নারীবাদ কেন খারাপ?

নারীবাদ খারাপ কারণ এইটা যত না নারীকেন্দ্রিক তার চাইতে বেশি পুরুষকেন্দ্রিক বিষয়।

সমাজে ও রাষ্ট্রে পুরুষ কী করবে বা কী করবে না তার তালিকা তৈরি করে নারীবাদ।

পুরুষের সম্মতি, স্বার্থ, ইচ্ছা ও তর্কের মূল্য না দিয়াই তা করে।

সমাজে নারীর যে ক্ষমতাহীনতার অবস্থান তা থেকে উত্তরণের চাইতে নারীবাদ পুরুষকে সেই ক্ষমতাহীন অবস্থানে স্থানান্তরেরই চেষ্টা বেশি করে। তাতে সমাজের যে সমস্যা, দুর্বল একটি পক্ষের পরাধীন অবস্থা, তার সমাধান ঘটে না।

বরং নিজেদেরকে ধারাবাহিক ভাবে ভিকটিম প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে নারীবাদী নেতৃত্বগুলি বুদ্ধি, চিন্তা ও ইচ্ছা দিয়া সমাজকে সামাজিক সম্পর্ক গবেষণার প্লাটফর্মে পরিণত করে। এই কাজে তারা ক্ষমতাকেন্দ্র, প্রশাসন, অ্যাকটিভিস্ট ও আইনজ্ঞদের সহযোগিতা পায়।

নারীবাদীদের ব্যাখ্যা বা দূতিয়ালির মাধ্যমে আপাত দূরবতী ক্ষমতাচক্র আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো বেশি জনঘনিষ্ঠ হইয়া ওঠে। অর্থাৎ সামাজিক সম্পর্কগুলি আইনভিত্তিক হওয়ার দিকে ঝুঁইকা পড়ে। ধীরে সমাজ লুপ্ত হয়, অধিকার ভিত্তিক আইনি সমাজ বড় হইয়া দাঁড়ায়। ফলে কালচার বা সংস্কৃতি লোপ পায়। যৌনতা, শিল্প ও সাহিত্য নারীবাদী নৈতিকতার সম্মতি-অসম্মতির জালে আবদ্ধ হইয়া পড়ে।

এই রকম জগতে (সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প ও সাহিত্যহীন কেবলই অধিকার ও সম্মতির জগৎ) নারী ও পুরুষ উভয়েই ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর দ্বারা তৈরি কৃত্রিম ও আইনের হুমকিযুক্ত “সমতা” নামক স্বেচ্ছাচারের অধীনে ‘পেপার পিপল’ হিসাবে বসবাস করতে বাধ্য হয়।

পরিবার নামক যে অসম ক্ষমতা, অধিকার ও সম্মতির সিস্টেম বা প্রতিষ্ঠান, যা দিয়া তৈরি সমাজ, যার কেন্দ্রে থাকে পুরুষ বা পিতা, তা ভাইঙ্গা পড়ে।

এভাবে নারীবাদ সমাজকে কাঠামোহীন করে। অর্থাৎ সমাজের যে একক সেই পরিবার থেকে ক্রমশঃ এক ব্যক্তির তথা পিতা বা স্বামীর ক্ষমতাকে অবলুপ্ত করে।

সমাজে বড় ছোট থাকে না। কেউ আর কারো উপর নির্ভরশীল থাকে না। কাজেই সম্পর্কের বিনিময়ও অদৃশ্য হইতে থাকে। সকলে সমান থাকার কারণে পরিবার বা সমাজ বইলাও কিছু থাকে না। একটা কৃত্রিম একবাড়িতে বা একপাড়ায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে।

ফলে পরিবার ও সমাজের জন্যে যে অর্থে প্রাইভেসি বা কাঠামো নষ্টকারী রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, দল ও আইন খারাপ সেই একই অর্থে নারীবাদও খারাপ।

নারীবাদ মূলত পুরুষদের আচার-আচরণ শোধরানো ও শেখানোর নৈতিক তত্ত্ব দেয়। এবং সে আলোকে দেশের আইনের মধ্যে নতুন নতুন নৈতিক সূত্র যুক্ত করতে থাকে।

এগুলি কেমন খারাপ বিষয় তা বুঝতে হলে কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে। ভাবতে হবে পুরুষরা পুরুষবাদ তৈরি করতে একই ভাবে রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন ও আইনজ্ঞ ও অ্যাকটিভিস্টদের আশ্রয় নিতেছে।

মানুষের আইনি অধিকারের সমতাকে নৈতিক গোষ্ঠীর সঠিকতা দিয়া নির্ধারণ করা যাবে না। মানুষের সমতা তৈরির আগে নারী-পুরুষ সমতার লড়াই মূলত শ্রেণী, বর্ণ, রুচি ইত্যাদির প্রয়োজনীয় লড়াইকে অবান্তর কইরা দেওয়ার অনুশীলন। মূলত পুরুষতন্ত্রের মধ্যে ক্ষমতাবান নারীদের নিজ নিজ অবস্থান তৈরি কইরা নেওয়ার সুবিধা গ্রহণ।

সমাজ যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক, ফলে এর ভাঙন বা উচ্ছেদ মানে সমাজেরই উচ্ছেদ। আমরা যদি সমাজ রক্ষা করতে চাই বা সভ্যতা রক্ষা করতে চাই তবে পুরুষতন্ত্রের ক্ষমতাকাঠামোর মধ্যেই তা রক্ষা করতে হবে।

আরো পড়ুন: সভ্যতা কেন পিতৃতান্ত্রিক?

নারীর অক্ষমতা বা দুর্বলতা কাটানোর দায়িত্বও সমাজেরই, নারীবাদ বা অ-সমাজের নয়।

পুরুষতন্ত্রের দুর্বলতা, অবিচার, অন্যায্য সমস্যাগুলি ঠিকঠাক করতে হবে। তার বদলে পুরুষতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটাইলে সমাজ থাকবে না। কারণ সমাজ পুরুষতান্ত্রিক।

একই সঙ্গে সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য চাইবো, আবার পুরুষতন্ত্রের উচ্ছেদও চাইবো তা হয় না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীবাদী সমবায় সমিতি দিয়া পরিবারের কাজ চলবে না, সভ্যতায়।

নারীবাদ নিপাত যাক!

২১/১০/২০২১

Leave a Reply