বাঙালী-মুসলমানকে কি তবে বাঙালী-নমশুদ্র-হিন্দু-মুসলমান হইতে হবে!

জাতীয়তাবাদ অন্যরে ছোট না কইরা আগাইতে পারে না। এই দেশে হিন্দুরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু বটে তবে তারাই বাঙালী জাতীয়তাবাদের অগ্রসেনা। বাঙালী হইয়া ওঠা উচ্চকণ্ঠ ও হীনম্মন্য মুসলমানের পক্ষে সাংস্কৃতিক বাঙালীত্ব রাখতে গেলে হিন্দুর পথেই তাকে যাইতে হয়। এবং সে যেহেতু পূজা অর্চনা করতে পারে না সুতরাং ইসলাম-বিরোধীতাই তার পূজা হইয়া দাঁড়ায়। আমাদের সংস্কৃতির সাধনাও সেই পথেই বিকাশমান। এর বিরুদ্ধে যে আরবপন্থী গভীর মুসলমান আর আমেরিকাপন্থী সেক্যুলার-আমরা তাদের কোনো কালচারাল অভয়ারণ্য না থাকার কারণে হিন্দুত্ববাদী মুসলমানদের সাংস্কৃতিক শক্তি প্রতাপশালী। এর সমাধানে ফরহাদ মজহার ও অন্যরা যে বাউল ফকিরদের শরণাপন্ন হন তা খুব স্লো কাজ করে। এখন মুসলমানদের উদারতা, বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে গ্রহণ ইত্যাদি দেখানোর চাইতে হিন্দু সংস্কৃতির নব্য জাতিভেদ, সংখ্যালঘুদের প্রতি অনুদারতা, মানুষকে ঐতিহাসিকভাবে দেখার প্রায় নিয়তিবাধিত দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদির সমালোচনা শুরু করা যাইতে পারে। কোন কোন পয়েন্টে মুসলমান বাঙালী আদি হিন্দু বাঙালীর তুলনায় অস্পৃশ্য অবস্থায় বিরাজ করে তা সামনে নিয়া আসা যায়।
-ব্রাত্য রাইসু

এই যেমন উপরে ব্রাত্য রাইসুর মন্তব্যগুলো পড়লে মনে হবে হিন্দু বুঝিবা এক অভিভাজ্য সম্প্রদায়। এইখানেই আপনেরা গোল্লা খাইলেন। যদি জানতেন , আপনাদের দেশ থেকে আমাদের দেশে আসা দলিত নমসূদ্র হিন্দুরা ক্রমেই হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে এক বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছেন ( অথচ বাম পন্থী নয়)।
-সুশান্ত কর

১.
আমা কর্তৃক “হিন্দু সংস্কৃতির নব্য জাতিভেদ” বিষয়টি উল্লেখ করার পরেও কেন সুশান্ত কর আমার মন্তব্যগুলাতে “হিন্দু বুঝিবা এক অভিভাজ্য সম্প্রদায়” দেখতে পান তা এক বিস্ময়!

২.
হিন্দুরে অবিভাজ্য আকারে এইখানে দেখা হইতেছে না। যে হিন্দুর পথে মুসলমান বাঙালী জাতীয়তাবাদীরা ইসলাম-বিরোধীতার পথে যাইতেছেন সে হিন্দু নিশ্চিতই নমশুদ্র হিন্দু নন—হিন্দু বললেই হয় তারে। ফলে গন্তব্যের হিন্দু এইখানে বাঙালীপন্থী মুসলমানদের দ্বারা আগেই ভাগ হইয়া যান। বিভাজিত হিন্দুও হিন্দু নামেই প্রকাশিত থাকেন। হিন্দুপন্থী মুসলমান আর যারা হিন্দুপন্থী নন উভয়েই মুসলমান বটে—বিভাজিত অবিভাজিত কিনা সে প্রশ্ন বেশ প্রাথমিক। তার উল্লেখ আলাদা কইরা প্রয়োজন পড়ে না। কারণ দুই মুসলমানের দ্বন্দ্ব নিয়াই আলাপ। এখন সুশান্ত কর যদি তাঁর ভাগ করা হিন্দুর পন্থে না নিয়া নমশুদ্র হিন্দুর পথে মুসলমানদের চালনা করেন তাতে মুসলমানের বাঙালীত্ব বিষয়ক হীনম্মন্যতার গোল্লা আর খাইতে হবে না নাকি! বাঙালী হইতে চাওয়া মুসলমান অবিভাজ্য হিন্দুর কি নমশুদ্র হিন্দুর পথেই যাউক তাতে ইসলাম-বিরোধীতার পূজা হয় না সমাপন।

