“যৌতুক বা পণ হল কন্যার বিবাহে পিতামাতার সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়া। ‘যু’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘যুত’ শব্দের অর্থ যুক্ত; বুৎপত্তিগত অর্থ হলো, পাত্র-পাত্রীর যুক্ত হওয়ার সময়ে অর্থাৎ বিয়ের সময় পাত্রীর জন্য যা কিছু মূল্যবান সামগ্রী দেয়া হয়, তা যৌতুক।”
‘যৌতুক একটি অভিশাপ’—বটে, কিন্তু কন্যাসন্তান তার নিজ পরিবার থিকা কোন ঘোড়ার আণ্ডাটি পাইয়া থাকে যৌতুকহীন বিয়া ব্যবস্থায়?
মেয়েদেরকে আপনারা অবশ্যই যৌতুক ছাড়াই বিয়া দিবেন কিন্তু উত্তরাধিকারক্রমে প্রাপ্য সম্পত্তির ভোগদখল থিকা যে সে বঞ্চিত হইতেছে তার সমাধান কী? পরাধীন নারীর স্বামীগৃহের অন্নগ্রহণ যদি শাস্ত্রসম্মত হয়, যৌতুক কেন অশাস্ত্রীয়?
যৌতুকের প্রাপ্য আইন্না দেওনের জন্য বউরে পিটায়, মাইরা ফেলায়—এগুলা অপরাধ। কিন্তু এই যে বাপ-মা-ভাইয়েরা মেয়ে বা বোনরে কোনো খরচা দিতেই রাজি হয় না যৌতুক নিষিদ্ধ হওয়ার আনন্দে এরে কেবল পরবর্তীকালীন পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচারের মইধ্যে না দেইখা কন্যাসন্তানের প্রাপ্য বিষয়ে পরিবারের দুই নাম্বারী হিসাবেও দেখা যাইতে পারে।
যৌতুকলোভী স্বামী ও তার আত্মীয়স্বজনের লোভের শাস্তি ‘যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন’ মারফতে দিয়া বেশ সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হইল বুঝলাম… কিন্তু এই নিষিদ্ধ যৌতুকের ফাঁকে কত নারীর বাপের বাড়ির সম্পত্তি যে তার ভাইয়েরা মাইরা দিতেছে তার কোনো ইয়ত্তা আছে কি?
ফলে দুইটা ব্যবস্থা দরকার:
ক. যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন-এর যথাপ্রয়োগ।
খ. নারীর বিবাহের সময়ই তার বাপের মায়ের ভাইয়ের বাড়ির পাওনাদেনার লিগ্যাল সমাধান।
২.
উত্তরাধিকার আইনের মইধ্যে কোথাও ঘাপলা আছে নিশ্চয়ই। যে কারণে যৌতুকের আগমন। নারী যেহেতু পিতামূলক সম্পত্তির অধিকারী সচরাচর বিয়ের সময়টায় বা আগে আগে হয় না, তাই তার স্বাধীনতাও আসে না। বরং নারী যাতে স্বেচ্ছাচারী অর্থাৎ স্বাধীন বা বহুগামী না হইয়া ওঠে তার জন্যই তারে সম্পত্তি দেওয়া হয় না তখন ও যোগ্য এবং একটিমাত্র পাত্রে তাকে বন্দোবস্ত করে পরিবার। দেখবেন নারীকে পরিবার কখনো একসঙ্গে একাধিক পাত্রে পাত্রস্থ করে না।
বিপরীত ক্রমে পুরুষের স্বাভাবিকতা যে সে বহু নারীকে বিয়ে করতে পারবে। আইন কইরা সেই সুযোগ সীমিত করা হইছে বটে, তার মানেই সমাজে এই ব্যাপারের স্বীকৃতি আছে। দেখা যায় পাত্রমহোদয় নারীর ভরণ পোষণ ও পাহারার বিনিময়ে যৌতুক দাবি কইরা বসে।
আমি বলতে চাইতেছি লিগ্যালি, নারীর ভরণপোষণ নারীর নিজের ব্যাপারই যদি না হয় তাইলে তো পাহারাদার বা দেখনেঅলা স্বামী এই কার্যক্রমের বিনিময় দাবি করবেই। যারা করতেছে না তারা সেই না করারে ভালোমানুষী বা শ্রেয় জ্ঞানে করতেছে না। অর্থাৎ ব্যাপারটা সাধারণ গুণ না, নরদের বা বরদের অর্জিত অবস্থান।
যদি আমরা যৌতুক বন্ধ করতে চাই তাইলে অগ্রে নারীকে বিয়ের বিনিময়ে ভোগ করতে দেওয়ার যে রীতি তা বরবাদ করতে হয়।
আমরা বিয়ের মতো পশ্চাৎপদ যৌনচুক্তির কাছ থিকা লিভ টুগেদারের স্বাস্থ্য আশা করতে পারি না। বিয়েকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান না করলে যৌতুক এত নোংরা লাগতে পারে না। বস্তুত বিয়ের ব্যবসা রূপটি যৌতুকের মধ্য দিয়া স্বচ্ছ রূপ লাভ করে। কিন্তু যেই বিয়ে থিকা সন্তান জন্মের মতো একটা ‘পবিত্র’ সামাজিক কাণ্ড ঘটতে পারে তারে ব্যবসা ভাবতে নারাজ সুপাত্র ও সুপাত্রী সন্ধানরত মধ্যবিত্ত সমাজ।
ঢাকা, ১৪ নভেম্বর ২০১১