ফাহাম আব্দুস সালামের ফকিন্নিরপুতায়ন ও প্রাসঙ্গিক কমেন্ট

ফাহাম আব্দুস সালাম ফকিন্নিরপুতায়ন বিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়া অন্যান্য

১. ফাহাম আব্দুস সালামের স্ট্যাটাস:

অনেক বছর আগে আমরা কয়েকজন বাচ্চা ছেলে ও মেয়ে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিতর্ক করি। খালেদা জিয়া আমাদের পুরস্কারও দিয়েছিলেন। সেই বিতর্ক বেশ কয়েক বছর আগে ‘ভায়রাল’ হয়েছিলো। সম্ভবত আপনারা অনেকেই দেখেছিলেন।

পুরা অনুষ্ঠানটাই য়ুটিউবে পাওয়া যায়। আমি এটা বলবো না যে আমরা সবাই বিশাল বিতার্কিক ছিলাম বা আহামরি কিছু করেছিলাম। কিন্তু একটা কথা সত্যি। ১২টা ছেলেমেয়ে – স্কুলের ছেলেমেয়ে – এতোক্ষণ ধরে কথা বললো – যতোদূর মনে পড়ে একজনও একবারের জন্য খালেদা জিয়া কিংবা জিয়াউর রহমানকে তেল দিয়ে একটা প্রশংসাও করে নাই। এরা কিন্তু সবাই স্কুলের ছেলেমেয়ে এবং মিনিমাম ২ সপ্তাহ সময় পেয়েছিলো স্ক্রিপ্ট লেখার।

একজনের মাথায়ও চামচামি করার প্ল্যান আসে নাই। আজকে এই একই অনুষ্ঠান হলে বুক চাপড়ে “হে পিতা” কলরব হতো কলবে কলবে – এলিয়ে পড়তো – ২/১ জন হয়তো মূর্ছা যেতো।

প্রায়ই ভাবি বাংলাদেশে এই লেভেলের ফকিন্নীরপুতায়ন কীভাবে হোলো? কখন হোলো?

আমার মনে হয় বাংলাদেশের সোসিওকালচারাল মিলিয়ুতে ফকিন্নিতার যে সর্বগ্রাসী গ্রহণযোগ্যতা, এর পেছনে টকশো আর টিভি নিউজের একটা বিশাল অবদান আছে।

২. আমার কমেন্ট:

কোনো প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিতর্ক করাটা যেমন রাজরাজরা কালচার তেমনি ভিন্ন এক প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিতর্ক করতে গিয়া “হে পিতা” কলরবও একই রাজরাজরা কালচার।

কাজেই স্মার্ট ফাহাম কথিত ‘ফকিন্নীরপুতায়ন’ যদি ঘইটা থাকে তা প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিতর্ক করার মাধ্যমেই ঘটে।

“হে পিতা” বইলা মূর্ছা যাওয়াটা বাড়তি বা অতিশয় বটে। তবে রাজরাজরা কালচার মাথায় রাখলে এও স্বাভাবিক ঘটনাই। আর অতিশয় বন্দনা সূক্ষ্ম বন্দনার চাইতে খারাপ তা বলা যায় না।

রুচি দিয়া রাজনীতির বিচার এক শ্রেণিগত শয়তানি।

এই দেশে সকল প্রধানমন্ত্রীকেই চামচামির জয়গানের মধ্য দিয়াই যাইতে হয় এবং হইছে। কেউ যদি বলে, খালেদা জিয়ার আমলে চামচামি ছিল না, কিন্তু শেখ হাসিনার আমলে আছে এইটা জাস্ট মিথ্যাচার। ফাহাম অবশ্য তা বলেন নাই।

ডিগ্রির ব্যবধান রাজনৈতিক অবস্থার সমানুপাতিকই তো হবে। সে আমলে বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগ “হে পিতা” ঘটতে দেয় নাই, আজ বিএনপি তাতে সক্ষম হইতেছে না।

