উৎসর্গ: আনিসুজ্জামান
রাষ্ট্রনায়ক বা নায়িকারা মাঝে মাঝে দেশের লোকদের ভাষা ঠিক কইরা দেওনের রাষ্ট্রীয় অভিন্ন স্বার্থ মূলক চিন্তা কইরা থাকে।
ইতিহাসে এমন চিন্তকদের দেখা আকছার মিলে। পাকিস্তানের ধুরন্ধর নেতা জিন্নাও তেমন ভাইবাই উর্দু ভাষা চাপাইয়া দিতে চাইছিলেন বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীদের উপর। এই লোকের ঘটে আর একটু বুদ্ধি থাকতে পারতো। কিন্তু সিংহাসনে চড়লে লেজ আগা দাঁত নখ সব ইরেকটেড হইয়া থাকে। মাথা কাজ করে না।
আজ আপনারা যারা প্রমিত বাংলা ঠাইসা দিতে চাইতেছেন সকলের মুখে তারা ছায়া রাষ্ট্রনায়ক বা ছায়া রাষ্ট্রনায়িকা হিসাবেই তা করতেছেন ।
তা হবার নয়। বাস্তবতা — লোকে বলে বিদ্যমান বাস্তবতা — হইল এই যে একেক জায়গার মানুষ একেক ভাবে ভঙ্গিতে ভাষায় কথা বলবে।
তা চেনজ কইরা দেওনের মত অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আপনাদের গরিব রাষ্ট্র এখনো অর্জন কইরা উঠতে পারে নাই। ফলে রাষ্ট্র তাবেদার হিসাবেই থাকবে পিপলের। বড়জোড় গুণ্ডা তাবেদার। আমুল বদলানির হেডমাষ্টার এইটা হইয়া উঠবে না।
কিন্তু সাহিত্যিকদের মধ্যে যারা মাষ্টার মাষ্টারনি আছেন তাদের ছোট মাথায় এই রকম আগ্রাসী চিন্তা মাথাচাড়া দিয়া উঠতে পারে।
২.
সকলের ভাষা সকলে বুঝল কিনা সেই নিয়া সকলে চিন্তিত না।
সাহিত্য মালটি ব্যক্তির, রাষ্ট্রের না। রাষ্ট্র যখন সাহিত্য করে — যেমন হাসান আজিজুল হক বা বস্টুটো সৈয়দ শামসুল হক থিকা শুরু কইরা সকল প্রমিত মহাজনরা রাষ্ট্রের তরফের সাহিত্যই করেন — সে সাহিত্য প্রমিতই হবে সে নিয়া কোনো আপত্তি কেউ করে না।
কিন্তু ব্যক্তি যখন সাহিত্য করবে সেই সাহিত্য ব্যক্তির ভাষায়ই হবে। ব্যক্তি যেইখানকার খুশি সেইখানকার ভাষায় যেইভাবে খুশি সেইভাবে সাহিত্য করবে। কে বুঝল না বুঝল সেই সমস্যা সেই ব্যক্তি সাহিত্যিকের। হেডমাষ্টারদের নয়।
সে ব্যক্তি যদি আপনাদের বাংলাভাষীদের দেশে বইসা উর্দুতে সাহিত্য করে (আইচ্ছা উর্দু নিয়া তো আপনারা গরম যেন জিন্না না উর্দুই চাইছিল উর্দু ভাষা কায়েম করতে তাই বাদ দেন), চাকমাদের ভাষায়, ইংরিজ ভাষায় সাহিত্য করে সেই সাহিত্য রাষ্ট্রীয় সাহিত্য হবে না, হওয়ার দরকারও নাই। যারা নিজেদের সাহিত্য করে তাগোরে তাদের সাহিত্য করতে দেন।
সরকার আর রাষ্ট্রের জন্য আপনাদের প্রমিত পদলেহন তো থাকতেছেই। তাতে কি কেউ বাগড়া দিছে নিকি!
১/২/২০১৪