রুচি ও বোধের রাজনীতিতে ছোটলোক হইতে ভিন্ন কইরা ও উর্ধ্বে তুইলা রাখে।
যেইটা হৃদয়ঙ্গম করতে না পারার কারণেই আমরা বুঝতে পারি না রবীন্দ্রনাথে হিরো আলম ঢুইকা গেলে কেন মিডল ক্লাস আর্ট-কালচাররা মড়াকান্না শুরু কইরা দেয়।
আমরা সামাজিক স্ট্যাটাসে প্রায় বড়লোকই হইয়া থাকি শিল্পসাহিত্যের বরাতে। তা আমাদেরকে বড়লোকদের সঙ্গে করমর্দন ও আলিঙ্গনের সুযোগ দান করে। কখনো লাগাইতেও দেয়।
শিল্পসাহিত্যের এই সংযোগ সুন্দর!
অনেকে এই বড়লোক সংযোগরে ঘৃণা করেন! আশ্চর্যই। তো তাদের এক খণ্ডাংশ এখন আর্ট আর সাহিত্যের মধ্যে নলকূপ বসাইয়া ছোটলোকের স্বার্থ উদ্ধারের ফলহীন রাজনীতিতে যুক্ত হইছেন! ভ্রাতৃপ্রতিম আর সব পেটি বুর্জোয়ারে দিয়াও তা করাইতে চাইতেছেন। “আসো শিল্পসাহিত্য দিয়া ছোটলোক বাঁচাই।” হাঃ হাঃ।
তাদের এই তৎপরতা পদ্ধতিগত কারণেই ছোটলোকদেরকে আত্মপরিচয় জলাঞ্জলি দিয়া মিডল ক্লাস রুচির অনুসরণকারী চাকর হইয়া উঠতে উদ্বুদ্ধ করে। তারা নিজেদের সংস্কৃতি থিকা দূরে সরতে থাকে।
আমাদের মিশনারী আর্ট-কালচার তৎপরতা ছোটলোকদেরকে তাদের জীবনের ভিত্তিমূল থিকা উৎখাত কইরা দেয়।
ছোটলোক না থাকতে পারে ছোটলোক না হইতে পারে মিডল ক্লাস, তৎপরতাহীন একটা না-শ্রেণী হইয়া না-আর্ট না-কালচারে ঝুলতে থাকে তারা।
২.
ধরা যাউক হালের বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিরো আলম ভাইয়ের কথা। উনি তালে মিডল ক্লাস রুচির দাস, কিন্তু জাতে ‘নিম্নবর্গ’।
এইটা একটু নতুনই বটে।
ওনার মিডল ক্লাসরে নকল করা শিল্পসাহিত্য দিয়া মিডল ক্লাস যত ত্যক্ত-বিরক্ত হইতেছে হইতেছে, তা সুন্দর ও কাজের বাট—তার চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে ছোটলোকদের গান-বাজনা ও প্রাত্যহিক জীবন।
কারণ, উনি মিডল ক্লাসের শিল্প ও সাহিত্য নামক অগ্নি বা আগুনরে ছোটলোকের দরবারে সুগম করতেছেন তার নিজের আধো মিডল ক্লাস ভাষা ও ভঙ্গি সহকারে। তা উনি যতই আপনাদের কথিত ‘বিকৃত’ উপায়ে হউক, সুগম তো করতেছেন!
তো এই এক আছেন হিরো আলম, মিডলক্লাস শিল্পসাহিত্য বা রবীন্দ্র নামক গোল্ডমাইনটিকে ছোটলোকদের দরবারে হাজির করার প্রজেক্ট লইছেন। আর আছেন লৌহনির্মিত মগজাধিকারী সাম্যবাদী বা সমাজতন্ত্রী ভাই ও বোনেরা ও তাদের কমরেডরা।
‘হিরো’ এবং ‘সাম্য’ দুই পক্ষই ধীরে ধীরে ছোটলোকদেরকে মিডল ক্লাস রুচির চাকরে পরিণত করতেছেন।
৩.
তো এই না কইরা ওনারা কী করবেন?
হিরো আলমও আর কিছু করবেন না, যেহেতু ছোটলোক বিধ্বংসী এই ধারায় অর্থ ও কীর্তি আসতেছে। আর সাম্যবাদীরা কী ঘোড়ার আন্ডাই বা উৎপাদন করবেন—মিডল ক্লাসের জন্যে মিডল ক্লাস শিল্পসাহিত্যের উৎপাদন-পুনরুৎপাদন ছাড়া?
তা পরে বলি। আপাতত তাদের ক্ষয় কামনা করি।
তাদের ক্ষয় হউক!
৩/৮/২০২২
(কমেন্ট করেন, ভালো লাগলে লাইক দেন ও শেয়ার করেন।)