এইটা প্রধানমন্ত্রী যিনি ছিলেন তার অবদান ভাবাটা হ্রস্ব দৃষ্টি, ফাহামের।

চামচামি আর অত সহজ না থাকাটা বরং পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কৃৎকৌশল। যে “তুমি যদি চামচামিই করো, তবে তোমাকে তা ঘোষণা দিয়াই করতে হবে বাছা।”

এইটা বাকস্বাধীন মধ্যবিত্তের জন্যে একটু লজ্জার হইছে। এই লজ্জাকেই সম্ভবত ফাহাম বলতেছেন ‘ফকিন্নীরপুতায়ন’। ফকিন্নির পুতের কাতারে গিয়াই বড়লোকের পুতের চামচামি করতে বাধ্য হওয়াটা মূলত এক সাম্যবাদ বটে।

স্বৈরাচারের কোলের মধ্যকার সুবিধাবাদীদের গণ সাম্যবাদ। ????

৩. ফাহাম আব্দুস সালামের কমেন্ট:

রাইসু

প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিতর্ক করাকে আপনি রাজরাজরা কালচার মনে করেন। আমি করি না। একেবারেই করি না।

সমাজে এক্সেলেন্সকে (এক্সেলেন্সের সংজ্ঞা যুগের সাথে অবশ্যই পাল্টেছে) উৎসাহিত করা একটা এইজ-ওল্ড কালচার। এই জিনিসটা সব সমাজে, সব কালে ছিলো। যেকোনো সমাজের এল্ডাররা এই কাজটাকে তাদের প্রিভিলেজ ও দায়িত্ব মনে করে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই এই কাজটা করে না।

সমাজের যেকোনো জিনিসকে আপনি যেহেতু ছোটোলোক আর বড়লোক, এই বাইনারীর বাইরে দেখতে অপারগ – আপনার মধ্যে যেকোনো কর্তব্যকে ক্ষমতার বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। আপনি মনে করেন যে এই কাজটা করে আপনি খুব বাহাদুরি করছেন। আমার হাসি পায় এই দেখে যে আপনি সম্ভবত জানেন না যে দিস ইজ নাথিং নিউ। উইলিয়াম অফ ওকাম, যখন তার নমিনালিজম নিয়ে লেখা পাবলিশ করেছিলেন, তখনই শত শত ব্রাত্য রাইসুর প্রোটো-টাইপ জন্ম নেয়।

আপনার কাছে কোনো হায়ার আইডিয়ালস নাই, আমার কাছে আছে। আপনি মনে করছেন যে খালেদা জিয়া ওখানে গিয়েছিলেন এসেনশিয়ালি, রাজারাজরার কালচার প্রসার করতে। একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অফিস শেষ করে সন্ধ্যা বেলায় স্কুলের বাচ্চাদের পুরস্কার দেয়াটা একটা চরম বিরক্তিকর কাজ। এই কাজটা আমি মনে করি যে তিনি করেছিলেন একটা হায়ার আইডিয়ালকে মাথায় রেখে যে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেয়া প্রধানমন্ত্রীর একটা কাজ। এবং এই হায়ার আইডিয়ালটাকে আমি শ্রদ্ধা করি।

খালেদা মনে করেন নাই যে উৎসাহ দেয়ার কারেন্সি হোলো এই ছেলেমেয়েগুলাকে প্রতিদান হিসাবে চামচামি করতে হবে (মনে করলে – কেউ না কেউ আমাদের জানাতো স্ক্রিপ্টে জিয়ার নাম নিতে হবে) – আজকের কালে যেটা রেওয়াজ। এই ডিস্টিংকশন বোঝার ক্ষমতা ও ইচ্ছা কোনোটাই আপনার নাই। কারণ আপনার মধ্যে কোনো ডেফিনিশান নাই। য়ু উইল নেভার ডিফেন্ড এনিথিং। ওয়েল – আমি জানি আপনার ও আপনার যে প্র্যাকটিস – তার পরিণতি কী – কারণ ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনে লাস্ট ৯শ বছরের অভিজ্ঞতা কী – কিছুটা হলেও আমি বুঝি।

