সমাজে কারো কোনো কর্তব্য নাই

সমাজে কারো কোনো কর্তব্য নাই।

কেউ আগ বাড়াইয়া দায়িত্ব নিতে গেলে তখন সে নেয়। এইটা সমাজ দখলের মতোই ব্যাপার।

ধরেন সমাজে চোর আছে, হীনম্মন্য আছে, ঘুষঘোর আছে। নানান খারাপ লোকের বাস সমাজে। আপনি চান সমাজে এইরকম খারাপ লোকেরা না থাকুক।

এই না চাওয়া কি আপনারে কর্তব্য নির্ধারণ কইরা দেয় কোনো?

না, দেয় না। সমাজ এই রকম কোনো দায়িত্ব আপনার উপর অর্পণ করে না।

কেননা সমাজ চোর, বাটপার, বে.শ্যা, দুর্নীতিবাজ, খুনী, ডাকাইত, ভাল মানুষ, ভালো মেয়ে সবাইরে নিয়াই সমাজ।

কেবল ভাল বা মন্দের সমাজ হয় না। আপনি শুধু নিজের বা দলের স্বার্থ মোতাবেক কর্তব্য পালন করেন, নাম দেন সমাজের।

আপনি যদি মনে করেন সমাজে খারাপ লোক থাকতে পারবে না, তাইলে সেই খারাপ লোকেরাও ভাবতে পারে সমাজে ভালো লোক থাকতে পারবে না।

কিন্তু সমাজে সবাই থাকতে পারে, সে কারণেই সমাজে কারো কর্তব্য কিছু নাই।

আইন কানুন সমাজের জিনিস না। ওইটা প্রশাসন বা রাষ্ট্রের বিষয়। ওইখানেও আপনার কোনো কর্তব্য নাই। তবে সাবধানতার ব্যাপার আছে, যাতে আপনি আইন ভাইঙ্গা না ফেলেন।

ভাঙলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। যে বিষয়ে ফেইল করলে শাস্তি পাইতে হয় তা ভীতির জিনিস, কর্তব্যের বিষয় না। এরে বলে বাধ্যবাধকতা।

আইন বা প্রশাসন বা রাষ্ট্রের দেখার বিষয় সমাজে কেউ যাতে আইনের সমান্তরাল শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না চায়, না পারে।

কেউ যাতে কারো উপরে কর্তব্য না চাপাইয়া দেয়।

২.
কর্তব্য কর্ম সমাজরে পিছাইয়া রাখে বা আগাইতে দেয় না।

সমাজরে ভাল ভাবে রান করাইতে হইলে প্রথমে ধইরা নিতে হবে কেউ বিনা পয়সায় পরিশ্রম দিবে না। পয়সার বিনিময়ে কর্ম করলে তারে আর কর্তব্য কর্ম বলার দরকার নাই।

আমাদের সমাজ কল্যাণমুখী অর্থনীতির ফাও খাওয়া সমাজ। যে কারণে উন্নতি কম।

যেইসব সমাজে প্রতিটা কাজের জন্যে পেশাজীবী থাকে বা পয়সা দিতে হয় সেসব সমাজে অর্থের সঞ্চালন বেশি তাই সেগুলি অগ্রসর সমাজ।

সমাজে যারা কর্তব্য হিসাবে কর্ম করে তারা যার কাজ তারে করতে দেয় না। অন্যের কাজ চুরি করে তারা।

ফলে প্রফেশনালিজম বা যথাকর্ম গইড়া ওঠে না সমাজে।

দয়া বা করুণা বা আতঙ্ক থিকা যেই কাজ করে মানুষ তা কর্তব্য কর্ম থিকা আলাদা।

রাস্তায় দুর্ঘটনায় আমার ঠ্যাং ভাঙলে যে ফাহাম আব্দুস সালাম আগাইয়া আসবেন সেইটা ফাহাম সাহেবের ভবিষ্যৎ ঠ্যাং ভাঙার দুশ্চিন্তা থিকা উৎপন্ন দয়া।

এইটারে কর্তব্য কর্ম বলতে চাই না।

৩.
আমি এইখানে দয়া, করুণা বা আতঙ্ককে কর্তব্য হিসাবে বিবেচনা করতেছি না, এইটুকুই। কর্তব্যকে দার্শনিকভাবে বুঝতে না পারলে সমাজে মানুষের অধিকাররে বোঝা যাবে না।

কর্তব্যের বিনিময়ে কেউ অধিকার অর্জন করে না। যদি অধিকার জন্মগত হয় তবে কর্তব্য ঐচ্ছিক। সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে তা থাকে না।

আমাদের এইখানে কর্তব্যকে সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে গিলানো হয়। কর্তব্য যদি ঐচ্ছিক বা ব্যক্তির সাবজেক্টিভ জিনিস হয়, তারে সামাজিক বা সামাজিক কর্তব্য বলা যায় না।

১৮-১৯/১০/২০২২

Leave a Reply