তো নমশুদ্র হিন্দুরা আর হিন্দু নন তাইলে! আর মুসলমানরা সব এক? নমশুদ্রের হিন্দুত্বকে যেন হিন্দু নয় রূপ ছাড় দিয়া দেখতে হবে! বিভাজিত কইরা দেখলেই হিন্দুত্ব আলতো আর সফট হইয়া আসে না তো। নমশুদ্র হিন্দু হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে বড় শক্তি হইয়া যদি তারা মুসলমানদের পক্ষে আদৌ না দাঁড়ান তাইলে সেই নমশুদ্রীয় হিন্দুত্ব কোথায় অবিভাজ্য হিন্দুত্ব থিকা বিভাজিত হইয়া আছে? এই নমশুদ্র হিন্দুরা কি অহিন্দু হইতে চাইতেছে? মুসলমান হইতে চায়? মুসলমানরা তো হিন্দু হইতে না পাইরা মুসলমান হওয়ার গোল্লা খাইতেছে না যেই হিন্দুত্বের গোল্লা নমশুদ্ররা খাইতেছেন। তাদের উচ্চবর্ণীয় হিন্দু হইতে না পারার বেদনা ঘুইচা গেলে তারা যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একাট্টা হইবেন না তা কি নমশুদ্র হিন্দুর ধর্মগ্রন্থে আর নেতানেত্রীতে উল্লেখ আছে নাকি! যেই নমশুদ্ররা মুসলমান হইতে চান নাই হিন্দুই থাইকা যাইতে চাইছেন তাদের বাঙালীত্ব বুঝিবা হিন্দুর বাঙালীত্ব নয়!

মুসলমানরা এই দেশে হিন্দুর বিরুদ্ধে কিছু আছে কিনা, হিন্দি-হিন্দুর এবাদত করে কিনা সেইটা ভারতের মার্কেট বিস্তৃতির মহাপ্রশ্ন। নবমহাভারতের সাংস্কৃতিক প্রশ্ন বরং তার বিরোধী। তারা বরং আমার মতই মুসলমান যাতে হিন্দুর ভেক না ধরে তাই চান। তো সাংস্কৃতিক ভাবে মুসলমানরা যাতে হিন্দু বা নমশুদ্র হিন্দু দ্বারা প্রভাবিত না হন এই পরামর্শে গোল্লা খাওয়ার কিছু নাই। বরং মুসলমানের বাঙালী মুসলমান হওয়ার প্রথম ধাপ সেইটাই। মুসলমানরা এখনো বাঙালী মুসলমান হইতে ধরেন নাই। তারা বাঙালী হিন্দু-মুসলমান হইতে চাইতেছেন। পরে নমশুদ্ররা ক্ষমতায় আসলে নমশুদ্রীয় বাঙালী হিন্দু-মুসলমান হইবেন তারা! হা হা। ধন্যবাদ সুশান্তদা। বিভাজিত বাঙালী আর অবিভাজ্য মুসলমানে আলাপের সুযোগ কইরা দিলেন।

২৪/৮/১৩

সুশান্ত করের মন্তব্যের লিংক: নিজের মধ্যে নিজে ফিরে আসার লড়াই / আলমগীর নিষাদ

Leave a Reply