খুব সংক্ষেপে বলি। পৃথিবীর সব কালে ব্রাত্য রাইসুদের মূলত একটাই গতি: কেউ যদি আপনাকে বলে যে তুই বেটে – আপনি বলবেন – হাইট বলে কিছু নাই – এটা সমাজের সৃষ্টি – বড়লোকদের সৃষ্টি – ছোটোলোকদের দাবায়া রাখার জন্য (একেকটা সমাজে এই ‘ছোটোলোক’কে প্রতিভাত করা হবে একেক উদাহরণ দিয়ে)

এই যে কমপ্লিট ব্রেকডাউন অফ ‘ডেফিনিশন’ – এর পরিণতি কী – আপনার কোনো ক্লু নাই বলে আমার অনুমান। আমার আছে। আছে বলেই পার্সোনাল লেভেলে এর বিপদ কী – আমি বুঝি। সেজন্যেই আমি সব সময়, হায়ার আইডিয়ালস যে ‘আছে’ (আমি সেটা ছুঁতে না পারি – ঠিকাছে – কিন্তু হায়ার আইডিয়ালস আছে) – সে নিয়ে বকবক করবো – যেন সমাজে স্বপ্নটা জারি থাকে। আর আপনি আপনার সন্দেহবিধুর চোখ দিয়ে দেখবেন যে কাজটা আমি করছি ক্লাস-বাইনারীকে অক্ষয় করার জন্য।

৪. আমার কমেন্ট:

Faham Abdus Salam

আমি করি, প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিতর্ক করাকে খুবই রাজরাজরা বা রাজারানি কালচার মনে করি।

“সমাজে এক্সেলেন্সকে উৎসাহিত করা একটা এইজ-ওল্ড কালচার” বলতে গিয়া আপনি যেখানে থামলেন, আমি তারে আগাইয়া নিয়াই বলতেছি, এইটা রাজারানিদের আমল থিকা চইলা আসতেছে।

রাজারানিরাও সমাজে এক্সেলেন্সকে মূল্য দিয়া নাচ, গান, তর্ক ও কৌতুকের আসর বসাইতেন। এখন প্রধানমন্ত্রীরা নিজেদের বৈঠকে এমন আসর না বসাইলেও মিডিয়ার তেমন তেমন আসরে তারা রাজারানি মূলক পৌরহিত্য করেন।

আপনি বলেন, গণতন্ত্র অনুসারে কে বিতর্ককারীদের এক্সেলেন্সকে মূল্যায়িত করবে?

যার বিতর্কের হায়ার এক্সেলেন্স আছে সেই তো? প্রধানমন্ত্রী তো না। আর যদি প্রধানমন্ত্রীকে তা করতে হয় তাইলে কেন তারে রাজারানি কালচার বলবেন না?

প্রধানমন্ত্রী কীসের বিতর্কের প্রতিভা যে তিনি এই বিষয়ক এক্সেলেন্সকে উৎসাহিত করবেন?

অর্থাৎ এই যে বিতর্ককারীদের মনে ক্ষমতা বা রাজারানিদের আশীর্বাদ বিতর্কের ক্ষেত্রে কোনো মহীরূহের উৎসাহের চাইতে অধিক উৎসাহ জোগায় এইটারেই বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর তরফে বিতর্ককারীদের প্রতি উৎসাহ-ঘুষ।

হিটলারও এই রকম উৎসাহ যোগাইতেন গেস্টাপোদের।

বাহাদুরির কিছু নাই। শত শত প্রোটো-টাইপ যদি একই কথা বলে তা সে কারণেই ভুল, এই চিন্তা বায়াসড চিন্তা।

