এরও আগে যেই প্রশ্ন জারী থাকে তা হলো মুক্তিযোদ্ধারা কি ঘৃণা সহকারে যুদ্ধ করছেন? যুদ্ধ করতে গেলে কি ঘৃণা অবশ্যম্ভাবী? জাতিঘৃণা বা এথনিক ক্লিনিজং-এ যারা খুশি বিশ্বাস রাখতে পারেন; আমি তাদের সঙ্গে নাই। যারা জাতিঘৃণা বা গোষ্ঠীঘৃণা করেন আমি তাদেরও ঘৃণা করি না।
আমার দেশ যদি কেউ আক্রমণ করে তবে কি মাতৃভূমি রক্ষার জন্য ঘৃণা অত্যাবশ্যকীয় জিনিস? যদি তাই হয় তবে সর্বশেষ শত্রুসেনাকে হত্যা করার আগ পর্যন্ত দেশপ্রেমিকরা কীভাবে থামবেন?
যারা রাজাকারের সন্তানের (এইভাবে আমি বলতে চাই না) পছন্দের লিংকে আমার নাম দেইখা আমারে রাজাকারের তালিকায় উঠাইতে চান, তাদের প্রতি বক্তব্য: কেউ যদি আমার লেখালেখি পছন্দ করেন আমার জন্য সেইটা আনন্দদায়ক। তিনি যদি খুনী বা ধর্ষণকারীও হন আমার তাতে আনন্দ কমবে না। আমি গোষ্ঠীর জন্য লিখি না। আমার উপ্রে কোনো ফরজ জারী নাই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া লেইখা ফাটাইয়া ফেলাইয়া আমার প্রমাণ করতে হবে না যে আমি রাজাকার নই।
আমি দেশপ্রেমে বা সীমান্ত প্রেমে বিশ্বাস রাখি না, কাজে কাজেই বিদেশ প্রেমেও না। আমার পাকিস্তান বা ভারতপ্রীতি নাই। বাংলাদেশপ্রীতিও না। ফলে আমারে রাজাকার বলা যাবে না। দেশের আইন যদি রাজাকারদের সন্তানদের ঘৃণা করার বিধান তৈরি করে আমি সেইটারও বিরোধিতা করব।
যদি কোনোদিন অন্য কোনো দেশ আমার নিজের দেশ আক্রমণ করে তখনো যেন সেই দেশের মানুষকে ঘৃণা করার মত অবস্থা আমার তৈরি না হয়। ঘৃণা ছাড়াই যুদ্ধ করা সম্ভব। তাতে যুদ্ধের পাপ হত্যাকারীকে স্পর্শ করে না। যদি আবার পাকিস্তানপন্থী বা নব্য ভারতপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় তার জন্য দেশপ্রেম ঘৃণা বা রাজাকারদের সংশ্রব এড়ানো কোনো কাজে আসবে না। কৌশল এবং তৎপরতাই কাজে আসবে। যারা গীতা পড়তে চান পইড়া নিয়েন। গীতা এই ব্যাপারে আমার চেয়ে ভালো বলছেন।
যারা জামাতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান তারা কেবল ঘৃণা দিয়াই তা সারতে চান। তাতে জামাত শক্তিশালী হয় মাত্র। জামাতের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো এজেন্ডা নাই। গণতন্ত্র বিরোধী একটা দলরে সবাই ভোটে অংশগ্রহণ করতে দিতেছে। মে বি তারা সকলেই রাজাকার হইয়া গেছে!
(লেখাটি সামহোয়ার ইন ব্লগে ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। লিংক: রাজাকারদের ছেলেমেয়েদের কি আমরা ঘৃণা করব না?)