আমি বলি না, রাজারানি কালচার থেকে যেই যেই অনুষ্ঠান বা অভ্যাস গণতান্ত্রিক সমাজে আসছে তারে বাদ দিতে হবে। কিন্তু স্বীকার করা ভালো যে তা রাজারানি রূপেরই বিবর্তন।

প্রধানমন্ত্রী জিনিসটাই আমাদের মতো দেশে রাজারানি কালচারের নবীন রূপ। আমি এমনও শুনছি আগের কোনো কোনো প্রধানমন্ত্রী তাদের সামনের চেয়ারে কোনো কোনো মন্ত্রীকে বসার অনুমোদন দিতেন না!

এখন এই কালচাররে আপনার মতো কেউ কেউ রুচিবান পশ্চিমের একটা শেইপ দিতে চাইতেছেন। যেই থিকা ব্যক্তিপূজা ইত্যাদিরে আপনারা খারাপ দেখাইতে তৎপর। যদিও পশ্চিমেই সবচাইতে বেশি ব্যক্তিপূজা চলে। তবে তা যোগ্যতা বা অ্যাক্সেলেন্সের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ‘অথেনটিক ব্যক্তিপূজা’ বা অথেনটিক “হে পিতা” আপনাদের দরকার! হাঃ হাঃ।

আমার বক্তব্য ছিল, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজেও এবং প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কদর্শন এর সবই রাজারানি কালচারের অংশ, তাইলে আপনি কী প্রকারে বলবেন “হে পিতা” মূলক বাড়তি চামচামিই কেবল চামচামি আর বাকিটা সহি গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার?

রাজারানিদের কোনো হায়ার আইডিয়ালস ছিল না, প্রধানমন্ত্রী খালেদারই শুধু ছিল তা আপনি নিশ্চয়ই বলেন নাই। সুতরাং কোন হায়ার আইডিয়ালস মাথায় রাইখা রাজারানি বা প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার দিতে যাবেন বা বিতর্ক শুনতে যাবেন তার উল্লেখ অহেতুক।

এতে শুধু আপনার শ্রদ্ধার কথাটুকু জানা গেল। সুন্দর শ্রদ্ধা। প্রধানমন্ত্রীদের হায়ার আইডিয়ালসে শ্রদ্ধা, রাজারানির হায়ার আইডিয়ালসে শ্রদ্ধা নাই! গুড। হতেই পারে।

প্রধানমন্ত্রীর সামনেই যদি বিতর্ক করতে বাধ্য হইতে হয়, তবে আর আলাদা ভাবে চামচামি না করার আসলেই অর্থ নাই।

আপনার যে ডেফিনেশন ‘ফকিন্নিরপুতায়ন’ তারেই আমি ব্যাখ্যা ও খর্ব বা বেটে করলাম লেখায়।

আপনার ডেফিনেশনকে অকার্যকার দেখানোর জন্যে আমার মধ্যে ডেফিনেশন থাকতে হবে কেন? যদি ডেফিনেশন জিনিসটারে আমি নাই বুঝি তাইলে আপনার ডেফিনেশনের সমস্যা কীভাবে ধরলাম?

হইতে পারে আমার ধরায় ভুল আছে বা কিছু হয় নাই, কিন্তু আপনি নামছেন আমারে নিয়া, যে কেন আমার মতো লোকের দ্বারা আপনার ডেফিনেশন ধোলাইকরণ অসম্ভব বা অনুচিৎ!

কারণ দেখাইলেন যে আমার ‘এই’ ‘এই’ দোষ আছে!

আমি কী রকম এইটা এইখানে তখনই দরকার পড়বে যখন আমার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে যাইতেছেন।

আমার যখন আপনার সংজ্ঞা বা ‘ডেফিনিশন’-এর বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান ও বক্তব্য আছে, তখন আমি নমশূদ্র বা রাজার সন্তান হওয়ার কারণে আপনার (ফাহাম-এর) কোনো সমস্যা নাই, এই বিলাসের জায়গা কোথায়?

আপনি কি একটু ঘাবড়াইছেন নাকি? আমি ভাবছিলাম আপনি যথেষ্ট স্মার্ট।

বিষয় বাদ দিয়া বিষয়ীর প্রতি যে আপনার প্রতিক্রিয়া তা অবশ্যই আপনার ‘হায়ার এক্সেলেন্স’!

এইটা আপনার রুচির সঙ্গে যায় না, এমন একটা মজার কথা বটে। আমি কী বলছি তা এড়াইয়া আমি কী বলতে পারি তেমন কথামালার আশ্রয়গ্রহণ আসলেই আপনারে মানায় না।

যখন আমার এই সাধারণীকরণ আপনার জন্যে প্রয়োজন হইয়া দেখা দেয় তখন আমি বলবো “আমার অভিযোগটা কী আপনার লেখার প্রতি” তা আপনি এড়াইয়া যাইতেছেন। হয় সচেতনভাবে, নয়তো নার্ভাসনেস বা ইগো থিকা। আপনি যেহেতু নেতা টাইপের মানুষ তা আপনারে আপনার অনুসারীদের কাছে ছোট করবে।

কুত্তায় কামড়াইতে আসলে কুত্তা কেন খারাপ, সেই খারাপের কারণেই যে সে কামড়াইতে পারে না—এমন লজিক আপনার কথিত ‘ফকিন্নিরপুতায়ন লজিক’ বললে কি খুব ভুল হইয়া যাবে?

ক্লাস-বাইনারির জায়গাগুলিরে ক্লাস-বাইনারি দিয়াই তো বুঝতে হবে। আপনি যখন বাইনারি সংজ্ঞা ‘ফকিন্নিরপুতায়ন’ প্রস্তাব করবেন তারে হায়ার আইডিয়ালস দিয়া বরণ করতে হবে কেন!

আপনি নিজেই তো এই সংজ্ঞায় ক্লাস-বাইনারি দিয়া প্রভাবিত।

ধন্যবাদ।

২৯/১১/২০২১

৫. আরিফুল হোসেন তুহিনের কমেন্ট

Bratya Raisu My two cents on “রাজরাজরা কালচার” :

“রাজরাজরা কালচার” বলার মাধ্যমে কোন বিষয় আনকনডিশনালি খারাপ হয়ে যায় না। ডেমোক্র্যাসির বা পিপলের কনসেন্ট এর কনসেপ্ট এর সাথে মানুষের ইন্ডিভিজুয়াল স্কিল কে পৃষ্ঠপোষকতা করার কোন মোরাল সংঘর্ষ নাই।

রাজরাজড়ার যুগে মানুষ পায়ে হাটত দেখে ডেমোক্র্যাসিতে মানুষ হাতে হাঁটা শুরু করে না।

মনার্কির সাথে ডেমোক্র্যাসির সংকটটা সোশাল কন্ট্র্যাক্টের সমস্যা। কনসেন্টের সমস্যা। তার মানে এই না মনার্কির সময়ের সমাজ/রীতি/ মানুষকে রিওয়ার্ড এবং ইনসেন্টিভ দেয়ার স্ট্রাকচার ভুল আনকন্ডিশনালি বাতিল হয়ে যায়।

যেমন ধরেন পেইন্টিং। এইটা একসময় এলিট বড়লোকের পৃষ্ঠপোষকতায় হইত। এখন কিছুটা স্টেইট ইনভেস্টমেন্ট( সরকারের ফান্ডিঙ্গে আর্ট স্কুল চলে, পূর্ণ ফাণ্ডিং বা আংশিক) আর রিওয়ার্ড আসে ওপেন মার্কেট থেকে। সুতরাং পেইন্টিং উৎপাদ এবং ডিস্ট্রিবিউশন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসলেও ভালো পেইন্টিং ইটসেলফকে কে “রাজরাজড়ার কালচার” হিসেবে বাতিল করতে চাইলে, অথবা রাজরাজড়ার আমলে আকা পেইন্টিঙকে ঐ যুগে আকার দোষে বাতিল করতে চাইলে সেইটা হাত দিয়া হাটার মত একটা ব্যাপার হয়।

আপনি অবশ্যই এলাউড হাত দিয়া হাঁটতে।

কিন্তু কেউ যদি হাত দিয়া হাটতেছেন দেখে আপনাকে ইডিয়ট বলে, তখন গোস্বা না করলেই হইল। অথবা করতে পারেন গোস্বা, আপনার ইচ্ছা।

এলিটিজম ইন ইটসেলফ কিন্তু সমস্যা না। মানুষের স্কিল ইত্যাদি সমান ভাবে ডিস্ট্রিবিউটেড থাকে না। এলিটিজমের ফলাফলটা কি সেইটা হইতেছে স্ক্রুটিনির বিষয়। প্রসেস যাতে ফেয়ার থাকে, এলিটরা যাতে কনস্ট্রেইনড থাকে। সমাজের সবাই সচেতন ভাবে আউটলায়ার হইতে না চাইলে সেই সমাজ স্বাভাবিক না, টোতালিটারিয়ান। টোটালিটারিয়ান গভার্নমেন্ট এর যায়গায় তখন আছে টোটালিটারিয়ান সমাজ। যেই সমাজ যেকোন কিছুকে শুধুমাত্র এলিট নন এলিট বাইনারি বিচার করে। এই ধরনের গেইটকিপিং করার জন্যে সমাজের মধ্যে একধরনের কনসানট্রেটেড ক্ষমতার অস্তিত্ব দরকার হয়, নাগরিকরা তখন একজন আরেকজনের বিহেভিয়ার পুলিশিং করে, নির্দিষ্ট বাক্সের মধ্যে সবকিছু রাখতে চায়।
.

৬. আমার কমেন্ট:

Ariful Hossain Tuhin আপনার আলাপের প্রথম অংশ হুদাই হইছে। কার উদ্দেশে বললেন? আমি তো বলছিই: “আমি বলি না, রাজারানি কালচার থেকে যেই যেই অনুষ্ঠান বা অভ্যাস গণতান্ত্রিক সমাজে আসছে তারে বাদ দিতে হবে। কিন্তু স্বীকার করা ভালো যে তা রাজারানি রূপেরই বিবর্তন।”

আর আপনার দ্বিতীয় অংশ বরং ফাহামরে বরাদ্দ দেন:

“এই ধরনের গেইটকিপিং করার জন্যে সমাজের মধ্যে একধরনের কনসানট্রেটেড ক্ষমতার অস্তিত্ব দরকার হয়, নাগরিকরা তখন একজন আরেকজনের বিহেভিয়ার পুলিশিং করে, নির্দিষ্ট বাক্সের মধ্যে সবকিছু রাখতে চায়।”

বিহেভিয়ার পুলিশিং কইরাই দিন যায় ফাহামের। আপনি তা দেখতে পান না নাকি?

আমার এই কমেন্টগুলিতে কোন জায়গায় “বিহেভিয়ার পুলিশিং” আছে তা বইলেন।

যা আমি বলি নাই বা করি নাই সে বিষয়ে যদি শিক্ষা দিতে চান লোকে আপনারে যদি “ইডিয়ট বলে, তখন গোস্বা না করলেই হইল। অথবা করতে পারেন গোস্বা, আপনার ইচ্ছা।”

তবে আমি আপনারে ইডিয়ট বলবো না, বলবো অন্য পক্ষের কথা আপনি পুরাটা শোনেন না। অংশ লইয়া কাজ করেন।

Leave a Reply